লেখক: জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
রাতের আকাশ যখন নিঃসীম নীরবতায় ঢেকে যায়, বিশ্বজগত যখন ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়, তখনই এক শুভক্ষণে নেমে আসে আসমানী নূরের আলো। সে আলো কোনো সাধারণ আলো নয়; এটি মানবতার মুক্তির দিশারি, সত্য ও সুন্দরের চিরন্তন পথপ্রদর্শক—পবিত্র আল-কুরআনের আলো। আর এই মহিমান্বিত কুরআন নাজিল হয়েছে যে মাসে, সেই মাসের নাম রমজান।
রমজান শুধুই সিয়াম সাধনার মাস নয়, বরং এটি এমন এক মাস, যে মাসে আসমান ও জমিন আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল। মানবজাতির জন্য রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল আল্লাহর কালাম, মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে—
“রমজান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
এই মাসের এক অলৌকিক রাতে, যে রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, সেই লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়েছিল কুরআন। মহান আল্লাহ বলেন—
“নিশ্চয়ই আমি একে (কুরআন) কদরের রাতে নাজিল করেছি।” (সূরা আল-কদর: ১)
এই এক রাতেই ভাগ্য নির্ধারণের কলম উঠে যায়, ফেরেশতারা রহমত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, আর বিশ্বজগত আল্লাহর অপার করুণায় সিক্ত হয়।
রাসুলুল্লাহ সা. ও তাঁর প্রিয় সাহাবিরা রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াতে সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করতেন। এই মাস কেবল সংযমের মাস নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর অসীম ভালোবাসার মাস। রমজান মানুষকে শেখায় ধৈর্য, ত্যাগ ও সংযমের সৌন্দর্য।
সুবেহ সাদিকের আগমনে যখন মুমিন হৃদয় সিয়ামের নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে, তখন রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে ওঠে বরকতময়। আর যখন মাগরিবের আযান ধ্বনিত হয়, তখন তা হয়ে ওঠে রহমতের সুধা পান করার মোক্ষম মুহূর্ত।
রমজান কেবল একটি মাস নয়; এটি এক প্রশান্তির মরুদ্যান, এক অমিয় জ্যোতির ছোঁয়া, যা হৃদয়কে আলোকিত করে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, আর বিশ্বাসীদের জন্য এনে দেয় অফুরন্ত কল্যাণ। আল্লাহর রহমতের এই অমীয় ধারায় ভেসে যাক প্রতিটি মুমিন হৃদয়, আলোকিত হোক কুরআনের সুমহান বাণীতে!
শিক্ষার্থী, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর