এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৭০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা নিয়ে গেছে । ব্যাংকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এর মধ্যে সরাসরি নিজের নামে ৫৩ হাজার ২৭৭ কোটি এবং বেনামে নিয়েছে ১৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব টাকা বের করা হয়। এখন বিপুল অঙ্কের এ টাকা খেলাপি হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি এবং সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। বাকিটাও ধীরে ধীরে খেলাপি হওয়ার পথে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকের বিপৎসংকুল এরকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন পরিচালনা পর্ষদ কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ যুগান্তরের কাছে বিস্তারিত অ্যাকশন প্ল্যান তুলে ধরেন। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ব্যাংকটি এখন সংকট কাটিয়ে বিভিন্ন সূচকে ইতিবাচক অবস্থানে ফিরছে।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, নতুন পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণ করে তিন ধাপে ২৫টি মাইলস্টোন ঘোষণা করে। প্রথম ধাপে সমস্যা থেকে উত্তরণের বছর (২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত), দ্বিতীয় ধাপে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর (২০২৫ ও ২০২৬ সাল) এবং তৃতীয় ধাপে এগিয়ে যাওয়ার বছর (২০২৭-২০২৯ সাল)। দায়িত্ব গ্রহণ করে এস আলমসংক্রান্ত বিনিয়োগ আদায়ে গ্রহণ করা হয়েছে বিশেষ কার্যকর পদক্ষেপ। প্রথম পর্ষদ সভায় এস আলমের বিনিয়োগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ঊর্ধ্বতন ৭ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া এস আলমের বিরুদ্ধে মোটা দাগে ২০টি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে।
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা পরবর্তী ব্যাংক সংস্কারের অংশ হিসাবে ১৯ আগস্ট এস আলমের নিয়োগ করা পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২২ আগস্ট গঠন করা হয় ৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদ। চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্ত হন সাবেক ব্যাংকার ও তিনটি ব্যাংকে এমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এবং সর্বশেষ এনসিসি ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর তিনি ব্যাংকটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সোনালীকে লোকসানি ব্যাংক থেকে লাভজনক ব্যাংকে পরিণত করেন।