আজগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচিত রিশতি বিন ইউসুফকে অপহরণ মামলায় ভুলবশত গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে আদালতের শুনানিতে উঠে এসেছে। দীর্ঘ শুনানির পর আজ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ তাকে জামিন দিয়েছেন।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কর্নেলহাট সিডিএ আবাসিক এলাকা থেকে প্যাসিফিক জিন্সের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আবেদিন আল মামুনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা তাকে পতেঙ্গা সাগরপাড়, পাহাড়তলীর কর্নেলহাট জোন্স রোড ও আকবরশাহ থানার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ঘোরায়। এ সময় তার গাড়িচালক জুয়েলও জিম্মি ছিলেন।
পরে মুক্তিপণ আদায়ে ভিকটিমের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার লিলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ১৫ লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেক গ্রহণের পর অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। যৌথ অভিযান চালিয়ে পাহাড়তলী জোন পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ আবেদিন ও জুয়েলকে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে থেকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় উত্তর কাট্টলীর নাজমুল আবেদিন, সিটি গেট এলাকার নইমুল আমিন ইমন (২২), সিডিএ ১ নম্বর এলাকার আরাফাত হোসেন ফহিম (২২) এবং রিশতি বিন ইউসুফ (২৩)-কে গ্রেপ্তার করা হয়।
কিন্তু আদালতে শুনানির সময় প্রমাণিত হয় যে, রিশতি বিন ইউসুফ মূল অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তদন্ত কর্মকর্তা, ভিকটিমের স্ত্রী ও চালকের সাক্ষ্যে উঠে আসে যে, রিশতি আসলে অপহৃত আবেদিনের পরিবারের অনুরোধে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।
ভিকটিমের গাড়িচালক জুয়েল আদালতে জানান, অপহরণকারীরা যখন মালিককে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পরিচিতজন হিসেবে রিশতিকে ডেকেছিলেন। একইভাবে ভিকটিমের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার লিলিও আদালতে জানান, রিশতি তাদের আত্মীয় এবং প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি সাহায্যের জন্য তাকে ঘটনাস্থলে আসতে বলেছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জানান, সিসিটিভি ফুটেজে রিশতিকে অন্যদের সঙ্গে দেখা যাওয়ায় তাকে আসামি করা হয়েছিল। তবে পরবর্তী তদন্তে স্পষ্ট হয় যে, তিনি নিছক সাহায্য করতে গিয়েছিলেন এবং অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না।
আদালত তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য পর্যালোচনা করে রিশতিকে জামিন প্রদান করেন। অন্যদিকে, বাকি তিন আসামির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
এদিকে, রিশতি বিন ইউসুফের জামিন শুনানিতে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির সদস্য শামসুল আলমসহ উত্তর ফটিকছড়ির বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াত নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস তালুকদার বলেন, “ভাতিজার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আশা করি খুব শিগগিরই আসল ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে পারব।”
এ ঘটনায় পুলিশের তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে, এবং বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।