মোঃ আশরাফুল ইসলাম, বগুড়া প্রতিনিধিঃ
বগুড়া জেলার অন্তরগত শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলি ইউনিয়নের ৫নং ওর্য়াডের মালি পাড়া গ্রামের শ্রী লব মালির মালয়েশিয়া প্রবাসী ছেলে শ্রী সম্রাট মালির ফেসবুক “Somrat Kumar(ঝরা পাতা)” আইডি থেকে বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বিরুদ্ধে “তোর নবীর মুখে মুতি খানকির বাচ্চা”লেখাটি ” মোঃ ইমরান ইমরান সেখ” এর ফেসবুক আইডিতে কমেন্টের জন্য গত বুধবার রাত থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে দেউলি ইউনিয়নে নবী প্রেমিকদের ব্যানারে গতকাল মাইকিং করে শুক্রবার বাদ জুমা গাংনাগর চৌরাস্তা মোরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ কেন্দ্র করে উপজেলা ব্যাপী সারাদিন থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। গাংনাগর চৌরাস্তা মোরে প্রতিবাদের বিভিন্ন ব্যানার ঝুলানো দেখা গেছে। এর আগে গতরাত ৩ ঘটিকার সময় নবী প্রেমিক এলাকাবাসী সম্রাট এর বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলার জন্য মিছিল নিয়ে যায় কিন্তু সম্রাট এর পৈত্রিক ভিটায় কোন বসত বাড়ি নেই। আজকে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সম্রাটের বাবা-মা প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর পূর্বে অভাবের কারণে ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
সম্রাট সবার বড়, তার আরও ২জন ভাই রয়েছে, প্রতিবেশীরা জানায় ২ বছর পূর্বে তার বাবা লব মালি বাড়িতে এসে প্রতিবেশির বাড়িতে ১দিন থেকে ছিল। বর্তমানে লব মালির পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ১০ শতাংশ জমি রয়েছে -যেখানে আম, কাঁঠালের গাছ লাগানো রয়েছে। আজ সকাল বেলা থেকেই শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। জুমার নামাজের পূর্ব থেকেই পুলিশ প্রশাসন এলাকার জুড়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।
জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর থেকে গাংনাগর চৌরাস্তা মোরে বিভিন্ন এলাকা থেকে নবী প্রেমিক মুসল্লী ও সাধারণ জনগণ খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে চৌরাস্তা মোড়ে একত্রিত হয়ে সম্রাটের শাস্তি দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে, আগত বিক্ষোভ কারীদের কে পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা না ঘটানোর জন্য বারবার অনুরোধ করেন। সময়ের ব্যাবধানে ২ থেকে ৩ হাজার বিক্ষোভ কারী জরো হয়ে মিছিল নিয়ে মালি পাড়ার সম্রাটের বাড়ির দিকে যেতে চায়, এর মধ্যে ঘটনা স্থলে শিবগঞ্জ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ কারীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে বলেন, একজনের অপরাধের জন্য আপনারা সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবো না,আমরা সম্রাটের প্রতি আইনগত ব্যবস্থা নিবো,অনুগ্রহ করে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ধর্য্য ধরেন ও প্রশাসনের প্রতি শতভাগ আস্থা রাখেন, বাংলাদেশের প্রশাসন সম্রাট কে নিয়ম অনুসারে সকল ধরনের সাজার ব্যবস্থা করবে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) এসব কথা শোনার পর হাজার হাজার বিক্ষোভ কারীরা সিদ্ধান্ত নেয়, গাংনাগর চৌরাস্তা মোড় থেকে মিছিল নিয়ে ৩ কিলোমিটার দূরে হাইওয়ে রোড সংলগ্ন রহবল বন্দরে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করবে কিন্তু কিছু বিক্ষোভ কারীরা ছত্র ভঙ্গ হয়ে গিয়ে পাশেই অবস্থিত মালি পাড়ার সম্রাটের পৈত্রিক বাড়ির জায়গা চতুর দিকে বাঁশ পুতে রশি দিয়ে ঘিরে ফেলে ও বিভিন্ন ধরনের গাছ কেটে ফেলে। অপর দিকে রহবল বন্দরের দিকে চলমান বিক্ষোভ কারীদের মিছিলে লোকজনের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রহবল বন্দরে বিক্ষোভ কারীদের মিছিল পৌছানোর পরে দেখা যায়- হাইওয়ে রাস্তার আশেপাশের এলাকা থেকে সাধারণ বিক্ষুব্ধ নবী প্রেমিক মুসল্লী ও এলাকাবাসী এসে হাইওয়ে রোডের মাঝে বসে পরেন ও সম্রাট মালির ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যে হাইওয়ে রাস্তার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় ও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার লোকের সমাগম হয় ও কিছু বিক্ষোভ কারীরা যানবাহন ভাঙ্গনের চেষ্টা করলে পুলিশ প্রশাসন ও অন্যান্য বিক্ষোভ কারীদের বাধার মুখে যানবাহনের কোন ক্ষতি হয়নি। বিক্ষোভ কারীরা সম্রাট মালির ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে, এদিকে হাইওয়ে রোডে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করার ১০ মিনিটের মধ্যেই বগুড়া জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভ কারীদের সাথে দ্রুত কথা বলেন ও তাদের দাবি দাওয়া শুনেন।
মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয় অতঃপর বিক্ষোভ কারীদের উদ্দেশ্য বলেন, আমি শুধু একজন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা নয়,আমি একজন মুসলিম, আমি মুসলিম হিসেবে চাই দেশের আইনে সম্রাট মালির বিচার সুনিশ্চিত করা এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি ৭ দিনের মধ্যে সম্রাট কে আইনের আওতায় আনার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশের সরকার ও পুলিশের সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিকট অনুরোধ করেছি। আপনাদের নিকট অনুরোধ, পবিত্র মাহে রামাদানের পবিত্রতা রক্ষা করি,আপনারা লক্ষ্য করেন হাইওয়ে রাস্তার দুই পাশে কি রকমের যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, আমরা একজন অপরাধীর জন্য হাজারোও পথ যাত্রীদের বিপদের কারন না হয়। পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাথে নবী প্রেমিক মুসল্লী ও সাধারণ বিক্ষোভ কারীরা একাত্মতা ঘোষণা করে দ্রুত হাইওয়ে রাস্তার অবস্থান ত্যাগ করে যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে সহযোগিতা করেন।