মোঃ নাঈম মল্লিক, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
কলেজের নিজস্ব তহবিলের অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কাজ না করেই সেই তহবিলের অর্থ থেকে শিক্ষকরা বছরে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকার বাড়ি ভাড়া গ্রহন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজের বিরুদ্ধে।
কলেজটির বিভিন্ন শ্রেনীকক্ষের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পরেছে,শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চের দশাও নাজেহাল ভেঙে উচু নিচু হয়ে গেছে।কোথাও কোথাও ফাটল ধরেছে দেয়ালে,অসম্পূর্ণ পরে আছে কয়েকটি দেয়ালের সংস্কার কাজ,ভেঙে ঝুলে আছে জানালা অথচ সেগুলোর কিছুই সংস্কারে মন নেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের।বরং তহবিলে অর্থ জমা হলেই সকলে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন বাড়ি ভাড়া বাবদও আর্থিক অতিরিক্ত ভাতা গ্রহনে।যাতে তহবিল থেকে প্রতি মাসে প্রায় দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা,বছরে যার পরিমাণ প্রায় ছাব্বিশ লক্ষ টাকার বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে শুধু শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার নামে।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের নানামুখী এসব সমস্যার কথা জানালেও কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়।শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন নলছিটির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।এতে তারা উল্লেখ করেছেন,কলেজটিতে প্রায় ১৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন বিভিন্ন শাখায়।কলেজটির অনেক কক্ষেই বৈদ্যুতিক পাখার সংকটে গরমে তাদের কস্ট হয়,কলেজের কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ কলেজের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটায়।এছাড়াও কলেজটির শেনীকক্ষ বৃদ্ধি,পুরনো দেয়াল মেরামত সহ অনেক সংস্কার প্রয়োজন হলেও তা না করেই কলেজ তহবিলের অর্থ থেকে শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া বাবদ অর্থ গ্রহন করেন যেই অর্থ দিয়ে কলেজের উন্নয়ন সম্ভব ছিলো।তারা বিধি বহি:ভুত এই বাড়ি ভাড়া গ্রহন প্রথা বিলুপ্ত করে সেই অর্থে কলেজটির উন্নয়ন এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদানেরও দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন শিক্ষানুরাগী বলেন,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় এতিম হয়।এগুলোর খোজখবর নেয়ার মতো লোকজন এখন আর সমাজে খুব একটা পাওয়া যায় না।আগে মানুষ এসব যায়গায় দান করতো,এখন উল্টো লুটপাট করে।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যারাই এগুলোর দায়িত্ব নেন তারা বানিজ্যিক চিন্তায়ই নেন।বিনিয়োগ করে সভাপতি হন,সভাপতি হয়ে নিয়োগ বানিজ্য সহ অন্যান্য ফয়দা নিয়ে হারিয়ে যান।লুটপাটের কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দিনে দিনে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে যাচ্ছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে আরেকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন,এটা অন্বক দিনের অভিযোগ যে কলেজের শিক্ষকরা কলেজ তহবিলের অর্থ থেকেও তাদের নিজেদের বাড়ি ভাড়া বাবদ বছরে প্রায় ছাব্বিশ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন।অথচ এই তহবিল দিয়ে কলেজের নানবিধ উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব ছিলো।এরফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।আমরা এর প্রতিকার চাই।
এ বিষয়ক একটি সরকারি নিতীমালা পর্যবেক্ষণেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের অর্থ দিয়ে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া গ্রহনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা নিতীমালায় খুজে পাওয়া যায় না,সাধারণত একটি রেজ্যুলিউশন করে সেই বলেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এধরণের আর্থিক অনিয়ম করে থাকে।প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তারা আন্তরিকতা ও দ্বায়বদ্ধতা অনুভব না করলে এভাবেই ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে যায় সাজানো প্রতিষ্ঠানও।
এ বিষয়ে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইমরানা পারভীনের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো:নজরুল ইসলাম বলেন,একটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে।এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হচ্ছে,তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।