নব্বইয়ের দশকে বাংলা চলচ্চিত্র এক চরম দুঃসময় পার করছিল। ঠিক তখনই এ দেশের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে সালমান শাহর। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাস। জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির কপিরাইট কিনে নেয় আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড। বলিউডের জনপ্রিয় ছবিটির আদলে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি নির্মাণের প্রস্তুতি নেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। তখনকার জনপ্রিয় মডেল ও আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন সালমান। প্রথম ছবি দিয়ে তিনি জয় করে নেন অগণিত ভক্ত-দর্শকের হৃদয়। রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেন ঢাকাই ছবির নির্ভরযোগ্য তারকা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা যেমন অসাধারণ ছিল, তেমনি তাঁর স্টাইল ও ফ্যাশন সচেতনতা যুগের চেয়েও অনেক এগিয়ে ছিল। সালমানের জনপ্রিয়তার পারদ এতটাই আকাশচুম্বী ছিল যে পরবর্তী সময়ে আর কোনো নায়কই সেই উচ্চতা অতিক্রম করতে পারেননি।
সালমানই একমাত্র নায়ক, সর্বমহলে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের হলে গিয়ে ছবি দেখার অনভ্যাস দূর করেছিলেন সালমান শাহ। সালমানকে তাঁরা প্রিয় নায়ক হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি মুক্তির পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রও যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। সালমানের ক্যারিয়ারে একের পর এক যোগ হতে থাকে সাফল্যের পালক। প্রথম ছবি থেকে শুরু করে শেষ ছবিটি পর্যন্ত সমানতালে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন সালমান শাহ। প্রথম ছবিতে মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও পরে শাবনূরের সঙ্গেও একটি সফল জুটি গড়ে ওঠে সালমানের। সালমান-শাবনূর জুটির একেকটি ছবি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সোনালি অতীত হয়ে আছে। এ ছাড়া সালমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি।
এ প্রজন্মের তারকাদের কাছেও প্রিয় একটি নাম। সবাই তাঁকে আজও খুঁজে বেড়ান। মাত্র ২৫ বছরের জীবন তাঁর। চার বছর কাজ করেছেন চলচ্চিত্রে। এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রেখে গেছেন অসাধারণ সব চলচ্চিত্র। বলা যায়, তাঁর সময়ে দেশের চলচ্চিত্রে নতুন একটি ধারার সূচনা হয়েছিল। চলচ্চিত্রে তাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল নিশ্চিত সাফল্য, প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। ব্যবসায়িক সাফল্য আর জনপ্রিয়তা—দুটিই সমানতালে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। অভিনয়ের স্বতন্ত্র ধারা আর ফ্যাশন সচেতনতা তাঁকে নিয়ে যায় ভিন্ন এক উচ্চতায়। হয়ে উঠেছিলেন নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ। পুরো নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। দেখতে দেখতে তাঁর মৃত্যুর দুই যুগ পেরিয়েছে। আজ তাঁর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।
অভিনয়ের মাধ্যমে সালমান শাহ যেমন সবাইকে মোহাবিষ্ট করে রাখতেন, ঠিক তেমনি অমায়িক ব্যবহারের জন্য পেয়েছিলেন অনেকেরই প্রশংসা। চলচ্চিত্রে সালমানের জনপ্রিয়তা যখন আকাশচুম্বী, ঠিক তখনই মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয় তাঁকে। ১৯৯৬ সালের আজকের দিনে হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর সংবাদে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল সবাই। সালমানের মৃত্যুর পরও এ দেশে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের কাছেও প্রিয় একটি নাম সালমান শাহ। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ক্ষণজন্মা এ মানুষ ২৭ বছর আগে চলে গেলেও চলচ্চিত্রানুরাগীদের কাছে আজও সালমান শাহ সবচেয়ে বেশি আলোচিত একটি নাম।