২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চাঞ্চল্যকর আকলিমা খাতুন জুইকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তি

খালিদ হোসেন হৃদয়, পাবনা প্রতিনিধিঃ

চাটমোহর থানা পুলিশ, পাবনা, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ নাটোর এর যৌথ অভিযানে চাঞ্চল্যকর বড়াইগ্রাম থানার গাড়ফা গ্রামের ০৭ বছরের শিশু কন্যা আকলিমা খাতুন জুঁইকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও ০৫ জন আসামি গ্রেফতার।

সূত্রঃ চাটমোহর থানার মামলা নং-১৬, তারিখ-১৫/০৪/২০২৫ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ- বড়াইগ্রাম থানাধীন গাড়ফা উত্তরপাড়া গ্রামস্থ মোছাঃ মোমেনা খাতুন (৩২), স্বামী-মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সাং-গাড়ফা উত্তরপাড়া, ইউপি-চাঁন্দাই, থানা-বড়াইগ্রাম, জেলা-নাটোর প্রায় ১৭ বছর পূর্বে মোঃ জাহিদুল ইসলাম, পিতা-মোঃ সাইদুল ইসলাম, সাং-গাড়ফা উত্তরপাড়া, থানা-বড়াইগ্রাম, জেলা-নাটোর এর সহিত ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ হয়। সূত্রে বর্ণিত মামলার বাদীনি মোছাঃ মোমেনা খাতুন। ঘর সংসার করাকালীন তাহাদের ০১টি ছেলে ও ০২টি মেয়ে সন্তান জন্ম হয়। প্রায় ০২ বছর যাবৎ বাদীনির স্বামী মোঃ জাহিদুল ইসলাম মালয়েশিয়াতে অবস্থান করিতেছে। বাদীনি স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর হইতে বাদীনি তার স্বামীর বাড়িতে তিনি ও তার ০১টি ছেলে এবং ০২টি মেয়ে সন্তান সহ বাদীনির স্বামীর বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করিতেছে। বাদীনির মেজ মেয়ে আকলিমা খাতুন জুঁই (০৭) আজেদা নুরাইয়া ক্যাডেট মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্রী। বাদীনির মেজ মেয়ে মোছাঃ আকলিমা খাতুন জুঁই (মামলার ভিকটিম) বাদীনির খালা শ্বাশুড়ি মোছাঃ সবুরা খাতুন (৫০), স্বামী-মোঃ সুলতান হোসেন প্রামানিক, সাং-গাড়ফা উত্তরপাড়া, থানা-বড়াইগ্রাম, জেলা-নাটোর এর বাড়িতে মাঝে মধ্যে যাওয়া আসা করিত এবং রাত্রে থাকিত। গত ইং-১৪/০৪/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.৩০ ঘটিকায় (১লা বৈশাখ) বাদীনির মেজ মেয়ে মোছাঃ আকলিমা খাতুন জুঁই বাদীনির খালা শ্বাশুড়ি মোছাঃ সবুরা খাতুন (৫০) এর বাড়িতে সেমাই খাওয়ার কথা বলিয়া বাদীনির বাড়ি হইতে চলিয়া যায়। পরবর্তীতে ইং-১৫/০৪/২০২৫ তারিখ সকাল অনুমান ০৭.৩০ ঘটিকায় বাদীনির মেজ মেয়ে আকলিমা খাতুন জুঁই বাড়িতে না আসার কারণে বাদীনি তার খালা শ্বাশুড়ির বাড়িতে গিয়ে আকলিমা খাতুন জুঁই এর খোঁজ খবর নিয়ে জানিতে পারে আকলিমা খাতুন জুঁই তাদের বাড়িতে কিছুক্ষণ থাকার পর আবার চলে আসে। তখন বাদীনি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করিয়া বাদীনির মেয়েকে পায় না। তখন বাদীনির নিকট আত্মীয় স্বজনসহ প্রতিবেশী লোকজনদের জানাইয়া বাদীনি পুনরায় তার মেয়েকে খোঁজার জন্য বাহির হন। এক পর্যায়ে বাদীনির শ্বাশুড়ি মোছাঃ জহুরা খাতুন (৫৭), স্বামী-মোঃ সাইদুল ইসলাম, সাং-গাড়ফা উত্তরপাড়া, থানা-বড়াইগ্রাম, জেলা-নাটোর, নিজ নাতনি জুঁই এর নিখোঁজ সংবাদ পেয়ে তার বড় মেয়ের বাড়ি হতে নিজ বাড়ি গাড়ফা গ্রামে আসে এবং জুঁইকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ভিকটিমের দাদি মোছাঃ জহুরা খাতুন চাটমোহর থানাধীন হরিপুর ইউপিস্থ রামপুর সাকিনে জনৈক মোঃ আফজাল হোসেন (৭০), পিতা-মৃত কিরাম হাজী এর ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে বাদীনির মেজ মেয়ে আকলিমা খাতুন জুঁই এর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। পরবর্তীতে চাটমোহর থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত পূর্বক হত্যাকাণ্ডের রহস্য ও কারণ উদ্ঘাটনের নিমিত্তে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ সংক্রান্তে ভিকটিম এর মা মোছাঃ মোমেনা খাতুন বাদী হয়ে চাটমোহর থানায় এজাহার দাখিল করিলে সূত্রে বর্ণিত মামলা রুজু হয়।

মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মোরতোজা আলী খাঁন মহোদয়ের নির্দেশনায়, অফিসার ইনচার্জ চাটমোহর থানা, পাবনা জনাব মোঃ মনজুরুল আলম এর নেতৃত্বে, মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) মোঃ আওলাদ হোসাইন সহ সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স উক্ত হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ব্যাপক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চাটমোহর থানা পুলিশ, বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ নাটোর এর যৌথ অভিযানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জুঁই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্তে জড়িত অভিযুক্ত শিশু মোঃ সিয়াম আলম (১৩ বছর ০৪ মাস), পিতা-মোঃ শাহিন আলম, মাতা-মোছাঃ রিমা খাতুন, সাং-দিয়ার গাড়ফা গড়মাটি, ইউপি-চাঁন্দাই, থানা-বড়াইগ্রাম, জেলা-নাটোর কে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে জুঁই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত:
১। শেখ সাদী (১৬ বছর ০৩ মাস),
২। মোঃ সাকিব (১৬ বছর ০৫ মাস),
৩। মোঃ আব্দুল্লাহ (১৬ বছর ০৫ মাস),
৪। মোঃ সোহেল রানা (২৫ বছর ০৫ মাস ১০ দিন)

  • এদের কথা স্বীকার করে।

উক্ত অভিযুক্তদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে খারাপ মেয়ে আনিয়া আনন্দ ফুর্তি করিবে বলে আগে থেকে পরিকল্পনা করে টাকা উঠায় এবং গাঁজা ক্রয় করে। শেখ সাদী ভিকটিমের বাড়ির পাশে আমগাছ সংলগ্ন স্থানে অপেক্ষা করতে থাকে। পরে ভিকটিম আকলিমা খাতুন জুঁই জনৈক নয়নের বাড়ির পাশে আম কুড়াতে ও খেলতে এলে ১৪/০৪/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ০৫.০০ ঘটিকায় শেখ সাদী ভিকটিমের হাত ধরে মোঃ দুলাল হোসেন এর কলাবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব হতে সাকিব ও আব্দুল্লাহ অপেক্ষা করছিল। সেখানে তারা চারজন মিলে ভিকটিম জুঁইকে ধর্ষণ ও পাশবিক অত্যাচার করে। পরবর্তীতে সবাই মিলে জুঁই এর আধামরা দেহ ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে আসে। সেখানে সিয়ামকে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণ করায়। এক পর্যায়ে লাল রঙের প্যান্ট দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শেখ সাদী শ্বাসরোধ করে জুঁইকে হত্যা করে। সোহেল রানা জুঁই এর ঘাড় মটকে দেয় এবং সাকিব ভিকটিমের পা ধরে রাখে। আব্দুল্লাহ ভিকটিম এর মুখে এসিড জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে।

উল্লেখিত ০৫ জন অভিযুক্ত জুঁই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। অভিযুক্তদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ডিএনএ সংরক্ষণ ও পরীক্ষা সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

ঈদে যানজট ও লোডশেডিংমুক্ত সফল ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তাদের অভিনন্দন প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের জনগণকে নয় দিনব্যাপী যানজট ও লোডশেডিংমুক্ত ঝামেলাবিহীন একটি ঈদ উপহার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৯ সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই-আগস্টে ‘হত্যা-গণহত্যার’ অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও আরও ১৬ জনকে

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি নেতার ফেসবুক পোস্টে বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টে তীব্র ভাষায় মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। শনিবার

শিশুসন্তান বিক্রি করে অলংকার, মোবাইল কিনলেন মা

মো: জুবায়ের আহমেদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: চার মাসের কোলের সন্তান মাত্র ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন স্ত্রী। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় এমন কাজ করেছেন এই

Scroll to Top