রবিউল ইসলাম বাবুল, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান বলেছেন, “ফ্যাসিবাদীরা জনগণের আন্দোলনের মুখে শুধু গদি ছাড়েনি, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।”
তিনি বলেন, “ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাদের স্বাধীনতাকে আমরা সম্মান করি। আমরা তাদের সঙ্গে সম্মান ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে চাই। আমরা ভালো না থাকলে, তারা ভালো থাকবে কি না— সেটা তাদের ভাবতে হবে।”
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট শহরের কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াতের আয়োজনে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান।
জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। আমরাও নির্বাচন চাই, তবে সেটা অবশ্যই পেশিশক্তি ও কালো টাকামুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। এবং আগামী নির্বাচনের আগেই দেশের দরকার অনুযায়ী সংস্কার করতে হবে। তা না হলে এ দেশের মানুষ সেই নির্বাচন মেনে নেবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পর আমরা ১০/১৫ দিন মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মঠ পাহারা দিয়েছি। আমাদের তা করতে হয়েছে, কারণ আমরা তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেছি। আমরা এমন রাষ্ট্র গড়তে চাই, যেখানে প্রতিষ্ঠান পাহারা দিতে হবে না। শুধু সংখ্যালঘু নয়, সকল নাগরিক নিরাপত্তা ও সম্মান নিয়ে বসবাস করবে ইনশাআল্লাহ।”
“আমরা আল্লাহকে ভয় করি। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা কখনোই অন্যের সম্পদ, সম্মান ও ইজ্জত নষ্ট করতে পারে না। আমরা সৎ ও যোগ্য লোকদের মাধ্যমে কুরআনের আলোকে বাংলাদেশকে বদলে দিতে চাই। এজন্য আপনাদের মতামত ও পাশে থাকা প্রয়োজন।”
জামায়াতের শীর্ষ নেতা বলেন, “ফ্যাসিস্টরা জনগণের অধিকার ও কর্মসংস্থান কেড়ে নিয়েছিল। গুম, খুন ও নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠরোধ করেছিল। জনগণের আন্দোলনে তারা শুধু গদিই ছাড়েনি, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সহকর্মীদের মাঠে রেখে পালিয়েছে।”
দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাষ্ট্র পরিচালনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা সৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের দুর্নীতিতে বাধ্য করেছে। ১৩ হাজার টাকা বেতন পাওয়া কর্মচারী যদি ১৫ হাজার টাকা বাসাভাড়া দিতে বাধ্য হয়, তবে সে কী করবে? আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয়— পাশ্ববর্তী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আমাদের দেশে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে লালমনিরহাটের ছেলে হাসিনুরকে ভুট্টার পাতা সংগ্রহের সময় ধরে এনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। আপনারা বলুন, হাসিনুর কি মানুষ ছিল না? যারা এটা করেছে, তারা কি মানুষ?”
তিনি বলেন, “শিক্ষা জীবন শেষ করে বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, তবুও চাকরি পাচ্ছে না। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আমরা এমন রাষ্ট্র গড়তে চাই, যেখানে ছাত্ররা শিক্ষাজীবন শেষে সনদ হাতে নিয়েই কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবে।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের আমীর আবু তাহের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন লালমনিরহাট জেলার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি পুষ্পজিৎ রায় এবং রংপুর জেলার জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ শেষে জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবক হাসিনুরের বাড়িতে যান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে নীলফামারীর উদ্দেশ্যে রওনা হন।