মোঃ হাসান আলী, বাঘাইছড়ি প্রতিনিধিঃ
আজ সেই ভয়াল ১৮-ই মার্চ। ২০১৯ সালের এই দিনে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত ও আহতদের পরিবারকে পূর্ণর্বাসন ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব আব্দুল কাইয়ুম দাবি করেন- পার্বত্য চট্টগ্রামে যত গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন হয়েছে তার সকল বিচার যেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তিনি আরো দাবি করেন যে, উক্ত ঘটনায় যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে যথাযথ পুনর্বাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যেন যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি এবং আহতদের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পার্বত্য এলাকা থেকে যতগুলো সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে সে সব সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপনসহ দুর্গম ও বিপজ্জনক এলাকা গুলোতে আরও সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধির জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। মানববন্ধনে জনাব আব্দুল কাইয়ুম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উক্ত হত্যা কান্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ ন্যায় বিচার দাবি করেন।
আহত-নিহতদের পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জনাব মোঃ আবু তাহের তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দাবি করেন- যারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসীের গুলিতে নিহত হয়েছে তাদের পরিবার এবং আহতরাসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি আরো বলেন পার্বত্য এলাকায় প্রতিনিয়ত গুম, খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণের মত ঘটনা ঘটছে কিন্তু সরকার ও প্রশাসন এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। যার কারণে পার্বত্য অঞ্চলে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানববন্ধনে জনাব আবু তাহের সরকারের কাছে দাবি করেন যে, গত জুলাই আন্দোলনে আহত নিহতদের যেভাবে জুলাই বীর হিসেবে রাষ্ট্র তাদেকে স্বীকৃতি দিয়েছে তেমনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিগত ১৮ মার্চ ২০১৯ সালে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যারা সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত ও নিহত হয়েছে তাদেরকেও রাষ্ট্রীয় বীর হিসেবে যেন স্বীকৃতি প্রদান করে। এছাড়াও মানববন্ধনে বিভিন্ন বক্তারা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা তাদের বক্তব্যে উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে ভোট কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে দুই নির্বাচনী কর্মকর্তা, চার আনসার সদস্য সহ মোট ৮ জন নিহত এবং ৩৩ জন গুলিবৃদ্ধ হয়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছিল। নিহত কর্মকর্তারা হলেন প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হান্নান আরব, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আবু তৈয়ব, সহকারী পোলিং অফিসার আমির হোসেন, আনসার সদস্য আলআমিন ও বিলকিস আক্তার। অপর দুজনের নাম মিহির কান্তি দত্ত ও মন্টু চাকমা। ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে সরঞ্জামাদি নিয়ে উপজেলা সদরে ফেরার পথে মারিশ্যা-দিঘীনালা সড়কের নয় মাইল এলাকায় সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত গাড়ীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ৪ জন। বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর আরও তিন জন মারা যান।
বাঘাইছড়ি থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম এ মনজুর থাকাকালীন সময়ে ২০/০৩/২০১৯ ইং তারিখে বাঘাইছড়ি থানা দন্ডবিধির ১৪৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২ ও ৩৪ ধারা উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।