মাহমুদুর রহমান নাঈম, ঢাকার প্রতিনিধিঃ
ঢাকার খিলগাঁওয়ে তালতলা মার্কেটের কাছে একটি স মিলে লাগা আগুন ছড়িয়ে পুড়েছে আরও একটি স মিল ও অন্তত ২০টি দোকান। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, রাসায়নিক পদার্থ ভরা ড্রাম ‘বিস্ফোরণে’ এই আগুন দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিটের প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় শুক্রবার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিয়েছেন বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “খিলগাঁওয়ের আগুনে আনুমানিক ২০টি দোকান ও দুইটি স মিল পুড়েছে। আগুনে হয়তো কেমিক্যাল ড্রাম বিস্ফোরিত হয়েছে যার ফলে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
“আমাদের নয়টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ঘটনাস্থলে আরও চারটি ইউনিট ছিল, সেগুলো কাজ করতে পারেনি।”
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, “আগুনে কেউ নিখোঁজ রয়েছে, এমন কোন সংবাদ আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত আসেনি। তবে একজন আহত হয়েছে, তাকে স্থানীয় জনগণ হাসপাতালে নিয়েছেন।”
আগুনের উৎস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে এ বিষয়ে বলা যাবে না তদন্ত ছাড়া। অনেকগুলো সোর্স থেকে আগুনের সৃষ্টি হতে পারে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তদন্ত সাপেক্ষে বিবেচনা করে বলতে হবে।”
তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এখানের দোকানগুলোতে তিন ধরনের কাজ হত। এখানে গাড়ি মেরামত, পেইন্টিং ও ইঞ্জিনের কাজ হতো। এখানে ‘অক্সি অ্যাসিটিলিন শিখা’ ছিল, যেটা দিয়ে মেরামতের কাজ হত। ‘থিনার পেইন্ট’ ছিল যেটা দিয়ে পেইন্টিংয়ের কাজ হত। এখানে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ছিল, বিভিন্ন সিলিন্ডার ছিল যা খুবই দাহ্য পদার্থ।
“আমরা আসার আধাঘণ্টা পর একটা বিস্ফোরণ হয়ে আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতোটাই ভয়াবহ ছিল, আমরা বুঝতে পারছিলাম না আগুনের সোর্সটা কোথায়। আশে-পাশে বহুতল ভবন ছিল, সেখানেও আগুন ছড়িয়ে যেতে পারতো।”
তিনি বলেন, “এই এলাকাটারই কোনো কমপ্লায়েন্স ছিল না। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও আমাদের পুরো এলাকাটা ভালো করে চেক করতে হবে। ডাম্পিংয়ে আরও সময় লাগবে।”
এর আগে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ বলেছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে আগুন লাগার খবর পান তারা।
তিনি বলেন, “প্রথমে আমাদের দুটি ইউনিট ও পরে আরও সাতটি ইউনিট যোগ দেয়।”
পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিটের চেষ্টায় ৯টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
অগ্নিকাণ্ডের পর তালতলা মার্কেটের সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
খিলগাঁও থানার ওসি মো. দাউদ হোসেন বলেন, “ওই স মিল খিলগাঁও থানার কাছেই। পাশের একটি গাড়ির গ্যারেজেও আগুন ছড়িয়ে যায়।
“ক্রাউডের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল। এজন্য আমরা তালতলা মার্কেটের দিকের সড়কটির একটি অংশ বন্ধ করে দিই। ”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের পাশে ও খিলগাঁও মডেল কলেজের বিপরীত দিকের এই আগুনে স মিলসহ, গাড়ির ওয়ার্কশপ ও গ্যারেজ, টায়ার-টিউব ও যন্ত্রাংশের কয়েকটি দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
গাড়ির গ্যারেজে আগুন ছড়ানোর পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে বলে জানান ওসি।
আগুন লাগার পরে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা দিতে যোগ দেয় পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খিলগাঁও থানার ভাইয়েরা