১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লার মুন হসপিটালে ১৫ বছর যাবৎ ডায়ালাইসিস করছেন ভুয়া চিকিৎসক

মোঃ সাদেকুল ইসলাম কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লা স্বাচিপ সভাপতি ডাঃ বাকি আনিছের মালিকানাধীন মুন হসপিটালের ডায়ালাইসিস বিভাগের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম। তিনি গত ১৫ বছর যাবত এ হাসপাতালের কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করছেন। ১৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর জানা গেল তিনি একজন ভুয়া টেকনিশিয়ান। নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ। এরই মাঝে তার অপচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন বেশ কয়েকজন রোগী। তিনি নিজে হাতিয়ে নিয়েছেন বহু টাকা।

এক সময়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় সাইফুল আষ্টম শ্রেণীর গন্ডি পেরোতে পারেনি। সেই ভূয়া টেকনোলজিষ্টই হাঁকডাক করে নগরীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল মুন হসপিটালে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা প্রদান করে আসছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকায় অবস্থিত মুন হসপিটাল। প্রতিষ্ঠানটির মালিক স্বাচিপের সভাপতি ডাঃ বাকি আনিছ। গত ১৬ বছর যিনি কুমিল্লার স্বাস্থ্য বিভাগকে আঙ্গুলের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তার নিজস্ব হাসপাতালে গত ১৫ বছর যাবত কিডনি রোগের চিকিৎসা সেবা এবং ডায়ালসিস করছেন ভূয়া টেকনোলজিষ্ট সাইফুল ইসলাম। তিনি অস্থায়ী ক্যাথেটার লাগিয়ে নেন ১৫ হাজার এবং স্থায়ী ক্যাথেটারে নেন ৩০ হাজার টাকা। এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন রোগীকে ডায়ালসিস করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কিডনি রোগীদেরকে ভাসকুলার সার্জন দ্বারা ক্যাথেটার করতে হয়। কিন্তু ১৫ বছর যাবত মুন হসপিটালে ডায়ালদিস বিভাগে সাইফুল এবং সঙ্গীয়রা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা রোগীদেরকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অভিজ্ঞতা ছাড়া ক্যাথেটার করার কারণে একবারের জায়গায় ৩-৪ বার তা করতে হচ্ছে। কারো কারো পায়ে এবং গলায় একাধিকবার ক্যাথাটার করে ইচ্ছামতো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সুত্র আরো জানায়, সাইফুল ইসলাম এক সময় ঢাকার গ্রীন রোডের রিলায়েন্স জেনারেল এন্ড রেনাল হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় হিসেবে চাকরি করতেন। সেখানে এক রোগীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে চাকরি হারান। রিলায়েন্স হসপিটালের টেকনিক্যাল ইনচার্জ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস শান্ত বলেন, সাইফুল ইসলাম আমার অধীনে ওয়ার্ড বয় হিসেবে চাকরি করতেন। কুমিল্লায় গিয়ে কিভাবে ডায়ালসিস বিভাগের ইনচার্জ হলো তা বোধগম্য নয়। সে লেখাপড়া জানে না। বর্তমানে নাকি সে কোটি কোটি টাকার মালিক। মুন হসপিটালের ডাঃ বাবলু কুমার পালের এসিস্ট্যান্ট রাকিব হাসান বলেন, আমাদের মুন হসপিটালের ডায়ালসিস বিভাগের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত এ হাসপাতালে কর্মরত আছেন।

তাকে আমরা কিডনি ডায়ালসিসে অভিজ্ঞ হিসেবে জানি। তিনি ক্যাথেটার থেকে শুরু করে কিডনির ডায়ালসিসসহ সব চিকিৎসাই করে থাকেন। জেলার বুড়িচং উপজেলার কংশনগর এলাকার আব্দুল জলিলের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বলেন, দুই বছর মুন হসপিটালে আমার স্বামীকে কিডনির ডায়ালসিস করাইছি। কিন্তু ভুল চিকিৎসা দিয়ে আমার স্বামীকে মৃত্যুর মুখে পতিত করেছে। তিনি বলেন, কিডনির পয়েন্ট ১৭ থাকা অবস্থায় আমার স্বামীর ডায়ালসিস শুরু করেছি। কিন্তু ৬ পয়েন্টের নিচে কখনো নামেনি। নিম্ম মানের সামগ্রী দিয়ে তারা চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। বিশেষ করে ডায়ালসিস বিভাগের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম এখানে স্কুল চিকিৎসা দিয়ে রোগীদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমরা জানতে পেরেছি সে ভুয় টেকনোলজিস্ট। তার কোন সার্টিফিকেট নাই। তার সাথে সিনিয়র সিস্টার ফাতেমা জড়িত রয়েছে।

জেলার চান্দিনা উপজেলার হারং এলাকার বাসিন্দা কিডনি রোগী মোঃ হাসান বলেন, আমি গত দুই বছর যাবত মুন হসপিটালের ডায়ালসিস বিভাগের ইনচার্জ সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। তাকে দিয়ে ডায়ালসিস করাচ্ছি। সে নিয়মিত রোগীদের ক্যাথেটার করাচ্ছে। জননী কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকা থেকে এসেসরিজ এনে ভুয়া চিকিৎসা দিচ্ছে। তিনি জানান, ওয়ার্ড বয় মারুফের মাধ্যমে ক্যাথেটারের মালামাল গুলো সংগ্রহ করে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে উচ্চ মূল্যে তা রোগীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এখন জানতে পারলাম সাইফুল ইসলাম একজন ভুয়া চিকিৎসক। মুন হসপিটাল কর্তৃপক্ষ অল্প পয়সায় এসব ভূয়া মুখ লোক দ্বারা চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন। লালমাই উপজেলার বেলঘর এলাকার আয়েশা আক্তারের ছেলে খোরশেদ আলম বলেন, মুন হসপিটালের ডায়লসিস বিভাগের ইনচার্জ সাইফুল ইসলামের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মায়ের অনেক ক্ষতি হয়েছে। উল্টাপাল্টা ক্যাথেটার লাদিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভুল ভাবে ক্যাথেটার পড়ানোর কারণে আমার মা চরম অসুস্থ

সাইফুল ইসলাম

হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে আমার মা মারা যায়। অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ১৫ বছর যাবত মুন হসপিটালের ডায়ালসিস বিভাগে কর্মরত আছি। প্রতিটি ক্যাথেটার লাগিয়ে আমরা ১৫ হাজার টাকা করে নেই। কোনো রোগী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকলে তা সঠিক নয়। আমি এর আগে ঢাকার ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলাম। মুন হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফসান আনিছ বলেন, সাইফুল একজন টেকনোলজিস্ট। ডায়ালসিস বিভাগে দেখাশোনা করছেন। আর ১৫ বছরে সে দেখতে দেখতে অনেক কিছু শিখে ফেলেছে। তবে আমরা অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়েই কিডনি রোগীদের সেবা প্রদান করে থাকি। আমার কাছে যদি কোন অভিযোগ আসে তা আমি গুরুত্ব দিয়ে দেখি। আমার হসপিটালে কিভাবে রোগীদের কে ভালো ষেবা প্রদান করা যায় সব সময় আমি সেই চেষ্টায় থাকি। তাছাড়া সাইফুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ রয়েছে।

ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ সারোয়ার রেজা বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে জুয়া চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট হসপিটালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজবাড়ীর পাংশায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এখানে চিকিৎসক ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য পদের কর্মচারী সংকট।

সিরাজগঞ্জে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জাহিদুল হক, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিরাজগঞ্জে বিক্ষোভ করেছেন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।গতকাল রোবববার সকাল ১১টায় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ

দালাল ধরতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল অভিযান, আটক অর্ধশত

মাহমুদুর রহমান নাঈম, ঢাকা প্রতিনিধিঃ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালাল ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। এ পর্যন্ত দালাল সন্দেহে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দবিরগঞ্জ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

মোঃ জাহিদুর হক, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার দবিরগঞ্জ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, একজন স্বীকৃত চক্ষু বিশেষজ্ঞ

Scroll to Top