গাজীপুরের শ্রীপুরে স্থানীয় বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ইসরাফিল নামে এক যুবককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে গরম পানি ঢেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার ১৩ দিন পর বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। নিহত যুবক পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। তিনি শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মো. নাসির উদ্দিনের ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন ইসরাফিল। সকাল ৭টার কিছু সময় পর এলাকার সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে স্থানীয় ব্যাপারীবাড়ি জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চান। পরে তাকে নিয়ে যায় শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে নিয়ে তার হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা হয়। তারপর চলে ব্যাটারি চুরির অপবাদে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়। পরে কোমরের নিচে ঢেলে দেওয়া হয় গরম পানি। এতে ইসরাফিলের দুই পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফোসকা পড়ে যায়। এ অবস্থায় নির্যাতনকারীরা তার বুকে, পেটে, পিঠে লাথি মারতে থাকে। এসময় ইসরাফিলের কাছে তার স্বজনরা যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ১৬ সেপ্টেম্বর কামরুল হাসান লিটন, বাবুল মন্ডল, শফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ইসরাফিলের বাবা। কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।
মূল অভিযুক্ত কামরুল হাসান লিটন (৫০) শৈলাট গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, কামরুল হাসান লিটনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন ইসরাফিলের ওপর নির্যাতন চালান।
নিহতের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ঘুমিয়ে থাকা আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায় তারা। পরে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে ছেলেকে কয়েক ঘণ্টা পেটায়। একপর্যায়ে তারা চায়ের দোকান থেকে গরম পানি নিয়ে আমার ছেলের ওপর ঢেলে দেয়। এতে কোমরের নিচ থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা পড়ে যায়। আমরা এত চেষ্টা করেছি তবুও নির্যাতনকারীদের মন গলাতে পারিনি। আমাদের দেখলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতো।
নিহতের শতবর্ষী দাদি মহরজান অভিযোগ করে বলেন, আমার নাতিকে বাড়ি থেকে স্কুলমাঠে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে। আমি কতবার যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু ওরা আমাকে বারবারই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত কামরুল হাসান লিটনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ইসরাফিলের ওপর চালানো নির্যাতন সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনেছি। নির্যাতনের শিকার ইসরাফিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা গেছে। তবে এ ঘটনায় কামরুল হাসান লিটন আমাকে কিছু জানায়নি।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাক আহমেদ জানান, ইসরাফিল নামে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। স্বজনদের আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পূর্বের দেওয়া লিখিত অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে।