২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ ভ্রমণ: ৯টি আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান এবং সেখানে কীভাবে যাবেন

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিয়ে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একটি অসাধারণ গন্তব্যস্থল। দেশের বিভিন্ন কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান, যা ভ্রমণকারীদের জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা এনে দেয়। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে কক্সবাজারের সোনালী বীচ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে সুন্দরবনের জঙ্গলে—প্রতিটি জায়গার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য রয়েছে।

এই নিবন্ধে আমরা তুলে ধরব বাংলাদেশে ভ্রমণের জন্য ৯টি  বিশেষ স্থান এবং সেই স্থানগুলোতে কিভাবে সহজে পৌঁছানো যায়, তার বিস্তারিত তথ্য। এই গন্তব্যস্থলগুলো শুধুমাত্র আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে না, বরং দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেও আরও ভালভাবে জানতে সহায়তা করবে। চলুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশের সেরা ৯টি  ভ্রমণস্থল এবং সেগুলোতে যাতায়াতের উপায়।

১. কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি অসাধারণ সমুদ্র সৈকত। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, যা প্রায় ১২০ কিমি লম্বা। এখানে প্রবাহিত নীল জল, সোনালী বালুকা, এবং প্রশান্ত প্রকৃতি পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। কক্সবাজারের সৈকতে সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা একেবারেই অদ্বিতীয়। সৈকতের পাশেই অসংখ্য রেস্তোরাঁ এবং কফি শপ রয়েছে যেখানে আপনি স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। “হোটেল অ্যাস্টার ইকো” এবং “লংবীচ হোটেল” এই শহরের প্রধান হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার উপায় ও খরচ:

১. বাসে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে কক্সবাজার।
  • খরচ: সাধারণত এক দিকের বাস টিকেটের দাম ১২০০-২০০০ টাকা হতে পারে, বাসের ধরণ (নন-এসি, সেমি-এসি, এসি) অনুযায়ী।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১২-১৫ ঘণ্টা।

২. ফ্লাইটে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে কক্সবাজার।
  • খরচ: সাধারণত এক দিকের ফ্লাইট টিকেটের দাম ৫০০০-৮০০০ টাকা হতে পারে, বিশেষ অফার বা সিজনের উপর নির্ভর করে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১ ঘণ্টা।

৩. ট্রেনে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, তারপর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার।
  • খরচ: ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনের টিকেটের দাম ৬৯৫ টাকা – ১,৩২৫ টাকা টাকা হতে পারে।
  • যাত্রার সময়: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা, তারপর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার বাসে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • বাসের তথ্য: ঢাকা থেকে কক্সবাজারের জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে, যেমন শ্যামলী, হানিফ, ও অন্যান্য।
  • ফ্লাইটের তথ্য: ঢাকা থেকে কক্সবাজারের ফ্লাইটের জন্য বিমান সংস্থা গুলি যেমন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার সুবিধা প্রদান করে।

 

২. সুন্দরবন: পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন

সুন্দরবন, দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা ১০,০০০ কিমি² এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই বনটি মূলত সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ নামে পরিচিত এবং এটি বাঘের বাসস্থান হিসেবে বিশ্বখ্যাত। সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা বর্তমানে ১০০-১২০টি, যা এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র করে তোলে। বনটি এখানে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সুন্দরবনে ভ্রমণের সময়, আপনি জলপথে নৌকায় করে বনভ্রমণ করতে পারেন। স্থানীয় গাইডরা এই বন সম্পর্কে বিশদ তথ্য প্রদান করে থাকেন। 

ঢাকা থেকে সুন্দরবনে যাওয়ার উপায় ও খরচ:

১. বাসে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে খুলনা।
  • খরচ: সাধারণত এক দিকের বাস টিকেটের দাম ৭০০-১২০০ টাকা হতে পারে, যাত্রার ধরনের উপর নির্ভর করে (এসি বা নন-এসি)।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা।

২. ট্রেনে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে খুলনা।
  • খরচ: সাধারণত এক দিকের ট্রেন টিকেটের দাম ৫০০-১০০০ টাকা হতে পারে, যাত্রার ক্লাসের উপর নির্ভর করে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা।

৩. খুলনা থেকে সুন্দরবন যাত্রা

  • রুট: খুলনা থেকে সুন্দরবনে যেতে নৌকায় চড়তে হবে।
  • খরচ: নৌকা ভাড়া সাধারণত ১০০০-৩০০০ টাকা হতে পারে, যাত্রার ধরনের এবং দলগত আকারের উপর নির্ভর করে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ২-৩ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • খুলনা থেকে সুন্দরবন অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
  • ভ্রমণ সংস্থা: সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য অনেক ট্যুর অপারেটরও রয়েছে যারা প্যাকেজের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

 

৩. সেন্ট মার্টিন: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ

সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ এবং এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। সেন্ট মার্টিনের বিশুদ্ধ নীল জল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। দ্বীপের প্রবাল বিচ্ছিন্ন এক শান্ত পরিবেশ প্রদান করে, যেখানে পর্যটকরা স্নান করতে এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন। সেন্ট মার্টিনে থাকার জন্য “অফুরন্ত” এবং “সেন্ট মার্টিন রিসোর্ট” এর মতো কিছু উন্নত হোটেল রয়েছে। 

ঢাকা থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার উপায় ও খরচ:

১. বাসে যাত্রা (ঢাকা থেকে কক্সবাজার)

  • রুট: ঢাকা থেকে কক্সবাজার।
  • খরচ: এক দিকের বাস টিকেটের দাম সাধারণত ১২০০-২০০০ টাকা হতে পারে, বাসের ধরণ অনুযায়ী (নন-এসি, সেমি-এসি, এসি)।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১২-১৫ ঘণ্টা।

২. কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাত্রা

  • রুট: কক্সবাজার থেকে টেকনাফ।
  • খরচ: এক দিকের বাস টিকেটের দাম প্রায় ২০০-৪০০ টাকা হতে পারে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১.৫-২ ঘণ্টা।

৩. টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাত্রা

  • রুট: টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নৌকায় যাওয়া।
  • খরচ: নৌকা বা লঞ্চের ভাড়া সাধারণত ১০০০-২০০০ টাকা হতে পারে, যাত্রার মৌসুম এবং সেবার ধরনের উপর নির্ভর করে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১.৫-২ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • সেন্ট মার্টিনের জন্য নৌকা বা লঞ্চের টিকেট আগে থেকেই বুকিং করা উচিত, বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে।
  • সিজন: শীতকাল (নভেম্বর থেকে মার্চ) সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের জন্য সেরা সময়, কারণ সাগরের পরিবেশ তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকে।
  • মৌসুম: বর্ষাকালে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কারণে নৌযান চলাচল সীমিত হতে পারে, তাই পরিকল্পনা করার আগে আবহাওয়া প্রতিবেদন দেখা ভালো।

৪. পাহাড়পুর: প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

পাহাড়পুর বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার, যা ৭ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল হিসেবে UNESCO কর্তৃক স্বীকৃত। এই বিহারের বিভিন্ন স্থাপনা যেমন স্তূপ এবং ভিক্ষুদের আবাসন, প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার সাক্ষী। প্রতি বছর প্রায় ২০,০০০ পর্যটক এখানে আসেন। স্থানীয় গাইডদের মাধ্যমে বিহারের ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন। ঢাকা থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য বাস বা ট্রেন ব্যবহার করতে পারেন। 

ঢাকা থেকে পাহাড়পুর যাওয়ার জন্য বিভিন্ন যাতায়াতের উপায় রয়েছে। এখানে ঢাকা থেকে পাহাড়পুরের যাতায়াতের উপায় এবং খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:

ঢাকা থেকে পাহাড়পুর যাওয়ার উপায় ও খরচ:

১. বাসে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে পাহাড়পুর (পর্যটক আকর্ষণ হিসেবে পাহাড়পুর বিহার ও অন্যান্য স্থান দেখা হয়, যেমন দিনাজপুর)।
  • খরচ: এক দিকের বাস টিকেটের দাম সাধারণত ৫০০-৮০০ টাকা হতে পারে, বাসের ধরণ অনুযায়ী (নন-এসি, সেমি-এসি, এসি)।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা।

২. ট্রেনে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে দিনাজপুর, তারপর দিনাজপুর থেকে পাহাড়পুর।
  • খরচ: ঢাকা থেকে দিনাজপুর ট্রেনের টিকেটের দাম সাধারণত ৫০০-৮০০ টাকা হতে পারে, ট্রেনের ক্লাস অনুযায়ী। দিনাজপুর থেকে পাহাড়পুরে যাওয়ার জন্য বাস বা অটো রিকশার ভাড়া প্রাপ্তি অনুযায়ী ৩০০-৫০০ টাকা।
  • যাত্রার সময়: ঢাকা থেকে দিনাজপুর ট্রেনে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা, তারপর দিনাজপুর থেকে পাহাড়পুর বাস বা অটো রিকশায় প্রায় ১-১.৫ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • ট্রেনের টিকেট আগেই বুকিং করা হলে ভালো, বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা ছুটির মৌসুমে।
  • বাসের তথ্য: ঢাকা থেকে দিনাজপুরের জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে, যেমন শ্যামলী, হানিফ, ও অন্যান্য।
  • অতিরিক্ত সুবিধা: দিনাজপুর থেকে পাহাড়পুর যাওয়ার জন্য আপনি স্থানীয় বাস, অটো রিকশা বা প্রাইভেট কার ব্যবহার করতে পারেন।

৫. রাঙ্গামাটি: পাহাড় ও হ্রদের শহর

রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি সুন্দর পাহাড়ি এলাকা। এখানে কাপ্তাই হ্রদ, পাহাড় এবং আদিবাসী জনগণের জীবনযাত্রা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ, যা জলবাহী ক্রুজ এবং পিকনিকের জন্য আদর্শ স্থান। রাঙ্গামাটিতে থাকার জন্য “রাঙ্গামাটি প্যারাডাইস” এবং “পাইন ভিউ রিসোর্ট” এর মতো হোটেল রয়েছে। 

ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি যাওয়ার উপায় ও খরচ:

১. বাসে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি।
  • খরচ: এক দিকের বাস টিকেটের দাম সাধারণত ১২০০-২০০০ টাকা হতে পারে, বাসের ধরণ (নন-এসি, সেমি-এসি, এসি) অনুযায়ী।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ৮-৯ ঘণ্টা।

২. ট্রেনে যাত্রা (ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম) এবং তারপর বাসে রাঙ্গামাটি

  • রুট: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, তারপর চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি।
  • খরচ:
    • ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেন: এক দিকের টিকেটের দাম সাধারণত ৫০০-১০০০ টাকা হতে পারে, ট্রেনের ক্লাস অনুযায়ী।
    • চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি বাস: এক দিকের বাস টিকেটের দাম সাধারণত ৩০০-৫০০ টাকা।
  • যাত্রার সময়: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা, তারপর চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি বাসে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • ট্রেনের টিকেট: ট্রেনের টিকেট আগে থেকে বুকিং করা ভালো, বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা ছুটির মৌসুমে।
  • বাসের তথ্য: ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে, যেমন শ্যামলী, হানিফ, ও অন্যান্য।
  • বাসের সময়সূচী: রাঙ্গামাটি যাওয়ার বাস সাধারণত সকাল এবং দুপুরে চলে, তাই আগেই বাসের সময়সূচী দেখে পরিকল্পনা করা উচিত।

 

৬. সোনারগাঁও: প্রাচীন বাংলার রাজধানী

সোনারগাঁও বাংলাদেশের প্রাচীন রাজধানী এবং এটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা যেমন গোল্ডেন হাউজ এবং মন্দির রয়েছে। সোনারগাঁওয়ে এসে আপনি বাংলার ইতিহাস এবং সংস্কৃতির একটি অংশ দেখতে পারবেন। “সোনারগাঁও রিসোর্ট” এবং “হোটেল সোনারগাঁও” এখানকার প্রধান হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে। 

ঢাকা থেকে সোনারগাঁও যাওয়ার উপায় ও খরচ:

১. বাসে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে সোনারগাঁও।
  • খরচ: এক দিকের বাস টিকেটের দাম সাধারণত ২০০-৪০০ টাকা হতে পারে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১.৫-২ ঘণ্টা।

২. প্রাইভেট কারে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে সোনারগাঁও।
  • খরচ: প্রাইভেট কারের ভাড়া প্রায় ২০০০-৩০০০ টাকা হতে পারে, গাড়ির ধরন এবং ব্যবহারের সময়ের উপর নির্ভর করে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১-১.৫ ঘণ্টা।

৩. রিকশা বা অটো রিকশায় যাত্রা

  • রুট: ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে সোনারগাঁও পর্যন্ত রিকশা বা অটো রিকশায় যাওয়া যেতে পারে।
  • খরচ: প্রায় ৮০০-১৫০০ টাকা হতে পারে, রিকশার ধরন এবং দূরত্বের উপর নির্ভর করে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১.৫-২ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • বাসের তথ্য: ঢাকা থেকে সোনারগাঁওয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে, বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বাসগুলির মধ্যে।
  • কার ভাড়া: প্রাইভেট কার ভাড়া করার ক্ষেত্রে স্থানীয় গাড়ি চালক বা ভাড়া নির্ধারণকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
  • রিকশার তথ্য: রিকশা বা অটো রিকশার ক্ষেত্রে আগে থেকে দরদাম করে নেয়া উচিত, বিশেষ করে বাসস্ট্যান্ড বা ট্রেন স্টেশন থেকে যাত্রার সময়।

 

৭. কুয়াকাটা: সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের শহর

কুয়াকাটা, বাংলাদেশের এক সুন্দর সৈকত শহর, যেখানে আপনি একসাথে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। এখানকার মেঘমুক্ত পরিবেশ এবং বিশুদ্ধ সমুদ্রের জল পর্যটকদের মুগ্ধ করে। কুয়াকাটার প্রধান হোটেলগুলির মধ্যে “সানডাইভ হোটেল” এবং “কুয়াকাটা প্যালেস” রয়েছে। 

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায় ও খরচ:

১. বাসে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে কুয়াকাটা।
  • খরচ: এক দিকের বাস টিকেটের দাম সাধারণত ১২৫০-২০০০ টাকা হতে পারে, বাসের ধরণ (নন-এসি, সেমি-এসি, এসি) অনুযায়ী।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১২-১৫ ঘণ্টা।

২. প্রাইভেট কারে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে কুয়াকাটা।
  • খরচ: প্রাইভেট কারের ভাড়া প্রায় ১৫০০০-২৫০০০ টাকা হতে পারে, গাড়ির ধরন এবং ভাড়া নির্ধারণকারী সংস্থার উপর নির্ভর করে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • বাসের তথ্য: ঢাকা থেকে কুয়াকাটার জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে, যেমন শ্যামলী, হানিফ, ও অন্যান্য। বাসের সময়সূচী এবং টিকেট বুকিং আগেই দেখে নেওয়া উচিত।
  • প্রাইভেট কার: প্রাইভেট কার ভাড়া করার ক্ষেত্রে স্থানীয় গাড়ি চালক বা গাড়ি ভাড়া সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে ভাড়া নিশ্চিত করা উচিত।
  • মৌসুম: পর্যটন মৌসুমে (শীতকাল) বাসের টিকেট আগেই বুকিং করা উত্তম, কারণ এই সময় ভিড় বেশি থাকে।

৮. বগুড়া মহাস্থানগড়: বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের প্রাচীনতম শহর এবং প্রথম রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন মন্দির, বৌদ্ধ বিহার এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। প্রতি বছর বহু পর্যটক এখানে আসেন প্রাচীন বাংলার ইতিহাস এবং সংস্কৃতি জানার জন্য। 

ঢাকা থেকে বগুড়া মহাস্থানগড় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন যাতায়াতের উপায় এবং খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য:

ঢাকা থেকে বগুড়া মহাস্থানগড় যাওয়ার উপায় ও খরচ

১. বাসে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে বগুড়া।
  • খরচ: এক দিকের বাস টিকেটের দাম সাধারণত ৫০০-৮০০ টাকা হতে পারে, বাসের ধরণ (নন-এসি, সেমি-এসি, এসি) অনুযায়ী।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা।

২. ট্রেনে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে বগুড়া।
  • খরচ: ঢাকা থেকে বগুড়া ট্রেনের টিকেটের দাম সাধারণত ৪০০-৭০০ টাকা হতে পারে, ট্রেনের ক্লাস অনুযায়ী।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা।

৩. প্রাইভেট কারে যাত্রা

  • রুট: ঢাকা থেকে বগুড়া।
  • খরচ: প্রাইভেট কারের ভাড়া প্রায় ৮০০০-১২০০০ টাকা হতে পারে, গাড়ির ধরন এবং ব্যবহারের সময়ের উপর নির্ভর করে।
  • যাত্রার সময়: প্রায় ৫-৭ ঘণ্টা।

মহাস্থানগড় পৌঁছানো:

  • বগুড়া থেকে মহাস্থানগড়:
    • যাতায়াত: বগুড়া শহর থেকে মহাস্থানগড় পৌঁছানোর জন্য বাস, রিকশা, বা অটো রিকশা ব্যবহার করা যেতে পারে।
    • খরচ: এক দিকের ভাড়া সাধারণত ১০০-২০০ টাকা হতে পারে।
    • যাত্রার সময়: প্রায় ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • বাসের তথ্য: ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে, যেমন শ্যামলী, হানিফ, ও অন্যান্য। বাসের সময়সূচী এবং টিকেট বুকিং আগেই দেখে নেওয়া উচিত।
  • ট্রেনের তথ্য: ট্রেনের টিকেট আগে থেকে বুকিং করা উত্তম, বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা ছুটির মৌসুমে।
  • প্রাইভেট কার: প্রাইভেট কার ভাড়া করার ক্ষেত্রে স্থানীয় গাড়ি চালক বা গাড়ি ভাড়া সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে ভাড়া নিশ্চিত করা উচিত।

 

৯. সাজেক ভ্যালি: পাহাড়ের রানি

সাজেক ভ্যালি, বাংলাদেশের অন্যতম পাহাড়ি এলাকা, যা প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য প্রদান করে। এখানে পাহাড়, মেঘ এবং নদী মিলেমিশে এক নান্দনিক দৃশ্য সৃষ্টি করে। সাজেক ভ্যালির আদিবাসী জনগণের জীবনযাত্রাও একটি বিশেষ আকর্ষণ। “সাজেক ভ্যালি রিসোর্ট” এবং “সাজেক হিল রিসোর্ট” এই এলাকায় প্রধান হোটেলগুলির মধ্যে রয়েছে। 

ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি পৌঁছানোর জন্য কয়েকটি ধাপে যাত্রা করতে হয়। সরাসরি পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায়, আপনাকে ঢাকা থেকে প্রথমে খাগড়াছড়ি এবং তারপর সাজেক ভ্যালিতে যেতে হবে। এখানে ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায় ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:

ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায় ও খরচ

১. ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি

  • বাসে যাত্রা:
    • রুট: ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি।
    • খরচ: এক দিকের বাস টিকেটের দাম সাধারণত ১২০০-২০০০ টাকা হতে পারে, বাসের ধরণ (নন-এসি, সেমি-এসি, এসি) অনুযায়ী।
    • যাত্রার সময়: প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা।
  • প্রাইভেট কারে যাত্রা:
    • রুট: ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি।
    • খরচ: প্রাইভেট কার ভাড়া প্রায় ১৫০০০-২৫০০০ টাকা হতে পারে, গাড়ির ধরন এবং ব্যবহারের সময়ের উপর নির্ভর করে।
    • যাত্রার সময়: প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা।

২. খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালি

  • জীপে যাত্রা:
    • রুট: খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালি।
    • খরচ: এক দিকের জীপ ভাড়া সাধারণত ২০০০-৩০০০ টাকা হতে পারে, যাত্রীর সংখ্যা এবং গাড়ির ধরন অনুযায়ী।
    • যাত্রার সময়: প্রায় ২-৩ ঘণ্টা।

সাধারণ নির্দেশিকা:

  • বাসের তথ্য: ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির বাসের জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে, যেমন শ্যামলী, হানিফ, ও অন্যান্য। বাসের সময়সূচী এবং টিকেট বুকিং আগেই দেখে নেওয়া উচিত।
  • জীপের তথ্য: খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার জন্য স্থানীয় জীপ সার্ভিস ব্যবহার করা হয়। ট্যুর অপারেটর বা স্থানীয় গাড়ি ভাড়া সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে ভাড়া নিশ্চিত করা উচিত।
  • মৌসুম: সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের জন্য শীতকাল (নভেম্বর থেকে মার্চ) সেরা সময়, কারণ এই সময়ে আবহাওয়া শান্ত থাকে এবং পর্যটক ভিড় কম থাকে।

 

উপসংহার: 

বাংলাদেশের এইসব দর্শনীয় স্থানগুলি আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ইতিহাসের এক অনন্য সম্মান বহন করে। প্রতিটি স্থান এক একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রদান করে যা আমাদের দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রমাণ। এই স্থানগুলি আমাদের গর্বের বিষয় এবং এটি দর্শনার্থীদের জন্য একটি অমূল্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

 

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করেছে । এখন থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে

ঢাকায় বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরাঘুরি করার মতো আকর্ষণীয় জায়গা

বাচ্চাদের জন্য সুন্দর স্মৃতি এবং আনন্দময় অভিজ্ঞতা তৈরি করা প্রতিটি বাবা-মায়ের লক্ষ্য। ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত এবং মনোরম জায়গা খুঁজে পাওয়া যদিও

সাজেক-খাগড়াছড়ি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলো

খাগড়াছড়ি ও সাজেকের পর্যটন কেন্দ্রগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে গেল ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি

বাংলাদেশ থেকে এক ভিসাতেই ২৬টি দেশ ভ্রমণের সুযোগ

বাংলাদেশ থেকে এক সেনজেন ভিসা নিয়ে ইউরোপের ২৬টি দেশ ভ্রমণের সুযোগ সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। সেনজেন ভিসা মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি ভিসা ব্যবস্থা,

Scroll to Top