নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ (২৬ মার্চ) চার দিনের সরকারি সফরে চীন যাচ্ছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে তার এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার হবে এবং ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিক
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২৬ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত চলমান এ সফরে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল চীনে অবস্থান করবে। সফরের অংশ হিসেবে ২৭ মার্চ তিনি চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত ‘দ্য বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া’র বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
সমঝোতা স্মারক সই হলেও হবে না কোনো চুক্তি
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সফরে কোনো চুক্তি সই হচ্ছে না, তবে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সীমিত মেয়াদের কারণে বড় কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নেই। তবে এই সফর ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য কূটনৈতিক ভিত্তি প্রস্তুত করতে সহায়ক হবে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে গুরুত্ব পাবে তিস্তা প্রকল্প ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
২৮ মার্চ চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি, অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আলোচনায় আসবে।
পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন জানান, তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।
স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে নতুন সহযোগিতা
স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে চীনের কুনমিং শহরে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত চীনা হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
সমঝোতা স্মারক ও সম্ভাব্য ঘোষণা
এই সফরে মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া খাতে পারস্পরিক সহায়তা, গণমাধ্যম সহযোগিতা এবং ঋণ ও বিনিয়োগসংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সফর কেবল কূটনৈতিক সৌজন্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে।