নিজস্ব প্রতিবেদক:
পেহেলগাম হামলার জেরে ভারতের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের জবাবে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি এক জরুরি বৈঠকে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা স্থগিত, ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ এবং দেশটির সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। জিও নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক কড়া ভাষার বিবৃতিতে ইসলামাবাদ জানায়, তারা ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, পানি বন্ধ করে দেওয়া বা অন্য দিকে প্রবাহিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধের উসকানি হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং জাতীয় ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
পাকিস্তান জানায়, ভারতের সঙ্গে সব ধরনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্পের’ আওতায় দেওয়া সব ভিসা স্থগিত করা হয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কূটনীতিকদের সংখ্যা কমিয়ে ৩০ জনে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। পাকিস্তান তার আকাশসীমা ভারতীয় মালিকানাধীন ও পরিচালিত সব বিমান সংস্থার জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্কও স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে, বুধবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব ধরনের বৈধ ভিসা আগামী রোববার থেকে বাতিল বলে গণ্য হবে। যাদের কাছে ভারতীয় ভিসা রয়েছে, তাদের ভারত ত্যাগের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য নতুন করে আর কোনো ভিসা ইস্যু করা হবে না।
এছাড়া ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রথমত, সিন্ধু পানি চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করা পাকিস্তানি নাগরিকদের ১ মের মধ্যে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। তৃতীয়ত, দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের সামরিক, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদেরও দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চতুর্থত, সীমান্তচৌকি বন্ধ ও দূতাবাসে কর্মী সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি সার্ক ভিসা বাতিল করা হয়েছে। যেসব পাকিস্তানি নাগরিক এই ভিসায় ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। পঞ্চমত, দুই দেশের হাইকমিশনে কর্মরত কূটনীতিক সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।