২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

পিতাহারা দুই মেয়েকে বলতে পারি না তাদের বাবার খুনের বিচার হবে কি না: একরামের স্ত্রী

২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে টেকনাফের কে কে পাড়া (কাইযুকখালীপাড়া) এলাকা থেকে একরামুল হককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে তার গুলিবিদ্ধ লাশ মেলে।

একরামের পরিবার এ ঘটনার পর বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে । ঘটনার পর মামলা করতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার বাধার মুখে পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতেও বারবার হুমকি দেওয়া হয়। কোথাও কোনো প্রতিকার না পেয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়ে রেখেছেন স্বামীহারা স্ত্রী এবং বাবাহারা সন্তানরা।

তিনি বলেন, ‘একদিন স্বামী হত্যার বিচার হবে—এ আশায় বুক বেঁধে আছি। কখনো হাল ছাড়িনি। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, এখনো বিচার পাব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’

আয়েশা বেগম বলেন, ‘যে নারী স্বামী হারিয়েছে, সেই জানে কষ্ট কী জিনিস। ধারদেনা করে সন্তানদের নিয়ে দিন কাটছে। সাংবাদিকরা আসেন, নানা কথা বলে বক্তব্য নিয়ে যান। কিন্তু আমার কোনো আশার ফুল ফোটে না।’ তিনি আরও বলেন, দুই মেয়ের মধ্যে বড়টা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছোটটা এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাদের এক চাচা পড়ালেখার খরচ দেন। বাকিটা আল্লাহর ওপরে ছেড়ে দিয়েছি।

রাগ ও ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো জানতে পারিনি কেন, কী কারণে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে র্যাব। তিনি তো কোনো অপরাধ করেননি। কোনো মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না…। তবে এত কষ্টের মধ্যেও স্বপ্ন দেখি আমার স্বামী হত্যার বিচার হবে। যেদিন বিচার পাব সেদিন সব কষ্টই আমার কাছে তুচ্ছ মনে হবে।’ আয়েশা জানান, সরকার পরিবর্তন হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে হত্যা মামলা করার কথা ভাবছেন।

ওই দিনের ঘটনা তুলে ধরে আয়েশা বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাজার কমিটির মিটিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হওয়ার পরে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় একরামকে। আমরা তার খোঁজ নিতে একবার থানায়, একবার টেকনাফে অবস্থিত ডিজিএফআই অফিসে গিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দেননি। অনেক চেষ্টার পর মোবাইল ফোনে তার (একরাম) সঙ্গে কথা হয়। মধ্যরাতে যখন আমার স্বামীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়, তখনো আমি মোবাইল সংযোগে ছিলাম। আমি তাদের অনুরোধ করেছিলাম, আমার স্বামী যদি অপরাধ করে থাকে, তবে তাকে মামলা দিয়ে থানায় দিতে। আমার আকুতিতে তাদের মন গলেনি। সেদিন থেকে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল। আমার সন্তানরা এতিম হয়ে গেল। এখন কেউ আমাদের খবর রাখে না। ভাঙা ঘরে এতিম মেয়েদের নিয়ে কীভাবে দিন যাচ্ছে, তা একমাত্র আমার সৃষ্টিকর্তা জানে। এ কষ্ট কাউকে বোঝানোর মতো না। কেউ বুঝবেও না। তাই এসব নিয়ে কাউকে কিছু বলতে চাই না।

সংসার কীভাবে চলছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কষ্টে আছি, শুধু এতটুকু বললাম। আর বলেই বা কী হবে। আমার দুঃখ, বেদনা, কান্নার ভাগ তো কেউ নেবে না। শুধু আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমি পিতাহারা দুই মেয়েকে বলতে পারি না তাদের বাবার খুনের বিচার হবে কি না। একজন জলজ্যান্ত মানুষকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করল। আমি র্যাবের এসব কর্মকর্তার বিচার চাই। আপনারা শুধু এতটুকু লেখেন। আর আমার দুই মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।’

২০১৮ সালের ৪ মে দেশজুড়ে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান। এ অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন একরামুল হক। সে সময় তিনি টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। ১২ বছর ছিলেন টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।

 

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

আ.লীগের ৬ নেতাকর্মী চিন্ময়ের মুক্তি দাবিতে মিছিল থেকে আটক

পুলিশ চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবিতে মিছিলের প্রস্তুতিকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে । মঙ্গলবার রাতে নগরীর পাহাড়তলীর সরাইপাড়া এলাকা থেকে

শান্তিনগর থেকে অহিংস গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক মাহবুবুল আলম গ্রেফতার

রাজধানীর শাহবাগে ‘বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে, এজন্য শাহবাগে বিশাল সমাবেশে জড়ো হতে হবে’-এমন কথা বলে লক্ষাধিক

নিজ বাড়িতে ফিরতে চাই: তুরিন আফরোজের মা

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে বাড়ি দখল ও সন্ত্রাসী ভাড়া করে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে তার মা শামসুন্নাহার তসলিম নিজের নাগরিক অধিকার এবং বাড়ি ফিরে পাওয়ার

দুই কলেজের সংঘর্ষে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ রণক্ষেত্র

কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে । এ ঘটনার পর মোল্লা

Scroll to Top