নিজস্ব প্রতিবেদক:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুককে ব্যবহার করে ইলিশ মাছ বিক্রির নামে ভয়াবহ প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোক্তাদের ফাঁদে ফেলে প্রতারকেরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। “দৈনিক আমার বাংলাদেশ” পত্রিকার অনুসন্ধানী টিমের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন এক ভয়াবহ প্রতারণার চিত্র।
প্রতারক মোঃ নাহিদ হোসেন (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: ৩৪৫৮৪৩৯৬৩৪) নামের এক ব্যক্তি “চাঁদপুর ইলিশ বাজার”, “প্রবাসী অনলাইন ইলিশের বাজার” এবং “পদ্মা নদীর ইলিশ বাজার”, “ইলিশ বাড়ী প্রবাসী সেবা লিমিটেড”, “রুপালী ইলিশের হাট”, “নাহিদ ওয়ার্ল্ড”, ”সামুদ্রিক মাছ ওয়ালা”, “চাঁদপুর ইলিশ বাড়ি BD ”, ”রূপালী ইলিশের হাট”, ”ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ” নামক বেশ কয়েকটি ফেইসবুক পেইজ খুলে লোভনীয় অফারে ইলিশ মাছ বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। এসব বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গার সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
প্রথমে ফেইসবুক পেইজে আকর্ষণীয় ছবি ও অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হয়। এরপর ক্যাশ অন ডেলিভারির কথা বললেও অগ্রিম বিকাশে অর্থ পাঠাতে চাপ দেয় চক্রটি। অভিযোগ আছে, প্রতারক মোঃ নাহিদ হোসেন WhatsApp নম্বর (01979737984) ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), ট্রেডলাইসেন্সের স্ক্যান কপি প্রদান করে বিকাশ নম্বর (01336-930740) এবং নগদ নম্বর (01742-575379) মাধ্যমে কৌশলে অগ্রীম ডেলেভারী চার্জ নেন। পরবর্তীতে তার ডেলিভারীম্যানের (মোবাইল নম্বর: 01331770489) সাথে যোগসাজশে বাকী টাকা কৌশলে পুনরায় বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম নিয়ে মাছ ডেলেভারী না করেই যোগাযোগ বন্ধ করে গা-ঢাকা দেন।
সম্প্রতি কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নামে “দৈনিক আমার বাংলাদেশ”এর অনুসন্ধানী টিম।
অনুসন্ধানী টিম প্রতারকের কথামত ৫০১৯ টাকার অর্ডারের বিপরীতে ৬০০ টাকা বিকাশ নম্বর (01336-930740) এ অগ্রীম দেয়। পরবর্তীতে ডেলেভারীম্যান মাছ ডেলেভারী দেয়ার কথা বলে অনুসন্ধানী টিমকে কল দিয়ে OTP চায়। OTP এর জন্য প্রতারকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ক্যাশ অন ডেলেভারীতে বাকী টাকা অগ্রীম দাবি করেন। তিনি বলেন, বাকী টাকা অগ্রিম না দিলে তিনি OTP পাঠাবেন না। এমতাবস্থায় অনুসন্ধানী টিম প্রতারকের বিকাশ নম্বর (01336-930740) এ বাকী টাকা অগ্রিম প্রদান করলে মাছ ডেলেভারী না করেই তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
ভয়াবহ এমন প্রতারণার অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ হাতেনাতে পাওয়ার পর “দৈনিক আমার বাংলাদেশ”এর অনুসন্ধানী টিমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তথ্য যাচাই বাছাই করে, পত্রিকাটির সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাসান মাহমুদ সুমন নিজে বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানায় প্রতারকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রতারক মো: নাহিদ হোসেনের সাথে বিকাশ লেনদেন তথ্য, প্রতারকের জাতীয় পরিচয়পত্র, ট্রেডলাইসেন্সের স্ক্যান কপি, সংশ্লিষ্ট ফেইসবুক পেইজের স্ক্রিনশট, WhatsApp এ কথোপকথনের স্ক্রিনশট থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃংখলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে । অগ্রিম টাকা পাঠানো থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি অনির্ভরযোগ্য পেইজ ও ব্যক্তির সাথে লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা।