খালিদ হোসেন হৃদয়, পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনা ভাঙ্গুড়ায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা- নগদ অর্থ) কর্মসূচি ও গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর নগদ অর্থ)কর্মসূচির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসেনের যোগ সাজেশে ১৪ টি প্রকল্পের কাজ না করে ৩৬ লক্ষ্য ৭২ হাজার ৯৩৭কাটার অর্ধেক উত্তোলন করেছে এবং বাকি ৪২ টি প্রকল্পের ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৯ হাজার ৮৫৩ টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পিআইসি ও ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা- নগদ অর্থ) কর্মসূচির আওতায় ভাঙ্গুড়ায় ১৭ টি প্রকল্পের বিপরীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৮৬ লাখ ৭ হাজার ৮শ১৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে
এবং গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর নগদ অর্থ) কর্মসূচির আওতায় ১৭ টি প্রকল্পের বিপরীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৮৪
লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার এসব প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, ১৪ টি প্রকল্পে কোন কাজ হয়নি এবং বাকি ৪২ টি প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশই আংশিক কাজ করে প্রকল্পের বরাদ্দ কৃত অর্থের অর্ধেক টাকা উত্তোলন করেছে।
উপজেলা ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে অষ্টমনিষা ইউনিয়নে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় রুপসি ওয়াপদা বাঁধ হতে নবীরের বাড়ি হয়ে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করণে প্রকল্পের ২লক্ষ ৬০হাজার টাকা কোন কাজ না করে ১লক্ষ ৩০হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। বাকি দুটি প্রকল্পে আংশিক কাজ করে প্রকল্পের অর্ধেক টাকা উত্তোলন করেছে। বড় বিশাকোল মেইন রাস্তা থেকে আলমগীর এর বাড়ি অভিমুখে রাস্তা সংস্কার ও লামকান জামে মসজিদের রাস্তার উভয় পাশের মাটি ভরা ও গাইড ওয়াল নির্মাণে ২লক্ষ ৬৭হাজার টাকার আংশিক কাজ করে ১লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। এবং টিআর প্রকল্পের আওতায় ৬টি প্রকল্প বরাদ্দ হয়। ৬টি প্রকল্পের মধ্যে বড়বিশেকোল এবং গদায়রুপসী গ্রামের বাসের সাঁকো নির্মাণ নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ১লক্ষ ৪২হাজার টাকার মধ্যে ৭১ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। সিংগাড়ি পাকা রাস্তার পাশ্বে আহাম্মদের বাড়ি হতে দক্ষিণ দিকে জাবেদের বাড়ি অভিমুখে রাস্তা সংস্কার কাজ না করে ১লক্ষ ২৫ হাজার টাকার মধ্যে ৬২ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। শাহনগর ফিরোজের বাড়ি হতে শাজাহানের বাড়ির অভিমুখে রাস্তা সংস্কার করণ ৩ লক্ষ টাকা কাজ নাকরে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে।
ছোট বিসিকল কমিউনিটি ক্লিনিকে সামনে মাটি ভরা এবং আসাদের বাড়ি হইতে মানিকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করণে ২ লক্ষ টাকার প্রকল্পে আংশিক কাজ করে ১ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছে।
খানমরিচ ইউনিয়নে কাবিটা-নগদ অর্থ প্রকল্পের আওতায় ৩ টি প্রকল্পের মধ্যে কালিয়ানজিরি বাজার হইতে আমজাদ মেম্বারে বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৭ লক্ষ টাকা, দাস বেলায় পুরাতন মসজিদ হইতে বাবর আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৬ লক্ষ টাকা, রামনগর ভাঙ্গুড়া নওগাঁ রাস্তা হইতে বালিয়া পাড়া রেজাউলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ২ লক্ষ ৯ হাজার ৯৭৩ টাকার কোন কাজ না করে প্রকল্পে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা উত্তোলন করেছে।
টিআর -নগদ অর্থ কর্মসূচির আওতায় ৮ টি প্রকল্পের মধ্যে ৬ টি প্রকল্প গোবিন্দপুর শিয়ালবাড়ি শহীদের বাড়ি হতে তাইজাল শেখের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করণে ২লক্ষ টাকা, গোবিন্দপুর কামাল হুজুরের বাড়ি হতে আলহাজ্ব এর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ২লক্ষ টাকা, রামনগর নতুন মসজিদ হতে ভাঙ্গুড়া নওগাঁ রাস্তা অভিমুখে রাস্তা সংস্কার ১ লক্ষ ৫০হাজার টাকা,
মুন্ডমালা লোকমানের বাড়ি হতে পুকুর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩ লক্ষ টাকা, মুন্ডু মালা ফজরের পুকুর হতে বক্করের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ২লক্ষ টাকার কাজ না করে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্ধেক টাকা উত্তোলন করেছে এবং মহিষবাথান পুরাতন মসজিদের মিনার নির্মাণে ৩ লক্ষ টাকার কাজ চলমান রয়েছে,খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের আসবাবপত্র সরবরাহ ও ল্যাক্টিং সংস্কাররের ১লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার আংশিক কাজ হয়েছে।
দিল পাশার ইউনিয়নে কাবিটা নগদ অর্থ কর্মসূচির আওতায় ৩টি প্রকল্পের ১০ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এবং টিআর-নগদ অর্থ কর্মসূচির আওতায় ৫টি প্রকল্পের মধ্যে চকলক্ষিকোল হতে তারাপুর অভিমুখে রাস্তার হাসগাড়িতে কালভাট নির্মাণ২ লক্ষ ২১ হাজার টাকা কোন কাজ না করে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক বিল উত্তোলন করেছে।
বেতুয়ান কমিউনিটি ক্লিনিক এর গাইডওয়াল নির্মাণ ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা, দিলপাশার শ্মশানের ওয়াল নির্মাণ ১লক্ষ্য ৭০ হাজার টাকা,চৌবাড়িয়া ধরে মাটি ভরাট করণ ১লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া ভাঙ্গুড়া সদর ইউনিয়নের কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ৩ টি প্রকল্পে ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ও টিআর কর্মসূচির আওতায় ৪ টি প্রকল্পে ৯ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা এবং পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ২টি প্রকল্পের ১০ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা এবং টিআর কর্মসূচির আওতায় ৫টি প্রকল্পে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার কাজের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
মন্ডতোষ ইউনিয়নে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ২টি প্রকল্পের ৪লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা এবং টিআর কর্মসূচির ২টি প্রকল্পের ৪লক্ষ ৬৭হাজার টাকার কাজের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় খানমরিচ ইউনিয়নের অধিকাংশ প্রকল্প বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের নির্দেশে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা বিগত ২০২৩-২০২৪ বছরে বর্ষার পূর্বে রাস্তা নির্মাণ করেছিল এ বছরে সেই পুরাতন রাস্তার প্রকল্প দিয়ে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছে এবং অন্যান্য প্রকল্পে কোন কাজ হয়নি। অষ্টমনিষা ইউনিয়নের কয়েকটি প্রকল্প কোন কাজ হয়নাই। দিলপাশার ইউনিয়নে একটি প্রকল্পের কাজ হয়নি, অন্য অন্য প্রকল্পে আংশিক কাজ হয়েছে।
প্রকল্পের বিষয়ে অষ্টমনীষা ইউনিয়নের আব্দুল লতিফ বলেন, রূপসি ওয়াপদা বাঁধ হইতে নবীরে বাড়ি হয়ে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তায় এক টুকরো মাটি পড়েনি।
ওসমান প্রামানিক ও শাহ আলম বলেন,বড় বিশাকোল এবং গদাই রূপসি গ্রামের কোথাও সরকারের টাকায় বাঁশের সাকো নির্মাণ হয় নাই।
খানমরিচ ইউনিয়নের জহুরুল ইসলাম ও মুনছুর আলী বলেন, রামনগর নতুন মসজিদ হতে ভাঙ্গুড়া নওগাঁ রাস্তা অভিমুখে এ বছরে এক টুকরি মাটিও রাস্তায় পড়েনি।
মো.মহির উদ্দিন বলেন, মুন্ডু মালা লোকমানের বাড়ি হইতে ফজরের পুকুর পর্যন্ত এবং মুণ্ডমালা ফজরের পুকুর হইতে বক্করের বাড়ি পর্যন্ত এ বছরে কোন কাজ হয়নি তবে গত বছরে বর্ষার পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকার রাস্তা নির্মাণ করেছিল।
মঈান উদ্দিন বলেন,গোবিন্দপুর কামাল হুজুরের বাড়ি হতে আলহাজের বাড়ি পর্যন্ত এ বছরে কোন কাজ হয়নি।
মো. তাইজাল শেখ বলেন,গোবিন্দপুর শিয়াল বাড়িয়া শহীদের বাড়ি হইতে তাইজাল শেখের বাড়ি পর্যন্ত এখন পর্যন্ত এবছরে কোন রাস্তায় কাজ হয়নি।
অষ্টমনীষা ইউনিয়নের রূপসী প্রকল্প পিআইসি ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান বলেন দুই দিন হল কাজ শুরু করেছি।
প্রকল্প পিআইসি ও ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ (বাবু) কে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন উঠায়নি।
অষ্টমনিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন,বিল উত্তোলনের পরে কাজ করার নিয়ম তবে আপনি আসেন সামনাসামনি কথা বলি।
খানমরিচ ইউনিয়নের মুন্ডুমালা প্রকল্পের পিআইসি ও ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়া বলেন,প্রকল্প বিষয়ে আমি কিছু জানিনা তবে চেয়ারম্যেন পিআইসিতে আমার নাম দিয়েছে।
মুন্ডমালা প্রকল্প পিআইসি ও ইউপি সদস্য আবু সাঈদ বলেন, মুণ্ডমালা কোন কাজ আমি করিনি।
এ বিষয়ে খান মরিচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান মিঠু বলেন,কিছু কাজ বর্ষার পূর্বে এই অর্থ বছরেই অগ্রিম করে রেখেছিলাম এ বছরে প্রকল্প দিয়েছি। কিছু প্রকল্পের কাজ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,সকল কাজই হয়েছে আপনাদের চোখে পরে নাই।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসেন বলেন,পূর্বের কাজে যদি কোন অর্থ বরাদ্দ না থাকে তবে অর্থ বছরে সমন্বয় করা যেতে পারে, পূর্বে এমপি সাহেবের কাজে শুধুমাত্র শ্রমিকের বিল দেওয়ার জন্য এখানকার নেতাদের সুপারিশে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাজমুন নাহার বলেন, পূর্বের কাজে যদি কোন প্রকল্প না দেওয়া থাকে তাহলে সমন্বয় করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন যে যে কাজে সমস্যা বা অনিয়ম মনে করছেন আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে লিখে পাঠান আমি প্রকল্প পিআইসিদের নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করব।