দূর্গেশ সরকার বাপ্পী, সিলেট প্রতিনিধিঃ
শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড, আজকের শিশু আগামীদিনের জাতির ভবিষ্যৎ।শিশুর সুন্দর শৈশব এবং অনাবিল ভবিষ্যতের জন্য দরকার সঠিকভাবে সঠিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সামাজিক শিশুই নির্মল পৃথিবী গড়তে পারে।
লেখাপড়া, খেলাধুলা এবং সুন্দরভাবে তার জীবনকে আনন্দময় করতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রয়োজন আর শৈশবেই শিশুর মেধা বিকাশের সময়।
তাই এ সময় সঠিকভাবে গড়ে ওঠা শিশুই আগামী দিনের পরিপূর্ণ ভাবে সু-শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। শিশুদের মৌলিক মানবিক বিষয়ের মধ্যে চিত্ত-বিনোদন একটি অংশ। তাই তার সঠিক বিকাশে সুস্থ ও শিশুবান্ধব পরিবেশ ও বিনোদনের ব্যবস্থা দরকার। সময়ের পরিবর্তণের মাধ্যমে শিশুদের লেখাপড়ার এসেছে পরিবর্তন।
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবনে রংতুলির আচঁড়ে
শিশুদের লেখাপড়ার পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলারয়।
শিশু শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত উন্নয়ন ও মেরামতের টাকায় রঙিন করে তোলা হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। স্কুলের প্রবেশ মুখ ও দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলা-ইংরেজি বর্ণ । শ্রেণী কক্ষ ও ভবনের চারপাশে জাতীয় ফলমুল, দেশ-প্রকৃতি, ছোটদের কার্টুন গুনীজনদের নানা ছবি শুভাপাচ্ছে । এমনিভাবেই রঙ-তুলির আঁচড়ে স্কুলগুলোকে শিশুবান্ধব করার সব রকম চেষ্টা চলছে।
উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এমন উদ্যোগ নিয়েছে। উপজেলার ১৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর মধ্যে ৫৮টি স্কুল রঙিন সাজে সেজেছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ছোট বেলা থেকেই শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে, জানবে দেশ-প্রকৃতি সমন্ধে এবং আরও বেশি করে স্কুলগামী হবে তারা।
সরেজমিন উপজেলার বিভন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোকে রঙিন করে সাজানো হয়েছে। রঙ তুলির ছোঁয়ায় বিদ্যালয়গুলো এখন যে কারো দৃষ্টি কাড়ে। অনেক স্কুলের আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে শহীদ মিনার। অনেক বিদ্যালয়ের দেয়াল যেন রংধনুর সাতরঙে রাঙানো। মাঝে মাঝে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আঁকা ছবি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে প্রবেশের আগে এসব ছবির মণীষীদের সাথে পরিচিত হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে দেয়ালে এঁকেছেন ছোটদের কার্টুন, ফুল-ফল ও পশু-পাখির ছবি। এছাড়া প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে আঁকা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও গুণীজনের প্রতিকৃতি। লেখা আছে নানা ধরণের নীতিবাক্য। কোথাও পাশেই দাঁড়িয়ে গভীর মনযোগ সহকারে ছবি আঁকা দেখছে শিশু শিক্ষার্থীরা। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১৩৬টি স্কুলে এমন কাজ করা হবে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, শিশুদের শৈশবকে আক্ষরিক অর্থেই সাতরঙা করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানো হবে। সমাজের সব স্তরের শিক্ষার্থী টানতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ, ভবন সংস্কার, প্রাচীর তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যালয়ের ভেতর-বাহিরে চাকচিক্য করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
উপজেলার লেংগুড়া হাওর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল হুদা জানান, সুন্দর মন, সুস্থ পরিবেশ খুব বেশি প্রয়োজন। স্কুলের পরিবেশ সুন্দর হওয়ায় পড়াশোনায় মনযোগী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে শিশুরা বেশি করে স্কুলমুখী হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আনন্দের সাথে পড়াশোনা করছে তারা। এমন উদ্যোগে শিক্ষকরাও উদ্দীপ্ত।
নওয়াগাঁও সরকারী বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলছিল, ‘এখন স্কুলে এসে আর বিরক্ত লাগে না। সাজানো গোছোনো বিদ্যালয়, এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের। একই সাথে এ স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরে আমরা খুব খুশি। এখন স্যাররা যতক্ষণ ছুটি না দেয় ততক্ষন আমরা স্কুলে থাকি। স্কুলকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলায় স্কুলের প্রতি শিশুদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন কয়েক জন অভিভাবক।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্কুলমুখী করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্কুলে এমন পরিবেশ পেলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে আনন্দ পাবে। পড়াশোনায় মনযোগী হবে এবং ঝড়ে পড়া রোধ হবে।তিনি আরো জানান,বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করায় এখন সমাজের সচেতনমহলরাও এগিয়ে আসছে। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির ব্যক্তিগনও নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে সহযোগিতা করছে।