“মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ইসলামবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিন-ভারতে মুসলিম নির্যাতন বন্ধের দাবিতে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি”
আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হৃদয়ের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আবারও রাজপথে নামছে। আগামী ৩ মে শুক্রবার, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহাসমাবেশ।
সমাবেশে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কুরআনবিরোধী সুপারিশ বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শাপলা চত্বরসহ ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদ জানানো হবে। হেফাজত নেতারা জানিয়েছেন, এটি শুধু সমাবেশ নয় — ইসলামী শক্তির নতুন ঐক্যের মঞ্চ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসলামবিদ্বেষী শক্তির রোষানলে পড়ে হেফাজতের নেতারা। প্রথম আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর আহ্বানে সংগঠনটি সারাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে গেলেও, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা ছিল ইতিহাসের কালো অধ্যায়।
লাখো তৌহিদি জনতা ১৩ দফা দাবিতে অবস্থান নিলে রাতের আঁধারে নির্বিচারে গুলি চালায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী। অসংখ্য শহীদ হন। লাশ গুম হয়। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.)-কে কারাবরণ করতে হয়। জেলে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হন।
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর হয়রানি করা হয়েছে। অনেকেই গোপনে দিন কাটাচ্ছেন, অনেকে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। আজও সেই মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার না করাকে হেফাজত ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেছে।
বিশেষ করে ২৪ এর জুলাই বিপ্লব চলাকালীন সময়ে আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। মাদরাসায় ঢুকে ছাত্রদের শাহাদাতের ঘটনা ঘটে। বহু আলেম-জনতা গ্রেফতার হন। সেই দমন-পীড়নের জখম এখনো শুকায়নি।
হেফাজতের নেতারা দাবি করেছেন, দেশের ইসলামপন্থী শক্তিকে দমন করতে ভারতের মদদপুষ্ট মহল এবং কিছু কথিত বুদ্ধিজীবী দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আসিফ নজরুলসহ একটি মহল সরাসরি ভারতের স্বার্থে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মিথ্যা মামলা, গণহত্যা আর দমন-পীড়নের মাধ্যমে ইসলামি শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হলেও আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (হাফি.)-র নেতৃত্বে হেফাজত আবারো রাজপথে শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে।
আগামী ৩ মে’র মহাসমাবেশ সফল করতে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে সমাবেশ, বিক্ষোভ-মিছিল এবং কর্মীসভা চলছে। ধর্মপ্রাণ জনতা উচ্ছ্বসিত।
দেশবাসীর প্রত্যাশা — হেফাজতের এই সমাবেশ থেকে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের রোডম্যাপ ঘোষণা আসবে। ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থান গ্রহণ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা হবে।
হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন নিছক রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এটি বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার সংগ্রাম।
২০১৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেও আপোষ না করা নেতাদের নেতৃত্বে ইসলামী শক্তির পুনর্জাগরণ এখন সময়ের দাবী।
৩ মে’র মহাসমাবেশ ইসলামি ঐক্যের নবযাত্রার ইতিহাস রচনা করতে চলেছে — এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দেশের তৌহিদি জনতা।