১৪ আগস্ট থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাঁচ দফা দাবিতে গত আন্দোলন করছেন। সরকার আন্দোলন থামাতে সচেষ্ট হলেও তাতে খোদ সমাজ কল্যাণ সচিব খায়রুল আলম সেখ ঘি ঢালছেন বলে অভিযোগ। দুই দফায় উপদেষ্টা কথা বলতে গেলেও সরাসরি কথা বলার পরিবেশ তৈরি করতে দেননি বরং নিজের অনুসারীদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা করে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে নিয়েছেন। এখনো পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে সচেষ্ট আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ওই সচিব।
অভিযোগ রয়েছে, এই সচিব হাসিনা সরকারের আমল থেকেই বেসরকারি প্রকল্প থেকে ১০ শতাংশ উৎকোচ নিতেন। সরকারি ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজের বাবার নামে হাসপাতাল করারও প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব থাকাকালীন মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে এস আলমের বিদেশে নাগরিকত্বের ‘নাগরিকত্ব নথি’ অনুমোদন করেন। পিরোজপুরের ডিসি থাকাকালীনও সরকারি খাসজমি ইজারাসহ নানা খাত থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার যে তালিকা করেছে, তার মধ্যে সচিব খায়রুল আলম সেখের নামও এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সচিব চান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঁচ দফা আন্দোলন জিইয়ে থাকুক বা আরও বড় আকার ধারণ করুক। তাতে উপদেষ্টাকে চাপে রেখে মন্ত্রণালয়ে নিজের দাপট ধরে রাখতে পারবেন। কারণ উপদেষ্টা নতুন হওয়ায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কে তেমন জানেন না। সচিব যা বলেন সে অনুযায়ী কাজ করেন। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো যথারীতি পদায়ন ও বদলিতেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পথ মসৃণ হবে।
সমাজসেবার কর্মকর্তারা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী এই সচিবের স্বপদে থাকা নিয়েই তো আমাদের প্রশ্ন। এরই মধ্যে নিজের চেয়ার পাকাপোক্ত করতে ষড়যন্ত্র করে যাওয়ার ব্যাপারে তো আমরা হতবাক! যে জায়গায় দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আন্দোলন থামানো হয়, সেখানে এই সচিব আন্দোলন উসকে দিচ্ছেন। যদিও জাগো নিউজের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন সচিব খাইরুল আলম সেখ।
৫ দফার আন্দোলন: সমাধান না করে উসকানি!
সমাজসেবা কর্মকর্তারা জানান, গত ১৪ আগস্ট ২০২৪ থেকে প্রেষণ বাতিল করে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের পরিচালক পদে পদায়ন, বিসিএস (সমাজসেবা) ক্যাডার সৃজন, বিভিন্ন পদের স্কেল আপগ্রেডেশন, প্রতিটি ধাপে ফিডার পদের অন্তত ৫০ শতাংশ পদোন্নতিযোগ্য পদ সৃজনসহ কর্মচারী পর্যায়ে সব বৈষম্য নিরসনে পাঁচ দফা দাবিতে সরব সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আন্দোলন থামাতে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ দুবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে সমাজসেবা অধিদপ্তরে যান। কিন্তু সচিব খাইরুল আলম সেখ কৌশলে আন্দোলনকারীদের উপদেষ্টার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে দেননি। বরং গণহারে সবার সঙ্গে সমাবেশের মতো কথা বলার পরিবেশ তৈরি করেন। সেখানে নিজের অনুসারীদের দিয়ে তৈরি করেন হট্টগোল। যে কারণে বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
এমনকি যেখানে উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী, সেখানে সচিব স্বৈরাচারী কায়দায় গণবদলির নীতি অনুসরণ করছেন। এরই মধ্যে একদিনে তিন অর্ডারসহ ২০ জন কর্মকর্তাকে হয়রানিমূলক বদলি ও কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। বদলির জন্য টার্গেট আরও শতাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গণবদলি করতে গিয়ে বেলায়েত মজুমদার নামে একজন সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বদলির বিষয়ে অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার অস্তিত্ব কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।’
অন্তত ডজনখানেক কর্মকর্তা জানান, অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাদের দমন করার জন্য ফ্যাসিবাদী কায়দায় বদলি করা হচ্ছে। যারাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান করবে তাদেরই কারণ দর্শানোসহ শাস্তিমূলক বদলি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে বদলি আতঙ্ক।
অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করতে এ কাজ সচিব খায়রুল আলম সেখ করছেন বলে অভিযোগ। ফলে সমাজকল্যাণ সচিবের অপকর্মের দায় সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার ওপর বর্তায়।
এস আলমের বিদেশি নাগরিকত্বের নথিতে স্বাক্ষর করেন এই সচিব!
জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সমাজকল্যাণ সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ অর্থপাচার, মানি লন্ডারিং ও ব্যাংক লুটে জড়িত এস আলম গ্রুপের বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং বাংলাদেশে ব্যবসার পথ উন্মুক্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব থাকাকালীন বাংলাদেশে তাদের সব নথি অনুমোদন করেন।
বিগত সরকারের প্রতি আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ ১১তম বিসিএস প্রশাসনের অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সুপারসিড করে ১৩তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এ কর্মকর্তাকে সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি শেখ রেহানার আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন বিধায় জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তাকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে পদোন্নতি দেওয়া হয় বলে গুঞ্জন আছে।