মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলাকালে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এমবিএর শিক্ষার্থী ছিলেন । পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়েও সক্রিয় ছিলেন মুগ্ধ। স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা নিতে যাবেন বিদেশে।
মেধাবী মুগ্ধর মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না পরিবার, সহপাঠী ও বন্ধুরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রল করলেই সামনে আসছে তাকে নিয়ে লেখা নানান স্মৃতিচারণামূলক পোস্ট। সহমর্মিতা জানিয়েও অনেকে লিখছেন ‘মুগ্ধকে স্মরণে রাখবে এ জাতি।’
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন মুগ্ধ। তার বাসাও ওই এলাকায়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও একটি ভিডিও ক্লিপে মুগ্ধকে ছাত্রদের মধ্যে পানি বিতরণ করতে দেখা যায়। দৌড়ে দৌড়ে বলছিলেন, ‘কারও পানি লাগবে ভাই, পানি? পানি লাগলে নেন।’
সবকিছু ছাপিয়ে এখন আলোচনায় মুগ্ধর ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতা। একটি ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মে তার আইডির স্ক্রিনশট শেয়ার দিয়ে সাফল্য নিয়ে ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করছেন অনেকে। ওই আইডিতে দেখা যাচ্ছে, মুগ্ধর কাজে খুশি হয়ে এক হাজার ৮৮ জন ক্লায়েন্ট রিভিউ দিয়েছেন। তার ওভার অল রেটিং ৫। সেলার কমিউনিকেশন লেভেল রেটিংও ৫। রিকমেন্ড টু অ্যা ফ্রেন্ড এবং সার্ভিস অ্যাজ ডেসক্রাইব রেটিংও দেখা যাচ্ছে ৫।
মুগ্ধর কাজে খুশি হয়ে জার্মানির একজন ক্লায়েন্টের মন্তব্য সবার ওপরে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘তার কাজে খুবই সন্তুষ্ট। তিনি খুব দ্রুততম সময়ে কাজ করেন এবং যে কোনো সমস্যায় সাহায্য করেন। সত্যিই তার কাছ থেকে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করছি। ধন্যবাদ।’
রোকনুজ্জামান এমডি নামে একজন লিখেছেন, ‘মুগ্ধর ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইলটাই বলে সে কতটা ট্যালেন্টেড ফ্রিল্যান্সার ছিল। তার আইডি দেখে সহজেই ধারণা করা যায় এ দেশকে অন্তত ৫০-৬০ হাজার ডলার বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিয়েছিল সে। ১০০০+ রিভিউ, সঙ্গে এভারেজ ৫ রেটিং মেইনটেইন করা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘একজন মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে সরকারি চাকরিতে কোটার জন্য তার আন্দোলনে যাওয়া লাগে না। তারপরও এ আন্দোলনে শরিক হয়েছিল, দেশের সব নাগরিকের সমমর্যাদার জন্য। ফলাফল হচ্ছে, ঘাতকের বুলেট তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। এত ছোট বয়সে দেশের অর্থনীতিতে এরকম অবদান কয়জন রাখতে পারে?’
ফ্রিল্যান্সারদের একটি গ্রুপে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মীর মুগ্ধ! ফাইবার লেভেল ২ সেলার। ১০৮৮টা ৫ স্টার রিভিউ। কম করে হলেও সে এই অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩০০-১৪০০ অর্ডার কমপ্লিট করেছে। তার গিগ-এর সর্বনিম্ন প্রাইস ১৫ ডলার এবং সর্বোচ্চ প্রাইস ৯০ ডলার।’
‘আপনি গড়ে তার প্রতিটা কাজের মূল্য ৫০ ডলার করে ধরেন। তাহলে ১০৮৮*৫০ ডলার= ৫৪৪০০ ডলার শুধু এই অ্যাকাউন্ট থেকে সে ইনকাম করেছে। একই সঙ্গে আউট অব মার্কেটপ্লেস তো আছেই। একজন ফাইবার লেভেল ২ সেলার অবশ্যই আউট অব মার্কেটপ্লেসে কিছু না কিছু তো ইনকাম করেই। সে আউট অব মার্কেটপ্লেস থেকে কম করে হলেও ১০ হাজার ডলার তো অবশ্যই ইনকাম করেছে।’
পোস্টে আরও বলা হয়, ‘তাহলে ধরেন কমপক্ষে সে রাষ্ট্রকে ৫৪৪০০+১০০০০=৬৪৪০০ ডলার এনে দিয়েছে। সব বাদে ধরেন সে ৫০০০০ ডলার রাষ্ট্রকে এনে দিয়েছে! এটা সর্বনিম্ন! আর এই রাষ্ট্র তাকে কী দিলো? একটা বুলেট? দাম কত একটা বুলেটের? যে তাকে গুলি করলো সে এ রাষ্ট্রকে কী দিয়েছে? আপনি এ রাষ্ট্রকে কী দিয়েছেন? ভেবে দেখুন!’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) থেকে গণিত বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে গত মার্চে ঢাকায় আসেন। এরপর বিইউপিতে এমবিএতে ভর্তি হন। স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা নিতে একদিন দেশের বাইরে যাবেন। সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে গত ১৮ জুলাই উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান মেধাবী মীর মুগ্ধ!