১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

পাসপোর্টের প্রচলন কেন হয়েছিল? 

প্রস্তাবনা
পাসপোর্ট এক ধরনের ভ্রমণ নথি, যা একজন ব্যক্তির জাতীয়তা এবং পরিচয় যাচাই করে। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু পাসপোর্টের প্রচলন কেন হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণে দেখা দিয়েছিল, যা ধীরে ধীরে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়।

 

প্রাচীন যুগে ভ্রমণ
প্রাচীনকালে মানুষ যখন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভ্রমণ করতো, তখন কোনো নির্দিষ্ট নথি বা পরিচয়পত্রের প্রয়োজন ছিল না। ভ্রমণের স্বাধীনতা ছিল সীমাবদ্ধ, তবে রাজ্য এবং সম্রাজ্যগুলোর মধ্যে ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ছিল। ভ্রমণকারীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল, যা রাজ্যগুলিকে তাদের সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ফলে, রাজ্যগুলোর প্রয়োজন পড়েছিল এমন একটি ব্যবস্থা, যা ভ্রমণকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করবে এবং ভ্রমণ নিরাপদ করবে।

 

আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব
আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গে পাসপোর্টের ধারণা আরও শক্তিশালী হয়। বিভিন্ন জাতি নিজেদের সীমান্তকে রক্ষা করতে চেয়েছিল এবং নাগরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাইছিল। রাজনৈতিকভাবে একটি দেশের ভেতরে এবং বাইরে লোকজনের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এর পাশাপাশি, অর্থনৈতিক কারণও ছিল—দেশগুলো তাদের সম্পদ এবং নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ভ্রমণকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে চেয়েছিল।

 

প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব

বিশ্বযুদ্ধের সময়, নিরাপত্তা ও ভ্রমণ সম্পর্কিত কড়াকড়ি আরও বেড়ে যায়। যুদ্ধের সময় শরণার্থী এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের চলাচলের উপর কড়া নিয়ম আরোপ করা হয়। যুদ্ধের পর, আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর ফলে, প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পাসপোর্ট ব্যবস্থাকে আরও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়, যাতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সহজ হয় এবং নিরাপত্তা বজায় থাকে।

 

আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি

১৯২০ সালে লিগ অফ নেশন্সের অধীনে প্রথমবারের মতো পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, ভ্রমণকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য পাসপোর্ট একটি বাধ্যতামূলক নথি হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল। এর ফলে, বিভিন্ন দেশ একসঙ্গে কাজ করে একটি বিশ্বব্যাপী পাসপোর্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যা আজকের দিনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রথম পাসপোর্ট কোথায় চালু হয়?

প্রথম আধুনিক পাসপোর্ট চালু হয় ইংল্যান্ডে। ১৫শ শতকে, ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি পঞ্চম আনুষ্ঠানিকভাবে পাসপোর্টের ধারণা প্রবর্তন করেন, যা ভ্রমণকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হত।

 

আধুনিক যুগে পাসপোর্টের ব্যবহার

বর্তমান সময়ে পাসপোর্ট ছাড়া আন্তর্জাতিক ভ্রমণ প্রায় অসম্ভব। পাসপোর্ট এখন শুধু পরিচয়পত্র নয়, বরং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বৈশ্বিক বিশ্বায়নের যুগে পাসপোর্টের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে, যেখানে মানুষ দ্রুত এবং সহজে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করছে। এছাড়াও, ডিজিটাল পাসপোর্টের ধারণা ভবিষ্যতে আরও জোরালোভাবে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে আরও সহজ করবে।

উপসংহার
পাসপোর্টের প্রচলন মূলত নিরাপত্তা, নাগরিক নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সহজ করার প্রয়োজন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। পাসপোর্ট ছাড়া আজকের বিশ্বে ভ্রমণ কল্পনা করা কঠিন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, পাসপোর্ট ব্যবস্থাও পরিবর্তিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও পরিবর্তন হতে থাকবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং নিরাপত্তার জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা চিরকালীন।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

বাংলাদেশের পাসপোর্টের ইতিহাস ও ধরন

বাংলাদেশের পাসপোর্টের ইতিহাস: বাংলাদেশের পাসপোর্টের ইতিহাস মূলত পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর, পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের অংশ ছিল, এবং

যতক্ষণ পর্যন্ত এই স্বৈরাচারের পতন না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এই টি-শার্ট খুলবো না: হাসনাত আব্দুল্লাহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে একেবারে শুরু থেকেই সামনের সারিতে ছিলেন। হাসনাত আব্দুল্লাহকে সেই শুরু থেকে এখন

ভিক্ষাবৃত্তি করেও আব্দুল মোত্তালিব বাঁচিয়ে রেখেছেন মানবিকতা

সুখের এক সংসার ছিল আব্দুল মোত্তালিবের। ছিল স্ত্রী, ২ মেয়ে, বাড়ী ঘর, সম্পদ। শুধু ছিলনা অভাব অনটন। সেই মোত্তালিব জীবনের সায়াহ্নে এসে হয়ে পড়েছেন –

Scroll to Top