মোহসীন মোহাম্মদ মাতৃক, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে অজ্ঞাত এক হিংস্র প্রাণীর কামড়ে অন্তত ৩ জন আহত হয়েছেন। গত রোববার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে একে একে ৩ জনের ওপর হামলা করে প্রাণীটি। কেউ বলছেন প্রাণীটি হায়েনা, কেউ বলছেন শেয়াল আবার কেউবা বলছেন বাঘ হতে পারে। এতে আতঙ্কে রয়েছে কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ। হামলার ভয়ে সন্ধ্যার আগেই শিশুদের নিয়ে ঘরে ঢুকছেন অভিভাবকেরা।
আহতরা হলেন, উপজেলার চালা ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের সাজেদা বেগম (৭৫), একই গ্রামের আবু বক্কর (৫৫) এবং গালা ইউনিয়নের বাঙ্গালা গ্রামের আতোয়ার আলী (৬৫)। এদের মধ্যে সাজেদা বেগমের অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ায় তিনি বর্তমানে ঢাকায় ছেলের বাসায় আছেন। আতোয়ার আলী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আবু বক্কর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মুখে ও ডান চোখের নিচে ৬-৭টি সেলাই দিতে হয়েছে। তিনজনেরই মুখে আক্রমণ করেছে প্রাণীটি।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) আহত ব্যক্তি, পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যার দিকে হাঁস ধরার সময় সাজেদা বেগমের ওপর আক্রমণ করে তার ঠোঁট ও মুখের কিছু অংশ ছিড়ে নিয়ে যায় একটি প্রাণী। পরিবারের লোকজন তাকে প্রথমে স্থানীয় ঝিটকা বাজারে একটি মেডিকেল সেন্টারে এবং পরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বললে তারা ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও তাকে ভর্তি করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি তার ছেলের বাসায় আছেন। অপরদিকে বাড়ির পাশে থেকেই আতোয়ার আলী ও আবু বক্করের ওপর হামলা করে প্রাণীটি।
আহত সাজেদা বেগমের বড় ছেলে বিল্লাল শিকদার বলেন, ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে আমার মাকে ভর্তি করাতে পারিনি। চিকিৎসকরা বলেছে আগে তাকে দুইটি র্যাবিস ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করবে বলেছে চিকিৎসকরা। মায়ের প্লাস্টিক সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে। বর্তমানে আমার মাকে আমার ভাইয়ের বাসায় রেখেছি। চিকিৎসকরা তাকে নাক দিয়ে পাইপের মাধ্যমে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পাইপের মাধ্যমে তাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবো।
আতোয়ারের পুত্রবধু ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, আমার শশুর ধানের প্রজেক্টের পানির পাম্প বন্ধ করে বাসায় আসছিলেন। পথে তিনি প্রস্রাব করতে বসলে তখনি তার উপর হামলা করে প্রাণীটি। তার হাতে টর্চলাইট থাকলেও তিনি প্রাণীটি কি তা বুঝতে পারেননি। তার মুখের ডান পাশের চোখের নিচের অংশ এবং কানের কিছু অংশ কামড়ে ছিড়ে নিয়ে গেছে। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে ঘোরার পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত আবু বক্কর বলেন, সন্ধ্যার পরে আমি বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে সামনে দিয়ে শেয়ালের মতো একটি প্রাণী যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই বাঘের মতো ঝাপিয়ে পড়ে আমার মুখে আক্রমণ করে। আমি ডান হাত দিয়ে তাকে ফেলে দিলে প্রাণীটি পড়ে যায়। পরে আবার হামলা করতে আসলে তার মুখে আমার হাতে থাকা বাঁশি ঢুকিয়ে দিয়েছি। পরে প্রাণীটি চলে যায়। আমার ধারণা, সেটি কালো রঙের শেয়াল হতে পারে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ফরেস্টার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বন্যপ্রাণী বিভাগে আহতদের ছবিসহ বিষয়টি জানানো হয়েছে। দেখি ওনারা কি উদ্যোগ নেয়। আর আমরা বনবিভাগ থেকে কি করা যায় সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিবো।