সিলেট প্রতিনিধিঃ
অন্তর্বতী সরকারের নির্বাচনী তপশীল ঘোষনা না হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খেলাফত মজলিসের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে দৌড়ঝাপ দেখা যাচ্ছে। সিলেট-৪ এ দলীয় অনেক নেতৃবৃন্দ নেতাকমীর্দের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। বিভিন্ন সামাজিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যোগদান করে নিজেকে প্রার্থী হিসাবে জানান দিচ্ছেন। চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন জায়গায়।
জানা যায়, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন নিয়ে সিলেট-৪ আসন গঠিত। দেশের অন্যতম স্থলবন্দর তামাবিল এই আসনে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সম্পদের আধার দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি ও শ্রীপুর এই আসনে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। তাই সব রাজনৈতিক দলের কাছেই আসনটির গুরুত্ব বেশি।
বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৭ বার, বিএনপি ৩ বার, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টি একবার করে বিজয়ী হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে রাজনীতির মাঠের হালচাল। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ভোটের মাঠে নেই। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিভিন্ন দল। ভোটাররা মনে করছেন আগামী নির্বাচনে নতুনদের হবে জয়জয়কার। নির্বাচন কমিশনের ৩৮নং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিস। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি বিগত নির্বাচন গুলোতে সিলেট-৪ আসনে কোন প্রার্থী না দিলেও তাদের অবস্থান সেখানে খুবই শক্ত।গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের জনসাধারণ অত্যন্ত ইসলাম প্রিয়। তাই সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিগত ফ্যাসিবাদের সময়েও ঘরে বসে থাকেনি দলটি। তাই প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও পাঙ্গা নিতে পারে তাদের অবস্থান।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে খেলাফত মজলিসের যেসব প্রার্থীদের নাম বারবার ঘুরে ফিরে আসছে তাদের মধ্যে অন্যতম খেলাফত মজলিসের নবমনোনীত উলামা বিষয়ক সম্পাদক শায়খ আলী হাসান উসামা, ২০১৩ সালের গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইলয়াস, সাবেক ছাত্র নেতা ইসলামী ছাত্র মজলিস সিলেট পূর্ব (সাংগঠনিক) জেলা শাখার সাবেক সেক্রেটারি ও গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রথম ও একমাত্র প্রিন্ট পত্রিকা “গোয়াইনঘাট সংবাদ” র সম্পাদক মাওলানা এম এ রহিম, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সদ্য সাবেক মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফিজ মাওলানা বিলাল আহমদ চৌধুরী (এলএলবি ও এমএসএস)। খেলাফত মজলিসে দলীয় গ্রুপিং তৈরি করা সাংবিধানিক অপরাধ। তাই গ্রুপিংয়ের কোন সুযোগ নেই সংগঠনটিতে। এই কারণে কাজের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার বিকল্প নেই। তাই দলকে গুছানোর কাজে লেগে পড়েছেন নেতৃবৃন্দ। মূলত খেলাফত মজলিসের উলামা বিষয়ক সম্পাদক শায়খ আলী হাসান উসামার পক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় নি। গত ৮ মার্চ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী তার একটি ফেসবুক পোস্টে “কী সেই ঝড়?
খেলাফত মজলিসের উলামা বিষয়ক সম্পাদক শায়খ আলী হাসান উসামা ভাইকে সিলেট ৪ আসনে ভাবলে কেমন হয়।” এই অংশ উল্লেখ করলে তারুণ্যের আইডল শায়খ আলী হাসান উসামাকে সিলেট ৪ আসনে দেখতে চাই। এমন পোস্টে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। শায়েখ আলী হাসান ওসামা প্রার্থী হিসাবে দাবি না করলেও অস্বীকার করারও কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মাওলানা শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইলয়াসকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার জন্য বলে আসছেন। এই ধারাবাহিকতা এবারও বহাল রয়েছে। গোয়াইনঘাট সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা এমএ রহিম দীর্ঘদিন থেকে সিলেট-৪ আসনের খেলাফত মজলিসের কান্ডারী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি অনেক দিন থেকে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন, মাঠে ময়দানে সক্রিয় রয়েছেন। দুর্নীতি লুটপাট মুক্ত সিলেট-৪ গড়তে, এলাকার সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে এবং বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। তিনি সংগঠনের সিদ্ধান্তের প্রতি চেয়ে আসেন।
এদিকে ৫ই আগস্টের পর থেকে সাধারণ মানুষের চোখ তরুণদের দিকে। তাই জুলাই বিপ্লবের অগ্রসেনানী, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সদ্য সাবেক মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফিজ মাওলানা বিলাল আহমদ চৌধুরী (এলএলবি ও এমএসএস)কে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। যদিও তিনি নিজে থেকে প্রার্থী হওয়ার কোন ঘোষণা দেননি। এবং না দলীয় কোন ইঙ্গিত রয়েছে। সবশেষে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে প্রস্তুত রয়েছেন নেতৃবৃন্দ।