তোফাজ্জল নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে একজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা গেছে। তিনি হলেন হল ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগকারী উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক জালাল আহমেদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তোফাজ্জলকে নির্মম নির্যাতন করে শরীর থেকে মাংস খুলে নেয় নির্যাতনকারীরা।
হল সূত্রে জানা যায়, মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করে ঘটে এ ঘটনা। দুপুরে হলের মাঠে শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট খেলা চলাকালীন ৬টা মোবাইল চুরি হয়। পরে রাত ৮টার দিকে তোফাজ্জল হলে ঢুকলে তাকে ধরে ফেলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের ধারণা তিনিই চুরি করেছেন মোবাইল। তাকে অতিথিকক্ষে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং মারধর করেন শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। এরপর তাকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে আবারও অতিথিকক্ষে নেওয়া হয়। সেখানেই মূলত তাকে নির্যাতন করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হল গ্রুপে ৮টার সময় দেখি চোর ধরা পড়েছে। হলের গেস্ট রুমে গিয়ে দেখি চোর বসা। রুমে তখন প্রথমবর্ষ-দ্বিতীয় বর্ষের অনেক ছেলে ছিলেন। গেস্ট রুমে তাকে বেশি মারা হয়নি। ওখানে হালকা মারার পর ক্যান্টিনে নিয়ে আসে খাওয়ানোর জন্য। তারপর শুনি চোরকে এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি ওখানে গিয়ে দেখি ২০-২১, ২১-২২ ও ২২-২৩ সেশনের ব্যাচ। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ জন। ২০-২১ আর ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীরা খুব বেশি মেরেছে। দু-তিনজন মিলেই তাকে সেখানে মেরে ফেলেছে।’
শিক্ষার্থীরা জানান, সেখান থেকে তাকে মেইন বিল্ডিংয়ের গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাউজ টিউটররা তাকে প্রক্টোরিয়াল টিম ডেকে তুলে দিতে বলেন। কিন্তু তাদের কথা না শুনেই বরং শিক্ষকদেরই সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়।
ঘটনা জানিয়ে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এত মারলে কেউ বাঁচতে পারে না। তার মাংসগুলো পড়ে গেছে। গোপনাঙ্গেও প্রচুর আঘাত করা হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। তাদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। কেউ চুরি করতে এলেও তাকে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারও নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় হলের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হবে।