ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধিঃ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় চাঁদাবাজি ও দোকান দখলের অভিযোগ উঠে দুই নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত দুজন হলেন জবি শাখার ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ বিন হাসিম ও ওমর ফারুক।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব প্রান্ত ও তার চার বন্ধু আনিকা, নিশু, তানভীর ও জোবায়ের মিলে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ‘খাওন দাওন’ নামে একটি দোকান শুরু করেন। শুরুর দিকে ব্যবসা বেশ ভালোই চলে। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার কারণে সাময়িকভাবে দোকান বন্ধ রাখা হয়। এই সুযোগে জবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ বিন হাসিম ও ওমর ফারুক দোকানের জায়গা দখলের চেষ্টা চালান এবং প্রতিদিন ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে দোকানের মালামাল সরিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ জানান ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের মধ্যে একজন নিশু আক্তার বলেন, “জুলাইয়ে পরে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ছোটখাটো ব্যবসা করবো ঠিক করি। আমরা নিজেদের জমানো টাকা একত্র করি। প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসাটা শুরু করি। আমরা নভেম্বর থেকে শুরু করেছি। মাঝখানে ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের পরীক্ষা ও ফিল্ডওয়ার্ক ছিল। এরপর রমজান মাস চলে আসে আবার। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঈদের পর থেকে আমরা আমাদের এই ব্যবসা আবার নতুন করে শুরু করবো। মাঝখানে ব্যবসাটা অফ রাখি।”
তিনি আরো জানান, “এই সময়ের মধ্যে আমাদের এক পার্টনারকে কল দিয়ে রাশেদ এবং ওমর ফারুক বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমাদের দোকান দখল করে। তারা আরো বলে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে নাকি তাদেরকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে।”
এ বিষয়ে আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিহাব প্রান্ত বলেন, “ছাত্রদলের রাশেদ ও ফারুক জোর করে আমাদের এই দোকানটা দখল করার চেষ্টা করেন। তারা প্রথমে দৈনিক ৫০০ টাকা চাঁদা দাবি করে আমাদের কাছ থেকে। আমরা তাতে কোনোভাবেই রাজি হই না। তাই মঙ্গলবার দুপুর ১ টায় আমরা যখন ছিলাম না তখন আমাদের দোকান থেকে সকল মালামাল সরিয়ে ফেলেন। আমাদের দোকান তারা দড়ি দিয়ে চারিদিকে আটকে রেখেছে। আমাদের দোকানের অনেক মালামাল খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা ইতিমধ্যে দোকানের পেছনে যথেষ্ট টাকা খরচ করে ফেলেছি।”
কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করে ওমর ফারুক। তিনি জানান, “আমরা কোনো চাঁদা চাইনি। বরং
ঐ ছেলেরা তাদের দোকান পাশে রফিক মোল্লা নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়ে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছিল। সেই ব্যবসায়ী আমাদের কাছে অভিযোগ করেন। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা দোকানটি সংস্কার করে অন্য একজনকে দেওয়ার চিন্তা করেছিলাম।”
তিনি আরো বলেন,”এখানে জোরজবরদস্তি করে কারোর অন্যের দোকান দখলের কোনো অধিকার নেই। ওদেরও নেই। আমরা শুধু অন্য কারোর জন্য কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা করছিলাম।”
এই বিষয়টি সম্বন্ধে জানতে আরেকজন অভিযুক্ত রাশেদ বিন হাসিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
২০০ টাকা দেবার বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক ব্যবসায়ী রফিক মোল্লা বলেন, “ঐ ছেলেগুলো রমজানের আগে নিজেদের লোক দিয়েই ব্যবসা চালিয়েছে। কিছুদিন যখন তাদের দোকান বন্ধ ছিল তখন তারা অন্য একজন লোক দিয়ে দই-চিরা বিক্রি করিয়েছে। যেহেতু তারা স্টুডেন্ট মানুষ, তাই তারা ব্যবসা তেমন ভালো বুঝে না। তারা আমার কাছে একজন লোক ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলো। আমি তাদের সাহায্য করেছি। আর তাদের দোকান বন্ধ থাকার সময় আমার কিছু জিনিসপত্র সেখানে রেখেছিলাম। কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি।”
এই বিষয়ে জবি শাখার ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা আহ্বায়কের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “বিষয়টা নিয়ে আমি এখনো স্পষ্ট জানি না। ছাত্রদল পাঁচ টাকা খেলে সাত টাকা দিয়ে আসার চেষ্টা করে। যদি এমনটি কেউ করার চেষ্টা করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে যারা আগের দোকানের মালিক ছিলেন তাদেরকে ব্যবসা চালানোর সুযোগ দেওয়া হবে।
এই বিষয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী জিয়াউদ্দিন বাসেত বলেন, “এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে আমি অবগত নই। আমি বিষয়টা বিস্তারিত জেনে তারপর জানাচ্ছি।”
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, “এই বিষয়ে এখনও আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ আসলে তারপর আমরা আমাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেবো।”