নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে চালু থাকা প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ স্থগিত করেছে ভারত। ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা’ এবং ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা’র কারণ দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। এতে বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করার পরিকল্পনায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের সহযোগিতায় পরিচালিত তিনটি চলমান রেল প্রকল্প ও পাঁচটি জরিপ প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন নয়াদিল্লি এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের বদলে নিজেদের উত্তর ভারতের রেল অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে এড়িয়ে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বিকল্প সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও বিবেচনায় রয়েছে।
ভারতের রেলওয়ের এক unnamed কর্মকর্তার বরাতে দ্য হিন্দু জানায়, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কোনো নির্মাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে না এবং অর্থায়নও বন্ধ রয়েছে। প্রকল্প পুনরায় শুরু করতে হলে প্রথমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন বলে জানানো হয়। তবে ভারতের অংশে প্রকল্পগুলোর কাজ অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ, খুলাবুড়া-শাহবাজপুর রেললাইন, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন, এবং ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প।
আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্পে ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে এবং বাকি ত্রিপুরায়। এই প্রকল্পের জন্য ভারত ৪০০ কোটি রুপি অর্থায়ন করেছে। খুলাবুড়া-শাহবাজপুর রেলপথ প্রকল্পটি পুরনো লাইনের মাধ্যমে আসামের সঙ্গে সংযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে নেওয়া হয়।
মোংলা বন্দর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা ও মোংলার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার ব্রড গেজ লাইন নির্মাণের কাজ চলছিল ৩৩০০ কোটি রুপি ব্যয়ে। এই প্রকল্প ভারতের কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় পরিচালিত হচ্ছিল। মোংলা বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকারও রয়েছে ভারতের।
ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত বছর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৫০ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সহায়তায় পরিচালিত এই ১৬০০ কোটি রুপির প্রকল্পেও অর্থ ছাড়ে বিলম্ব দেখা গেছে।
এছাড়াও জরিপ চলা পাঁচটি প্রকল্পের কাজও স্থগিত করা হয়েছে বলে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ভারত বিকল্প আঞ্চলিক কৌশলের কথা ভাবছে। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে রেললাইন দ্বিগুণ থেকে চারগুণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে, যাতে দেশটির নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। একই সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করছে ভারত, যদিও এসব রুট বাস্তবায়ন অনেক বেশি জটিল।
নেপাল-ভারত সংযোগ প্রকল্প হিসেবে বিরাটনগর থেকে নিউ মাল পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার এবং গালগালিয়া-ভদ্রপুর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে কুমেডপুর-আম্বারি ফালাকাতা অংশে ১৭০ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটার নতুন লাইন স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তা সত্ত্বেও বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থগিত করে বিকল্প পথে সংযোগ তৈরির পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লি।