২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আন্দোলনে নিহত নুর আলমের পরিবার সহযোগিতা পেলেও বঞ্চিত স্ত্রী-সন্তান

গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়ে নুর আলম গাজীপুর হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। স্বজনরা ২১ জুলাই নুর আলমের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।

পেশায় রাজমিস্ত্রী নুর আলম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগঙাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া গ্রামের মো. আমীর হোসেন ও নুর বানু বেগম দম্পতির বড় ছেলে। বাবা ভ্যানচালক, মা পোশাক শ্রমিক। গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নিহত নুর আলম।

এরইমধ্যে নুর আলমের মৃত্যুর আড়াই মাস পর স্ত্রী খাদিজার কোলজুড়ে এসেছে পুত্রসন্তান মো. আব্দুল খালেক। একদিকে নুর আলমের মৃত্যুর খবরে তার পরিবারের প্রতি সরকারি, বেসরকারি ও রাজনৈতিকভাবে অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে নুর আলমের স্ত্রী খাদিজার অভিযোগ স্বামীর মৃত্যুর পর গর্ভকালীন অবস্থায় তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ি। এখন তারা তার সন্তানের খোঁজও রাখেন না। ফলে নিজের ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সদ্য স্বামীহারা খাদিজা। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নুর আলমের বাবা।

নুর আলমের স্ত্রী মোছা. খাদিজা খাতুন বলেন, ঘটনার দিন সকালে উঠে আমার স্বামী বাইরে এসেছিল। দুপুরের পর শুনি সে গুলিতে মারা গেছে। দৌড়ে এসে দেখি আমার স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওইদিন রাতেই স্বামীর মরদেহ নিয়ে গ্রামে চলে আসি। অল্প বয়সে আমি স্বামী হারিয়েছি। এই কষ্ট বোঝাতে পারবো না। আমার ভবিষ্যৎ কী হবে জানি না। তবে আমার ভবিষ্যৎ এখন নুর আলমের রেখে যাওয়া আমানত ছেলে আব্দুল খালেক। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। জানি না কপালে কী আছে?

তিনি বলেন, স্বামী হারানোর শোক যে কী, যে স্বামী হারিয়েছে সেই জানে। এতকিছুর মাঝে আমি আরও বড় আঘাত পেয়েছি নুর আলম মারা যাওয়ার ৪৪ দিনের মাথায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে বিনা কারণে স্বামীর ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। গর্ভবতী অবস্থায় আমার শ্বশুর আমার হাত ধরে বের করে দেন। আমি পাশের বাড়িতে রাত পার করে আমার বাবাকে ফোন দিই। পরদিন বাবা আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আজ ছেলে জন্ম হওয়ার ২১ দিন, তবু ওরা আমার আর সন্তানের খোঁজ নেয়নি। এমনকি সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে গেলে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার নওয়াবুরকে দিয়ে নাম পাল্টানোর চেষ্টা করে। চৌকিদার যোগসাজশ করে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমার শ্বশুরের হাতে দিয়ে আসে। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগিতা করছে। সেই টাকার খবর যাতে আমি না শুনি, এ কারণে পরিকল্পিতভাবে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

খাদিজা খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। আমি আমার সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করছি।

অপরদিকে নুর আলমের বাবা মো. আমীর হোসেন বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে নুর আলমকে হারিয়ে আমরা ভালো নেই। সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা আসতেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ১০ লাখ টাকার চেক পেয়েছি। তবে সেই টাকা এখনো ওঠাতে পারিনি। জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ হাজার, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৫ হাজারসহ অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও আশ্বাস ও সহযোগিতা পাঠাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার নাতি ও ছেলের বউ খাদিজা বর্তমানে ওর বাবার বাসায় আছে। তার সঙ্গে আমরা কোনো ঝগড়া বিবাদ করিনাই। সে নিজ ইচ্ছায় ওর বাবার বাসায় চলে গেছে।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

আ.লীগের ৬ নেতাকর্মী চিন্ময়ের মুক্তি দাবিতে মিছিল থেকে আটক

পুলিশ চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবিতে মিছিলের প্রস্তুতিকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে । মঙ্গলবার রাতে নগরীর পাহাড়তলীর সরাইপাড়া এলাকা থেকে

শান্তিনগর থেকে অহিংস গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক মাহবুবুল আলম গ্রেফতার

রাজধানীর শাহবাগে ‘বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে, এজন্য শাহবাগে বিশাল সমাবেশে জড়ো হতে হবে’-এমন কথা বলে লক্ষাধিক

নিজ বাড়িতে ফিরতে চাই: তুরিন আফরোজের মা

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে বাড়ি দখল ও সন্ত্রাসী ভাড়া করে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে তার মা শামসুন্নাহার তসলিম নিজের নাগরিক অধিকার এবং বাড়ি ফিরে পাওয়ার

দুই কলেজের সংঘর্ষে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ রণক্ষেত্র

কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে । এ ঘটনার পর মোল্লা

Scroll to Top