নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে গোপন বন্দিশালার সন্ধান। যেখানে বছরের পর বছর ধরে মানুষকে গুম করে রাখা হয়েছিল। এসব বন্দিশালায় তাদের চোখ বেঁধে রাখা হত, দিনের আলো থেকে বঞ্চিত করা হত এবং চরম নির্যাতনের শিকার করা হত। এই গোপন বন্দিশালাগুলোকেই বলা হত ‘আয়নাঘর’।
বিবিসির অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই একটি আয়নাঘরে আট বছর ধরে বন্দি ছিলেন ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম। তাকে জানালাবিহীন, সম্পূর্ণ বন্ধ একটি কক্ষে চোখ বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছিল। তিনি জানান, “আমি কখনো দিনের আলো দেখিনি। গ্রীষ্মকালে শ্বাস নিতে কষ্ট হত। মেঝেতে মুখ রেখে শ্বাস নিতে হত।”
এই আয়নাঘরের দেয়াল ভাঙার পর দেখা যায় নীল টাইলস, যেটি ব্যারিস্টার কাসেমের বিবরণের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, “আমাকে যেন জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল।”
এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানান আরও অনেকে।
বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা আতিকুর রহমান রাসেল জানান, পুরান ঢাকার এক মসজিদের বাইরে থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়।
ইকবাল চৌধুরী (৭১) বলেন, “আমাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন আমার হাত ও পা আগের মতো কাজ করে না।”
রহমতুল্লাহ (২৩) বলেন, “আমার জীবন থেকে দেড় বছর কেটে নেওয়া হয়েছে।” তাকে এমন ঘরে রাখা হয়েছিল যেখানে একটি খোলা ড্রেনই ছিল তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর একমাত্র উপায়।
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, “আমার হাতকড়া কখনোই খোলা হয়নি। আমি দিনের পর দিন চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিলাম।”
তিন বছর নিখোঁজ থাকা মাইকেল চাকমাও একই ধরনের নির্যাতনের কথা জানান।
মাসরুর আনোয়ার বলেন, “আমার চোখ বেঁধে রাখা হত। কেউ জানত না আমি কোথায় আছি।”
ভুক্তভোগীদের মতে, এসব আয়নাঘর র্যাব সদস্যরা পরিচালনা করত এবং তাদের কার্যক্রম শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই চলত।
২০০৯ সাল থেকে একটি বেসরকারি সংস্থা ৭০৯টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনো নিখোঁজ।
গঠিত কমিশনে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে ১৬৭৬টির বেশি এবং এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
ভুক্তভোগীরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ব্যারিস্টার কাসেম বলেন, “আমি এখনো টুপি ও মাস্ক পরে বাইরে যাই। সবসময় পেছনে তাকিয়ে চলি।”
তারা চান, এসব ঘটনার বিচার হোক—যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন নির্যাতনের শিকার না হন।
সূত্র: বিবিসি