মোঃ আশরাফুল ইসলাম, বগুড়া প্রতিনিধিঃ
“Bangladesh Blind Mission” ১৯৯২ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, জন্ম লগ্ন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে-যেমন-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে,শিক্ষক সমাজের মধ্যে,পেশাজীবি ডাক্তারদের মধ্যে মানব ও সমাজের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে এমন বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। তার অংশ হিসেবে বগুড়ায় দুই দিন ব্যাপি “ধুমপানের ক্ষতি” রোধে করনীয় বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক সর্তকতা নিয়ে কর্মশালা পরিচালনা করা হয়। প্রথম দিনে বগুড়া শহরের বনানী হাইওয়ে রোড় সংলগ্ন হোটেল সিয়েসটায় NGO কর্মকর্তা ও সংবাদ কর্মীদের মধ্যে “ধুমপানের ক্ষতি” রোধে জনসচেতনতা মূলক আলোচনা করা হয়। সকাল ১০ঘটিকায় শুরু হয়ে বিকাল ৪ঘটিকা পর্যন্ত প্রথম দিনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার প্রথম পর্যায়ে ধুমপানের ক্ষতির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেন- Mohammad Shamsal Islam, Epidemiologist, Islamia Eye Institute and Hospital, Dhaka.
দ্বিতীয় পর্যায়ে ধুমপানের সামাজিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে আলোচনা করেন-Shuvashis Chandra Mahanta-National Consulat. তিনি শুরুতেই বলেন-(নভেম্বর ২০২৩ অনুযায়ী সর্বশেষ WHO) বিশ্বে ১.২৫ বিলিয়ন তামাক ব্যবহারকারী রয়েছে। তামাক মহামারি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে একটি,প্রতিবছর তামাক সেবনের কারনে সারা বিশ্বের ৮ মিলিয়ন মানুষ (৮০ লক্ষ)মারা যায়। তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় ৮০% নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে,যেখানে তামাক জনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুর বোঝা সবচেয়ে বেশি। তামাকের ব্যবহার খাদ্য ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা থেকে তামাকের জন্য পরিবারের খরচ সরিয়ে দিয়ে দারিদ্রে অবদান রাখে এটি। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। WHO এর গবেষণা মতে,তামাক ব্যবহার,ধুমপান ও পরোক্ষ ধুমপানের কারনে বাংলাদেশে বছরে হৃদরোগ,
স্ট্রোক,ক্যান্সার,ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ, ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন প্রানঘাতী রোগ দেখা দেয়। তামাক ও ধুমপানের কারনে পরিবেশের যে সবাই ক্ষতি হয়-তামাক পাতা শুকানো প্রক্রিয়াজাত করন থেকে বিড়ি সিগারেট ও জর্দা -গুল উৎপাদন এবং সেবন-সকল স্তরে সম্পৃক্ত সকলের যেমনি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তেমনি এটা পরিবেশের বিপর্যয় ও দূষণেরও কারন। একজন সাধারণ মানুষের সিগারেটের বা ধুমপানের ব্যয় গড়ে প্রতিদিন যদি ৩০ টাকা হয়,তাহলে মাসে ৯০০ টাকা, বছরে ১০,৮০০টাকা,সে যদি ১৫ বছর থেকে খাওয়া শুরু করে ৬০ বছর পর্যন্ত ধুমপান করে,তাহলে তার ব্যয় হবে ৪লক্ষ ৮৬হাজার টাকা। ধুমপান বা তামাকজাত পন্যের জন্য যে অসুস্থতা দেখা দিবে তার জন্য তার স্বাস্থ্য ব্যয় হবে প্রায় ৫লক্ষ টাকা। তার মোট ব্যয় হবে ৯লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা। কর্মশালায় বগুড়া জেলার ৩০টি NGO প্রতিনিধি ও ১জন সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন (সংবাদকর্মী-মোঃ আশরাফুল ইসলাম,শিবগঞ্জ প্রতিনিধি-দৈনিক আমার বাংলাদেশ )।
দ্বিতীয় দিনে-বাংলাদেশ ব্লাইন্ড মিশন ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ তারিখে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক)হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে সম্মানিত ডাক্তারদের নিয়ে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রভাব এবং এর প্রতিকারের উপায় নিয়ে ট্রেনিং এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে শজিমেকের প্রায় ২৫ জন ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শজিমেকের উপ-পরিচালক জনাব ডা: আবদুল ওয়াদুদ এবং সহকারী পরিচালক ডা: আল মামুন।
উপ-পরিচালক জনাব ডা: আবদুল ওয়াদুদ অংশগ্রহনকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রেনিং এর উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে মিলে তামাকের ক্ষতিকর দিক গুলোর ব্যাবহার কমাতে হবে এবং নতুন প্রজন্মকে একটি সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে হবে।
এরপর বিশিষ্ট গবেষক ও রোগতত্ববীদ ধুমপানের ক্ষতির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেন ও তামাকের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন- Mohammad Shamsal Islam, Epidemiologist, Islamia Eye Institute and Hospital, Dhaka. আলোচনায় তিনি তামাকের কারনে শারীরিক,মানসিক, অর্থনৈতিক যে সব ক্ষতি হয় তা বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন জাতীয় সনাম ধন্য কনসালটেন্ট শুভাশিস চন্দ্র মহন্ত। তিনিও তামাকের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর তিনি কি কি উপায়ে তামাক থেকে বিরত থাকা যায় তা নিয়ে আলোকপাত করেন। তামাকের ব্যাবহার রোধে চিকিৎসা পদ্ধতি ও মেডিসিন সম্পর্কে ধারনা দেন। সবশেষে তিনি তামাকের ব্যাবহার রোধে ডাক্তারদের কী কী করণীয় তা নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা তামাকের ব্যাবহার রোধে নানান কার্যকারী মতামত ব্যাক্ত করেন। দুই দিনই
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিবিএম এর এডমিন ও ফাইনান্স ম্যানেজার জনাব খন্দকার আবেদুল ইসলাম । এছাড়াও দুই দিনই সহযোগিতায় ছিলেন বিবিএম এর তারেক মাহমুদ ও নাসিরুজ্জামান হিরোক ।
জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং বিশেষত ধুমপান মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন পেশাজীবি-ডাক্তার,শিক্ষক,সংবাদ কর্মী ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিভিন্ন NGOকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা-জেলা,বিভাগীয় পর্যায়ে এবং রাজধানীতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।