মোহাম্মদ নয়ন, ভোলা প্রতিনিধিঃ
ভোলার লালমোহন উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রণোদনার সার-বীজ পেয়ে তেল জাতীয় ফসল সয়াবিন চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বাজারেও অন্যান্য তেল জাতীয় ফসলের থেকে সয়াবিনের দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। এ বছর ইউনিয়নের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন চাষ করেছেন উপজেলার লালমোহন ও লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের কৃষকরা।
আগামী একমাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই উপজেলার চাষিরা তাদের জমি থেকে সয়াবিন সংগ্রহ শেষ করবেন। কৃষকদের কাছ থেকে এসব সয়াবিন বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে কিনে নেন। যার প্রতি মণ ২৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে লালমোহনে ৩০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়েছে। যদিও গত বছর এই উপজেলায় সয়াবিন আবাদকৃত জমির পরিমাণ ছিল ২০ হেক্টরের মতো। এসব জমিতে অন্তত আড়াইশ কৃষক সয়াবিন চাষ করেছেন।
যার মধ্যে রয়েছে বারি সয়াবিন-৫ এবং বারি সয়াবিন-৬ জাত। এরমধ্যে বারি সয়াবিন-৫ এর বীজ রোপণের ৯৫ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে এবং বারি সয়াবিন-৬ এর বীজ রোপণের ১০০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে ফলন সংগ্রহ করতে পারেন কৃষকরা। এই সয়াবিন চাষের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে চাষিদের বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান করা হয়েছে।
লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সির হাওলা এলাকার চাষি মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সার-বীজ পেয়ে এ বছর দলবদ্ধভাবে ৪ জন মিলে দুই একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। এরমধ্যে নিজে ৪০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। বর্তমানে ক্ষেতে ফলন অনেক ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি আগামী ১৫ দিনের ভেতর জমির সয়াবিন সংগ্রহ করতে পারবো। এই ৪০ শতাংশ জমিতে সয়াবিন চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার সয়াবিন বিক্রি করা যাবে।
একই ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. তোফায়েল নামে আরেক চাষি জানান, চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো ১০০ শতাংশ জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। তবে প্রথমবার বীজ রোপণের পর বীজ নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার কৃষি অফিস থেকে বীজ এনে রোপণ করেছি। যার জন্য আমার খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। জমি প্রস্তুত, শ্রমিক ও কীটনাশক খরচসহ এবার সয়াবিন চাষে ২০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। তবে আগামী মাসখানের মধ্যে ক্ষেত থেকে সয়াবিন তুলতে পারবো। আশা করছি সব সয়াবিন তোলা শেষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। আমাদের কাছ থেকে এসব সয়াবিন নোয়াখালিসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে কিনে নেন। প্রতি মণ সয়াবিন আড়াই হাজার টাকা করে বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন বলেন, অন্যান্য রবি ফসলের চেয়ে সয়াবিন চাষ অনেক বেশি লাভজনক। সয়াবিন চাষে হেক্টর প্রতি উৎপাদন খরচ ২০ হাজার টাকার মতো। ফলন ভালো হলে এবং ন্যায্য বাজার মূল্য পাওয়া গেলে উৎপাদন খরচের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি লাভবান হন চাষিরা, যা অন্য কোনো ফসল আবাদ করে পাওয়া যায় না। এজন্য কৃষকদের সয়াবিন চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। যার ফলে লালমোহন উপজেলায় প্রতি বছর সয়াবিন চাষি বাড়ছে। এসব চাষিদের মাঠপর্যায়ে গিয়ে আমাদের কর্মকর্তা নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।