মোঃ শরীফ, সিলেট সরকারি কলেজঃ
দেশে ছাত্র সংগঠন গুলোর কার্যক্রম সর্ব সাধারন দ্বারা পরিলক্ষিত। ছাত্র সংগঠন দ্বারা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায় হওয়ার কথা থাকলেও গত ১৬ বছর ক্যাডার হিসাবে দলীয় স্বার্থ আদায়,শিক্ষার্থীদের জিম্মি, চাদাবাজি হলদখল ও খুন প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। সরকার পরিবর্তন হয় এর সাথে পরিবর্তিত হয় ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না।স্বীকার হতে হয় হামলার, থাকতে হয় গোলামের মতো।
একটি রিপোর্ট অনুযায়ী গত ১০ বছরে ছাত্রলীগের হাতে ক্যাম্পাসেই লাশ পরেছে ২৪ টি এর মধ্যে ১৭ টি অভ্যন্তরীন কোন্দলের ফলে। তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাহিরে সংগঠনটির আশ্রয়ে লাশ ফেলা হয়েছে সহস্রাধিক যা কারো অজানা নয়। ২৪ এর গনঅভ্যুত্থানে লেজুড় ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির কার্যক্রম দেখেছে পুরো দেশ। অন্যদিকে ১৬ বছর পূর্বের ছাত্র রাজনীতির চিত্র ভিন্ন নয় এবং তা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত প্রায় যা কুয়েট,বাকৃবি’তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও জবিতে হল দখল ইত্যাদি দ্বারা দৃশ্যমান।
১৯৭৭ সালের রাজনৈতিক দলবিধি জারির মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিকে দলীয় লেজুড়বৃত্তির আওতায় আনা হয়। এর মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির যে বিপথগামী ধারার সূচনা হয়েছে, সেই ছাত্র রাজনীতি আজ কাউকে ক্ষমতায় রাখা, আবার কাউকে গদিচ্যুত করার এজেন্ট হিসেবেকাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও আদুভাই মার্কা ছাত্রনেতা, সন্ত্রাসী, ব্যবসায়ী, মাস্তানরা আজ ছাত্র রাজনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দলের অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের কারণে ছাত্র রাজনীতি আজ রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা দখলের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
হল দখল, ক্যাম্পাস দখল ও ত্রাস সৃষ্টি করা ছাড়াও অপহরণ বাণিজ্যেও আজ বৃহৎ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত। বর্তমানে ছাত্র রাজনীতিতে অস্ত্র ও সন্ত্রাস যেভাবে স্থান করে নিয়েছে পাকিস্তান আমলেও এমনটি ছিল না। অন্যদিকে ১৯৭৭ পুর্ববর্তী ছাত্ররাজনীতির চিত্র ছিলো বিপরীত ছাত্র সংগঠনগুলো পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে ছাত্র সমাজের শিক্ষা ও শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি বাস্তবায়নে কাজ করেছে। সংগঠনের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্রের চর্চা, নিয়মিত সম্মেলন এবং নেতৃত্ব নির্বাচনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বিদ্যমান ছিল। এর বাইরে তারা নিজস্ব অবস্থান থেকে দেশ, জাতি ও মানুষের স্বার্থে নিজস্ব ব্যানার থেকে ভূমিকা রেখেছে। ভাষা সংগ্রামে অংশগ্রহণ, ’৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে হক-ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং ১৯৬৮ সালের ছাত্র, শিক্ষক ও শ্রমিকের দাবিসহ পূর্বপাকিস্তানিদের স্বাধিকার ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ১১ দফা ঘোষণা এবং ঐতিহাসিক ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলেছে।
অর্থাৎ, পাকিস্তান আমলে দুয়েকটি ছাত্র সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করলেও অঙ্গ সংগঠন হিসেবে কাজ করেনি। ২৪ এ এসে জনসাধারন ৭৭ পূর্ববর্তী ছাত্র রাজনৈতিক রূপ দেখে বুকে আশা বেধেছিল কিন্তু ক্ষমতা লোভী চাঁদাবাজ-রা ছাত্রলীগ জাতিয় রাজনীতিরবহাল রেখেছে। ক্যাম্পাসে নিয়মিত হচ্ছে সংঘাত, ক্ষমতা দখনের লড়াই, দেখা যাচ্ছে রামদা চাপাটির ঝকঝকানি এরূপ অবস্থায় একমাত্র সমাধান হতে পারে নির্দলীয় ছাত্র রাজনীতির প্রতিষ্ঠা।
স্বাধীনতার পুর্ব থেকে এখন পর্যন্ত একমাত্র নির্দলীয় ছাত্র সংগঠনের হাত ধরে অর্জিত হয়েছে নানান অধিকার হয়েছে নানান দাবি ও সফল হয়েছে ৬৯ বা ২৪ এর মতো গণঅঅভ্যুত্থান। তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে পারে ছাত্র রাজনীতির একমাত্র বাহক। তবে ক্যাম্পাসে লেজুড় ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করে ছাত্র সংসদ চলমান থাকলে এর পরিনতি কি হয় তা ভিপি নুর কে দেখলেই সবার বোঝার কথা।
অর্থাৎ দলীয় লেজুড় ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রত্যেকটি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হলে ক্যাম্পাস হবে নিরাপদ আদায় হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কমবে সরকারের স্বৈরাচার হওয়ার সাহস। সুতরাং সাম্প্রতিক সংঘাত বিলোপ, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সুস্থ গঠনমূলক গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির চর্চা বহাল রাখতে একমাত্র পথ হতে পারে ক্যাম্পাসে লেজুড় ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাবস্থা করা।