১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

শিশুদের শাসনে ইসলামের সীমারেখা: কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা

ইসলামে শিশুদের লালন-পালন ও শিক্ষাদানের জন্য বিশেষ দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিশুদের শাসন বা শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে, যা পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্দেশনাগুলোতে শিশুদের প্রতি ন্যায়বিচার, ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ধৈর্য প্রদর্শনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এখানে কুরআন, হাদিস এবং ফতোয়ার আলোকে ইসলামের দৃষ্টিতে শিশুদের শাসনের সঠিক পন্থাগুলো তুলে ধরা হলো।

কুরআন ও শিশুদের শাসন

কুরআনের নির্দেশনায় শিশুদের শাসনের সময় সদয় ও ন্যায়বিচারের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে বলেন:

“হে মুমিনগণ! তোমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।”
(সূরা আত-তাহরীম, আয়াত ৬)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, পিতা-মাতার দায়িত্ব হল সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করা এবং তাদের শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য যথাযথভাবে শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু এ শাসনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সদয় ও ধৈর্যশীল হওয়া জরুরি।

হাদিসে শিশুদের শাসনের দিকনির্দেশনা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের প্রতি অত্যন্ত সদয় ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি শিখিয়েছেন যে, সন্তানদের শাসনের ক্ষেত্রে কোমলতা ও মমতা প্রদর্শন করতে হবে। এক হাদিসে তিনি বলেন:

“তোমরা তোমাদের সন্তানদের প্রতি সদয় হও এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর।”
(তিরমিজি)

এছাড়াও, রাসূলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন যে ১০ বছর বয়সে যদি সন্তান নামাজ আদায় না করে, তবে তাদের শাসন করতে বলা হয়েছে। তবে শাস্তির মাত্রা যেন সীমা অতিক্রম না করে এবং শারীরিক বা মানসিক কষ্ট না দেয়। হাদিসে এসেছে:

“তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের আদেশ দাও এবং দশ বছর বয়সে তা না পড়লে তাদের শাসন করো।”
(আবু দাউদ)

ইসলামী ফতোয়া: শাসনের সীমারেখা

ইসলামের ফতোয়াগুলোতে শিশুদের শাসনের ক্ষেত্রে শরিয়ার নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। ইসলামী আইন অনুযায়ী, শিশুদের শাসনে কিছু নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে, যেমন:

  1. শারীরিক আঘাত করা হারাম: ইসলাম শারীরিক শাস্তি বা আঘাতকে নিরুৎসাহিত করে। যদি শাস্তি দিতেই হয়, তাহলে তা এমন হতে হবে যা শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক আঘাত সৃষ্টি না করে।

  2. অপমান না করা: শিশুদের সম্মানহানি করা বা তাদের মানসিকভাবে কষ্ট দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না।

  3. শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে শাসন: ইসলামে শাসনের উদ্দেশ্য হল শিক্ষাদান, শাস্তি নয়। শাস্তির মাধ্যমে কোনো দোষ সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে, তবে তা যেন শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমেই হয়।

উপসংহার

ইসলামে শিশুদের শাসনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের কোমলতা, ধৈর্য ও ন্যায়বিচারের আদর্শ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কুরআন, হাদিস এবং ফতোয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী, শিশুদের শাসন করতে হবে ভালোবাসা ও দয়ার সাথে, যেন তারা সঠিক পথে পরিচালিত হয়। শাসনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কঠোরতা, শারীরিক বা মানসিক আঘাতের আশ্রয় নেওয়া যাবে না। ইসলামে শাসনের মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের সঠিকভাবে শিক্ষিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা, যাতে তারা পরিণত বয়সে একজন সৎ ও ধার্মিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

বরিশালের উজিরপুরে মাত্র ৭ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন আব্দুল্লাহ

উজিরপুর প্রতিনিধিঃ বরিশালের উজিরপুরে মারকাযুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদ্রাসায় মাত্র ৭ মাসে পবিত্র কুরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এ উপলক্ষে সংবর্ধনা

আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুর রহমান রহঃ – এক স্মরণীয় আলেম ও শিক্ষাবিদ

আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুর রহমান রহঃ ছিলেন ফটিকছড়ির শীর্ষস্থানীয় আলেম ও ইসলামের একনিষ্ঠ খাদেম। তিনি শুধু একজন মুহতামিম ও শিক্ষকই ছিলেন না, বরং দ্বীনের সঠিক দিশা

অশ্রু যখন মুমিনের অস্ত্র—প্রভুর ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয়ের নিবেদন

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান এক ফোঁটা অশ্রু, যা একান্তে প্রভুর সামনে গড়িয়ে পড়ে, তা পৃথিবীর সমস্ত অমূল্য রত্নের চেয়েও বেশি মূল্যবান। এই অশ্রু কেবল

বাকৃবিতে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে গণ-ইফতার ও ৫০০ কোরআন বিতরণ

আরাফাত হোসাইন, বাকৃবি প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ইসলামী ছাত্রশিবির রমজান উপলক্ষে ধারাবাহিক গণ-ইফতারের আয়োজন করেছে। সাত দিনে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে ইফতার পরিবেশন করা

Scroll to Top