মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চুক্তিবদ্ধ চাষীরা বীজআলু উৎপাদন করে চমক সৃষ্টি করেছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে শস্য ঋণ নিয়ে এবং বিএডিসি হতে সহজ শর্তে বীজ, সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক পাওয়ায় চাষীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। লাভের আসায় দিন গুনছে অনেকে।
অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন নীলফামারী জোনের আওতায় ডোমার, নীলফামারী সদর ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় বীজআলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় সন্তুষ্ট আলুচাষীরা।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বাস্তবায়নাধীন ‘মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ উৎপাদন মৌসুমে নীলফামারী জোনের ৩০টি ব্লকে মোট ৭৬ জন চুক্তিবদ্ধ চাষীর মাধ্যমে ৭৫৩ একর জমিতে বীজআলু উৎপাদন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাষকৃত ৪১৮ একর জমিতে ১২টি জাতের ভিত্তি বীজআলু এস্টারিক্স, মিউজিকা, গ্রানুলা, কুইনঅ্যানি, কারেজ, কুম্বিকা, এলোয়েট, ৭ ফোর ৭, সানতানা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ট, বারি আলু-৬২ এবং ৩৩৫ একর জমিতে ১১টি জাতের প্রত্যায়িত বীজআলু যথাক্রমে মিউজিকা, সানতানা, কারেজ এস্টারিক্স, গ্রানোলা, কুম্বিকা, সানসাইন, বারি আলু-৭২, ভ্যালেন্সিয়া, ডায়মন্ট ও কার্ডিনাল জাতের উৎপাদন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে কর্তৃপক্ষ। যা থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিকটন বীজআলু উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব বাজারজাত করার পর প্রায় ১৬ কোটি টাকা বীজআলুর মুল্য বাবদ পরিশোধ করা হবে। এরমধ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকা চুক্তিবদ্ধ চাষীদের আয় হবার সম্ভাবনা দেখছেন কর্তৃপক্ষ।
নীলফামারী সদর উপজেলার তরনীবাড়ী ব্লকের চুক্তিবদ্ধ চাষী কৃষ্ণ রায় বলেন, ডোমার বিএডিসি খামারের সার্বিক সহযোগিতায় এক বিঘা জমিতে বীজ আলু রোপণ করেছি। যদি ভালো রেট পাই তাহলে লাভবান হবো।বাজারে আলুর দাম কম। বিএডিসি হতে আলুর দাম ভালো পাই এজন্য প্রতি বছর কিছু লাগাই। এখান থেকে বীজ, সার, কীটনাশক পেয়েছি। আলুর ফলনও খুব ভালো হয়েছে।
একই এলাকার আলু চাষি রত্নদেব রায় বলেন, আমিও ৪ বিঘা জমিতে ৩টি জাতের আলু চাষ করেছি। গতবছর উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে আমরা বিএডিসির বীজ আলুতে বিঘায় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার লাভ হতো। তবে এবার বেশি ফলন হওয়ায় দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক চাষীরা।
পলাশবাড়ী ইউনিয়নের আলু চাষী কৃষক ভদ্রমোহন রায় এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিএডিসি হতে উন্নত জাতের বীজআলু রোপণ করে এবার স্বাবলম্বি হয়েছি এবং খামারের কর্মকর্তারা আলু রোপনের সঠিক নিয়ম ও সময় বলে দেয়ায় এবার আলুর বাম্পার ফলন পেয়েছি।
আলু চাষীরা আরো জানায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিএডিসির কর্মকর্তারা আলু চাষীদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করায় আলুর ক্ষেতে রোগ-বালাই কম দেখা দিয়েছে। এইসব রোগ বালাই আলু ক্ষেত থেকে দূর হয়ে গেছে।
আলু চাষীদের সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী জোনের উপপরিচালক মোঃ আবু তালেব মিঞা বলেন, ভবিষ্যতে নীলফামারী বীজআলু উৎপাদন জোন বাংলাদেশের মধ্যে একটি সম্ভাবনাময় জোন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমানে দণ্ডায়মান ফসলের সার্বিক অবস্থা ভালো পর্যায়ে রয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গুণগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উৎপাদিত বীজআলু দেশের সাধারণ চাষীদের আলু উৎপাদনে সরবরাহের ঘাটতি পুরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উৎপাদিত বীজআলু সংরক্ষণের জন্য জেলার গাছবাড়ি সংলগ্ন নীলফামারী বীজ বর্ধন খামারের অভ্যন্তরে ২ হাজার মেট্রিকটন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি বীজ আলু হিমাগারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।