মাহমুদুর রহমান নাঈম, ঢাকা প্রতিনিধিঃ
কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নেতৃবৃন্দ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামবিরোধী প্রস্তাবনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে হুশিয়ারি বার্তা দিয়ে বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। প্রয়োজনের রক্ত দিয়ে প্রতিহত করব।
গতকাল ২৬ এপ্রিল ২০২৫. শনিবার সর্বপ্রাচীন ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত উক্ত কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন সাহেব। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া দিনব্যাপী এই কাউন্সিল পরিচালনা করেন।
কাউন্সিলে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেবকে সভাপতি, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী সাহেবকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী সাহেবকে মহাসচিব ও মাওলানা লোকমান মাজহারী সাহেবকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আগামী ৩ বছরের জন্য প্রস্তাবিত কার্যনির্বাহী কমিটি উপস্থিত কাউন্সিলরগণের স্বতঃস্ফূর্ত কন্ঠভোটে
অনুমোদিত হয়।
কমিটি অনুমোদনের পূর্বে সারাদেশ থেকে আগত সমস্ত কাউন্সিরগণ নিজ নিজ শাখার সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। এরপর দুুই পর্বে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী।
জমিয়তের সাত দফা প্রস্তাবনা-
১. ফ্যাসিবাদী আমলে শাপলা চত্বরে গণহত্যা, মোদি বিরোধী আন্দোলনে হত্যা, পিলখানা হত্যা ও জুলাই বিপ্লবের গণহত্যাসহ বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও হেফাজত ইসলামের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
২.
জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যে এক দফার লড়াই আমরা করেছিলাম, সেটা ছিল মূলত ফ্যাসিবাদের বা স্বৈরাচারের পতন এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একটি অর্জিত হয়েছে, আরেকটি অর্জনের পথে আছে। সুতরাং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা প্রদানের জন্য আজকের কাউন্সিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।
৩. সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবনায় কিছু বিতর্কিত বিষয় স্থান পেয়েছে বলে মনে করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। বিশেষ করে সংবিধানের মূলনীতিত বহুত্ববাদ যুক্ত করাকে জমিয়ত ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। এই প্রস্তাবনা বাতিল করে আল্লাহর ওপর পূর্ণবিশ্বাস ও আস্থা পুনরায় বহাল করতে হবে।
৪. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে;যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা প্রদানের কথাবলে আল্লাহর বিধানের সাথে তামাশা করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নারীনীতিমালার নামে এসব বিতর্কিত বিষয়গুলোকে বারবার সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছিলো, কিন্তু জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ ইসলামপ্রিয় জনতার তীব্র প্রতিবাদের কারণে তা,বাস্তবায়িত হতে পারেনি।
আজকের এ কাউন্সিল অধিবেশন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এবিতর্কিত প্রস্তাবনা বাতিলসহ পুরো কমিশন বাতিলের জোর দাববি জানাচ্ছে।
৫.ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যা শুধু ফিলিস্তিনের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্বমুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে জাতিসংঘকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিনে মুসলিম নিধন বন্ধ করতে হবে।
মুসলিমবিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না। সুতরাং বাংলাদেশসহ মুসলমান প্রধান দেশগুলোকে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং ‘নিপীড়িত’ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি কিংবা আরব লীগকেও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য আজকের এ অধিবেশন জোর দাবি জানাচ্ছে।
৬. পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে মুসলমানদের ওপর বারবার নির্যাতনের কাহিনী ঘটছে,মসজিদ-মাদরাসাসহ মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনায় বারবার আঘাত হানা হচ্ছে, বিশেষ করে দেশটির পার্লামেন্টে সম্প্রতি যে ওয়াকফ আইন সংশোধনী পাস হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে ভারতে মুসলমানদের কোনো উপাশনালয় থাকবে না।সুতরাং জমিয়তের আজকের এ অধিবেশন এ ওয়াকফ আইন সংশোধনী বিল বাতিল করতে ভারত সরকারের কাছে দাবি জানানোর জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানাচ্ছে।
৭.আমাদের প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরী হয়েছে, দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধযুদ্ধভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, এজন্য ভারত ও পাকিস্তানকে পরষ্পরের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আরো সংযত হওয়া ও আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশকে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসার জন্য আজকের কাউন্সিল বিনীতভাবে আহবান করছে।
কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন দলের শীর্ষ দায়িত্বশীলগণ।