লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান
দুনিয়ার ব্যস্ত শহরগুলো যখন কোলাহলে ডুবে যায়, জীবন যখন হয়ে ওঠে ছুটে চলা এক অবিরাম স্রোত, তখন কোথাও নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে কিছু পুরুষ। তারা মুখে কিছু বলে না, চোখে কোনো অভিযোগ রাখে না। অথচ তাদের নীরব উপস্থিতিতে গড়ে ওঠে পরিবার, সমাজ এবং গোটা মানবতা। ইসলামের আলোয় সেই পুরুষেরা শুধু একটি পরিচয়ে বিভূষিত—তারা দায়িত্বের নীরব নায়ক।
ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে এক পবিত্র আমানত। নেতৃত্ব, নিরাপত্তা, সুবিচার—সবকিছু তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু এই নেতৃত্ব ক্ষমতার অহংকার নয়; বরং করুণা আর দায়িত্ববোধের এক গভীর অঙ্গীকার। একজন প্রকৃত মুসলিম পুরুষ জানে, সে একা হাঁটছে না—তার কাঁধে আছে স্ত্রী, সন্তান, সমাজ এবং উম্মাহর স্বপ্নের ভার।
পুরুষের সম্মান বাহ্যিক শক্তিতে নয়, বরং তার নীরব ত্যাগে। পরিবারের নিরাপত্তায় তার নিরলস পরিশ্রম, সমাজের ভারসাম্যে তার সূক্ষ্ম ভূমিকা এবং প্রতিটি দায়িত্ব পালনে তার অবিচল ধৈর্যই ইসলামের চোখে তার মর্যাদার মাপকাঠি। সে জানে, প্রত্যেকটি দায়িত্বের হিসাব দিতে হবে রবের কাছে। তাই সে প্রত্যেক পদক্ষেপে রাখে সততার ছাপ, প্রত্যেক সিদ্ধান্তে রাখে তাকওয়ার দীপ্তি।
আজকের সময় যখন পুরুষের ভূমিকা নিয়ে নানা অপসংজ্ঞা তৈরি হয়, তখন ইসলামের সুমিষ্ট আহ্বান এখনো বলে—
“পুরুষ হও সেই, যার মাথা নত হয় আল্লাহর সামনে, যার কাঁধে শোভা পায় পরিবারের নিরাপত্তা, যার অন্তরে জেগে থাকে মমতা আর সাহসের এক অবিচল আলো।”
একজন প্রকৃত মুসলিম পুরুষ সূর্যের মতো আলো বিলায়, চাঁদের মতো প্রশান্তি ছড়ায়, পাহাড়ের মতো অবিচল থাকে, শিশিরের মতো কোমল হয়। তার প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন বলে—
“হে প্রভু, আমাকে দায়িত্বের পথে অবিচল রাখো, আমানতের ভার সহজ করো।”
তার জীবন যেন এক মৌন দোয়া, তার ক্লান্তির প্রতিটি ফোঁটা যেন অমর হয়ে ওঠে আখেরাতের আনন্দময় ফলাফলের অংশীদারিতে। এই নীরব নায়কের হাত ধরেই গড়ে ওঠে শান্তিময় সমাজ, দয়ায় ভরা পরিবার এবং সুন্দর পৃথিবী।
লেখক,শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো, মিশর