১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী ১৪ এপ্রিল শ্রদ্ধা-ভালবাসায় স্মরণ করবে দেবীদ্বারবাসী

মোঃ মাঈনুউদ্দিন বাহাদুর, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

উপমহাদেশের বাম প্রগতিশীল রাজনীতিতে আলো ছড়ানো অনন্য ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা। ১৯৭১-এ ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সাবেক সভাপতি, ‘কুঁড়েঘর প্রতীকের মোজাফ্ফরখ্যাত প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের আজ ১৪ এপ্রিল (১ বৈশাখ-১৪৩২ বাংলা) ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের সম্ভ্রান্ত ভূইয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা স্কুল শিক্ষক আলহাজ্ব কেয়াম উদ্দিন ভূইয়া, মা আফজারুন্নেছা।

তিনি দেবীদ্বার উপজেলার হোসেনতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনী, দেবীদ্বার রেয়াজউদ্দিন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ সালে মেট্টিক ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই.এ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ইউনেস্কোর ডিপ্লোমা লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করার আগে চট্রগ্রাম সরকারী কলেজ ও ঢাকা কলেজ সহ বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন।

কিন্তু শিক্ষকতা পেশা তাকে বেশি দিন আটকে রাখতে পারে নি। তিনি শোষিত, নিপিড়িত, নির্যাতি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে চলে আসেন জনগণের কাতারে। ১৯৩৭ সালে তার রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি। যদিও সক্রিয়ভাবে (চাকুরি ছেড়ে দিয়ে) রাজনীতিতে আসেন ১৯৫৪ সালে। তখন তিনি দেবীদ্বার আসন থেকে মুসলিম লীগ থেকে মনোনীত সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী খান বাহাদুর কায়দে আযম মৌলভী মফিজ উদ্দিন আহমদকে পরাজিত করে প্রথম বারের মত এমপি নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে তিনি পূনঃরায় জাতীয় সংসদের সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৮১ সালে ন্যাপ, সিপিবি এবং প্রগতিশীল শক্তির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন।
চল্লিশের দশকে যারা ছাত্রাবস্থায় বামপন্থায় দীক্ষা নিয়েছিলেন, মোজাফফর আহমদ তাঁদের একজন। হয়ে পড়েন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মোজাফফর আহমদের একনিষ্ঠ অনুসারী। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনকালে তাঁর আজিমপুর কলোনির ৮/আই, নাম্বারের বাসায় নিষিদ্ধঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির নিয়মিত বৈঠক করতেন। তৎকালিন কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দদের মধ্যে কমরেড নেপাল নাগ, কমরেড খোকা রায়, কমরেড মনিসিংহ, কমরেড অনিল মুখার্জি, কমরেড সত্যেন সেন অন্যতম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।

কুঁড়েঘর প্রতীক খ্যাত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করলে আত্মগোপনে চলে যান এবং ১৯৬৬ সালে তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেন। প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী বাম রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ১৯৬৭ সালের ৩০ নভেম্বর রংপুর জেলায় অনুষ্ঠিত এক কাউন্সিল অধিবেশনের পর চীনপন্থী ও মস্কোপন্থী-এ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

চীনপন্থী ন্যাপের সভাপতি হন মাওলানা ভাসানী এবং মস্কোপন্থী ন্যাপের সভাপতি হন সীমান্ত প্রদেশের খান আবদুল ওয়ালী খান। মস্কো শিবিরে পূর্ব পাকিস্তানপন্থী ন্যাপের সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। এ অংশ মোজাফফর ন্যাপ নামেও পরিচিত ছিল। ১৯৬৯-এ আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দানের কারনে গ্রেফতার হন। ১৯৭১‘র স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান নেতৃত্বের অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। তিনি স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ওই সময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৯ ইং সনে কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৮২সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের শুরুতে তিনি কিছুদিনের জন্য কারারুদ্ধ হন। তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে প্রথম সাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দেন।

অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া, ভারত, লিবিয়া, আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বহু দেশ সফর করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এ বাম নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ৪০শের দশক থেকে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)।
তার রাজনৈতিক জীবন ছিল অত্যন্ত বর্নিল। ১৯৩৭ সালে মাত্র ১৫ বছরের কিশোর বয়স থেকেই তিনি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ১৯৩৭ সালে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা গরুবাজারে বৃটিশ হটাও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এক জনসভায় মহত্মা গান্ধী ভাষন দেয়ার সংবাদে গান্ধীকে দেখার জন্য অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ ওই সভায় বাড়ি থেকে পায়ে হেটে যোগদান করেন। তখন তার ধারনা ছিল একটি জাতীয় পোকা গান্ধীজী দেখতে কেমন। যখন দেখলেন গামছা পড়া লাঠি ভর করে এক ব্যক্তি (গান্ধীজি) মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিচ্ছেন,- ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই হো- এক হো, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাকো খতম কর’ আহবান জানিয়ে আরো দু’একটি কথা বলেই তিনি বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে যান, তখন তিনি অবাক হলেন, এতোবড় নেতা যাকে দেখতে এলাম, বক্তৃতা শোনতে এলাম, তিনি একটি উপদেশমূলক আহবান জানিয়ে চলে গেলেন ! সেই মর্মার্থ খুঁজতে যেয়ে রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

উজিরপুরে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে বি.এন খান ডিগ্রি কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

মোঃ মাহফুজুর রহমান মাসুম, বরিশাল প্রতিনিধিঃ বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় “ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই বল, চাই সুস্থ দেহ, দৃঢ় মনোবল” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উজিরপুর বি.এন.খান

কাঠালিয়ায় উফশী আউশ প্রণোদনা কর্মসূচীর বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ

আঃ রহিম, কাঠালিয়া প্রতিনিধি: ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার সম্মানিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব জহিরুল ইসলাম মহোদয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উফশী আউশ প্রণোদনা কর্মসূচীর বীজ

উজিরপুরে ব্যাপক আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

মাহফুজর রহমান মাসুম, বরিশাল প্রতিনিধিঃ বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়েছে। বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ ও বর্ষবরণ উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

পরশুরামে মুহুরি নদীর উপর টেকশই ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

এম,এ,করিম ভুঁইয়া, পরশুরাম প্রতিনিধি ফেনী জেলার পরশুরামের সুবার বাজার সড়কে মুহুরী নদীর সংযোগস্থলে টেকসই ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৩ (এপ্রিল) রবিবার সকালে সুবার

Scroll to Top