১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

‘আয়নাঘর’ থেকে বেরিয়ে আসছে ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে গোপন বন্দিশালার সন্ধান। যেখানে বছরের পর বছর ধরে মানুষকে গুম করে রাখা হয়েছিল। এসব বন্দিশালায় তাদের চোখ বেঁধে রাখা হত, দিনের আলো থেকে বঞ্চিত করা হত এবং চরম নির্যাতনের শিকার করা হত। এই গোপন বন্দিশালাগুলোকেই বলা হত ‘আয়নাঘর’।

বিবিসির অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই একটি আয়নাঘরে আট বছর ধরে বন্দি ছিলেন ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম। তাকে জানালাবিহীন, সম্পূর্ণ বন্ধ একটি কক্ষে চোখ বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছিল। তিনি জানান, “আমি কখনো দিনের আলো দেখিনি। গ্রীষ্মকালে শ্বাস নিতে কষ্ট হত। মেঝেতে মুখ রেখে শ্বাস নিতে হত।”

এই আয়নাঘরের দেয়াল ভাঙার পর দেখা যায় নীল টাইলস, যেটি ব্যারিস্টার কাসেমের বিবরণের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, “আমাকে যেন জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল।”

এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানান আরও অনেকে।
বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা আতিকুর রহমান রাসেল জানান, পুরান ঢাকার এক মসজিদের বাইরে থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়।

ইকবাল চৌধুরী (৭১) বলেন, “আমাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন আমার হাত ও পা আগের মতো কাজ করে না।”
রহমতুল্লাহ (২৩) বলেন, “আমার জীবন থেকে দেড় বছর কেটে নেওয়া হয়েছে।” তাকে এমন ঘরে রাখা হয়েছিল যেখানে একটি খোলা ড্রেনই ছিল তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর একমাত্র উপায়।
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, “আমার হাতকড়া কখনোই খোলা হয়নি। আমি দিনের পর দিন চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিলাম।”
তিন বছর নিখোঁজ থাকা মাইকেল চাকমাও একই ধরনের নির্যাতনের কথা জানান।
মাসরুর আনোয়ার বলেন, “আমার চোখ বেঁধে রাখা হত। কেউ জানত না আমি কোথায় আছি।”

ভুক্তভোগীদের মতে, এসব আয়নাঘর র‍্যাব সদস্যরা পরিচালনা করত এবং তাদের কার্যক্রম শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই চলত।

২০০৯ সাল থেকে একটি বেসরকারি সংস্থা ৭০৯টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনো নিখোঁজ।
গঠিত কমিশনে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে ১৬৭৬টির বেশি এবং এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

ভুক্তভোগীরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ব্যারিস্টার কাসেম বলেন, “আমি এখনো টুপি ও মাস্ক পরে বাইরে যাই। সবসময় পেছনে তাকিয়ে চলি।”
তারা চান, এসব ঘটনার বিচার হোক—যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন নির্যাতনের শিকার না হন।

সূত্র: বিবিসি

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারও অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় চ্যালেঞ্জ আরাকান আর্মি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ না পারছে তাদের সঙ্গে

পাকিস্তানের কাছে ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার দাবি, ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান অন্তর্বর্তী সরকারের

  নিজস্ব প্রতিবেদক: এক প্রতিবেশীকে খুশি রাখতে আরেক প্রতিবেশী থেকে দূরে সরে যাওয়া কোনো স্বাধীন জাতির পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না— এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে জিএসপি পুনর্বহালের চেষ্টা চলছে: অর্থ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে মার্কিন বাজার থেকে আমদানি বাড়িয়ে ঘাটতি কমানোর

Scroll to Top