২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কার সঙ্গে বিয়ে হবে: ভাগ্যের খেলা নাকি নিজের সিদ্ধান্ত?

বিয়ে প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আবেগপ্রবণ অধ্যায়। বহু ধর্ম, সংস্কৃতি এবং সমাজে একটি সাধারণ বিশ্বাস রয়েছে যে কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে, সেটি পূর্ব নির্ধারিত। কিন্তু আসলেই কি এমনটা সত্য? ভাগ্য, নিয়তি এবং মানুষের নিজের সিদ্ধান্ত—এই তিনটি দিক থেকে এই প্রশ্নের বিশ্লেষণ করা যায়।

ভাগ্যের ধারণা

অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, মানুষের জীবনপথের মতো বিয়েও ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। ধর্মীয়ভাবে এ ধারণাটি অনেক পুরনো। হিন্দুধর্মে “লগ্নফল” বা “কুণ্ডলী মিলানো”র মাধ্যমে এই বিশ্বাসকে ভিত্তি দেয়া হয়, যা বলে যে দুইজনের জ্যোতিষশাস্ত্রের নির্দিষ্ট সময়ে জন্ম তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। ইসলাম ধর্মেও আল্লাহ্‌র ইচ্ছা এবং পূর্বনির্ধারিত ভাগ্যের উপর বিশ্বাস আছে, যেখানে মনে করা হয় যে কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে।

মানুষের সিদ্ধান্ত

যদিও ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হওয়ার একটি প্রবণতা আছে, বাস্তবে বিয়ে সম্পূর্ণভাবে মানুষের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। বর্তমান সমাজে, বিয়ে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ভালোবাসা, সমঝোতা, এবং ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে। বিয়ে শুধুমাত্র একটি সম্পর্ক নয়, এটি একটি পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন। তাই বিয়ে সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোতে মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটও বড় ভূমিকা পালন করে।

পূর্বনির্ধারিত নাকি মানুষ নিজের ভাগ্য গড়ে?

বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, এটি বলা কঠিন যে সবকিছু পূর্বনির্ধারিত। অনেক সময় ভাগ্যের উপর বিশ্বাস রেখে কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে, আবার কিছু সময় মানুষ তার নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়। মানুষের জীবন একটি মিশ্রণ—কিছু অংশ ভাগ্যের এবং কিছু অংশ নিজের প্রচেষ্টার ফলাফল।

বিয়ে এবং সম্পর্কের উপর ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি: কিছু হাদিস এবং কোরআনিক আয়াত

ইসলামে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত প্রতিষ্ঠান। এটি শুধুমাত্র দুইজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক নয়, বরং এটি পারিবারিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু কোরআনিক আয়াত এবং হাদিস উল্লেখ করা হলো যা বিয়ের গুরুত্ব এবং সম্পর্কের আদর্শ উপস্থাপন করে।

কোরআনিক আয়াত

  1. সুরা আল-রুম (30:21): “এবং তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকে জীবনসঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের সঙ্গে শান্তি ও সান্ত্বনা পেতে পারো।”
    এই আয়াতে আল্লাহ স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে শান্তি এবং সান্ত্বনার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

  2. সুরা আল-বাকারা (2:221): “তোমরা আল্লাহর পথে বিয়ে করো এবং তারা (অবিশ্বাসীরা) তোমাদের মধ্যে থেকে অবিশ্বাসীদের বিয়ে করো না।”

    এই আয়াতটি মুসলিমদের মধ্যে বিয়ের সম্পর্কের গুরুত্ব এবং ইসলামের নির্দেশাবলী অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়।

হাদিস

  1. হাদিস নাসাই: “বিয়ে আমার সুন্নাত, এবং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরোধিতা করে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।”

    সূত্র: এই হাদিসটি সুনান ইবনে মাজাহ (Hadith No. 1845) এবং জামে আত-তিরমিজি (Hadith No. 1081) থেকে নেওয়া হয়েছে।

    নবী মুহাম্মদ (সা.) এর এই হাদিসটি বিয়ের গুরুত্ব এবং এটি ইসলামী জীবনধারার একটি অপরিহার্য অংশ।

  2. হাদিস মুসলিম: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে। কেননা, এটি চোখকে নিচু রাখে এবং লজ্জা রক্ষা করে।”

    সূত্র: এই হাদিসটি সাহিহ মুসলিম (Hadith No. 1400) থেকে নেওয়া হয়েছে।

    এখানে বিয়ের মাধ্যমে নৈতিকতা ও চারিত্রিক গুণাবলীর রক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

ফাতওয়া

ইসলামী ফিকহে বিয়েকে একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফাতওয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, যারা বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত একটি সম্পর্ক গঠন করতে চান, তাদের অবশ্যই এটি আল্লাহর ইচ্ছার সাথে মেনে চলা উচিত। বিয়ে করা শুধু দুটি মানুষের মিলন নয়, বরং এটি পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব।

উপসংহার

কার সঙ্গে বিয়ে হবে তা কি সম্পূর্ণভাবে নির্ধারিত? এর উত্তর পুরোপুরি সাদা-কালো নয়। অনেকেই মনে করেন, কিছুটা নিয়তি, কিছুটা নিজের ইচ্ছা এবং জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা—এই সব মিলে বিয়ের সিদ্ধান্ত আসে। ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হলেও, মানুষ তার নিজের জীবন গড়ার ক্ষমতাও রাখে, এবং বিয়ে সে নিজেই নির্বাচন করে।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

পাসপোর্টের প্রচলন কেন হয়েছিল? 

প্রস্তাবনা পাসপোর্ট এক ধরনের ভ্রমণ নথি, যা একজন ব্যক্তির জাতীয়তা এবং পরিচয় যাচাই করে। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য উপাদান।

বাংলাদেশের পাসপোর্টের ইতিহাস ও ধরন

বাংলাদেশের পাসপোর্টের ইতিহাস: বাংলাদেশের পাসপোর্টের ইতিহাস মূলত পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর, পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের অংশ ছিল, এবং

যতক্ষণ পর্যন্ত এই স্বৈরাচারের পতন না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এই টি-শার্ট খুলবো না: হাসনাত আব্দুল্লাহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে একেবারে শুরু থেকেই সামনের সারিতে ছিলেন। হাসনাত আব্দুল্লাহকে সেই শুরু থেকে এখন

ভিক্ষাবৃত্তি করেও আব্দুল মোত্তালিব বাঁচিয়ে রেখেছেন মানবিকতা

সুখের এক সংসার ছিল আব্দুল মোত্তালিবের। ছিল স্ত্রী, ২ মেয়ে, বাড়ী ঘর, সম্পদ। শুধু ছিলনা অভাব অনটন। সেই মোত্তালিব জীবনের সায়াহ্নে এসে হয়ে পড়েছেন –

Scroll to Top