২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

প্রবাস থেকে ফিরে বায়োগ্যাস তৈরি করে এলাকায় বিক্রি করছেন বিল্লাল মিয়া

বায়োগ্যাস কী এবং এটি কীভাবে তৈরি হয়? বায়োগ্যাস একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস, যা মূলত মিথেন (CH₄) এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) নিয়ে গঠিত, যা জৈব পদার্থের অক্সিজেন ছাড়াই ভাঙনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় (অ্যানেরোবিক ডাইজেশন)। এটি একটি টেকসই বিকল্প যা জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমায়, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিকভাবে উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।

বায়োগ্যাস উৎপাদন কেবল শক্তি প্রদান করে না, এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ জৈব সার উৎপাদনের কাজও করে।

বায়োগ্যাস কী?

বায়োগ্যাস হল বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, যা পশু বর্জ্য, উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ এবং নর্দমার পচনশীল বর্জ্যের মতো জৈব উপাদানগুলোর বায়োলজিক্যাল ভাঙ্গনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। এর মূল উপাদানগুলো হল: মিথেন (CH₄): সাধারণত গ্যাসের ৫০-৭৫% থাকে, যা এটিকে মূল্যবান শক্তির উৎস করে তোলে। কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂): প্রায় ২৫-৫০% থাকে, এবং এটি দাহ্য না হলেও গ্যাসের ভারসাম্যে ভূমিকা রাখে।

অন্যান্য গ্যাস: সামান্য পরিমাণ হাইড্রোজেন সালফাইড (H₂S), অ্যামোনিয়া (NH₃), এবং নাইট্রোজেন (N₂) উপস্থিত থাকতে পারে।

মিথেনের উপস্থিতি, যা দাহ্য, বায়োগ্যাসকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। এটি তাপ উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বায়োগ্যাস কীভাবে তৈরি হয়? বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি অ্যানেরোবিক ডাইজেশন নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়া অক্সিজেনের অভাব বা সীমিত পরিসরে স্বাভাবিকভাবে ঘটে, যেমন জলাভূমি বা পশুদের হজম প্রক্রিয়ায়। বায়োগ্যাস উৎপাদন প্ল্যান্টগুলোতে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত হয়, যাতে সর্বাধিক গ্যাস উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়।

বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রধান ধাপসমূহ: ফিডস্টক সংগ্রহ: বায়োগ্যাস উৎপাদন ফিডস্টক সংগ্রহের মাধ্যমে শুরু হয়। ফিডস্টক হিসেবে জৈব পদার্থ যেমন কৃষি বর্জ্য, পশু মল, নর্দমা বর্জ্য, খাবারের অবশিষ্টাংশ এবং উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ ব্যবহৃত হয়। ফিডস্টকের গুণমান এবং গঠন বায়োগ্যাস উৎপাদনের কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে। যত বেশি জৈব ও পচনশীল উপাদান থাকবে, তত বেশি গ্যাস উৎপাদন হবে।

প্রাক-প্রক্রিয়াকরণ: কখনও কখনও ফিডস্টক প্রাক-প্রক্রিয়াকরণের মধ্য দিয়ে যায়, যাতে জটিল জৈব যৌগগুলো ভেঙে যায় এবং ডাইজেশন প্রক্রিয়া উন্নত হয়।

উদাহরণস্বরূপ, কৃষি বর্জ্য ছোট ছোট টুকরো করে, মিশিয়ে বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে একটি সমজাতীয় মিশ্রণ তৈরি করা হয়, যা হজম করা সহজ হয়।

অ্যানেরোবিক ডাইজেশন: বায়োগ্যাস উৎপাদনের মূল প্রক্রিয়া হল অ্যানেরোবিক ডাইজেশন, যা অক্সিজেনবিহীন বড় বড় ট্যাংকে, যাকে ডাইজেস্টার বলা হয়, ঘটে। এই ডাইজেস্টারগুলোতে অণুজীবগুলো জৈব পদার্থগুলোকে ভাঙে।

প্রক্রিয়াটি চারটি পর্যায়ে বিভক্ত:

হাইড্রোলাইসিস: এই প্রথম পর্যায়ে, জটিল জৈব যৌগ যেমন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং চর্বি ভেঙে সহজ, দ্রবণীয় অণু যেমন চিনি, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফ্যাটি অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়।

অ্যাসিডোজেনেসিস: এই পর্যায়ে, অ্যাসিডোজেনিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দ্রবণীয় অণুগুলো আরও ভেঙে ভোলাটাইল ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যালকোহল, হাইড্রোজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন করে।

অ্যাসিটোজেনেসিস: ভোলাটাইল ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যালকোহলগুলো অ্যাসিটোজেনিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অ্যাসিটিক অ্যাসিড, হাইড্রোজেন এবং আরও বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইডে রূপান্তরিত হয়।

মিথানোজেনেসিস: এই শেষ পর্যায়ে, মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিটিক অ্যাসিড, হাইড্রোজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডকে মিথেন এবং পানিতে রূপান্তরিত করে। এই পর্যায়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মিথেন বায়োগ্যাসের প্রধান উপাদান।

বায়োগ্যাস সংগ্রহ: অ্যানেরোবিক ডাইজেশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর, উৎপন্ন বায়োগ্যাস সংগ্রহ করা হয়। গ্যাসটি সরাসরি গরম এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়, অথবা এটি আরও বিশুদ্ধ করা যায় যাতে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইড অপসারণ করা যায়। এই বিশুদ্ধ গ্যাসকে বায়োমিথেন বলা হয়, যা প্রাকৃতিক গ্যাস গ্রিডে সংযুক্ত করা বা যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

৩৬শে জুলাই গণঅভ্যুথানের পর সড়কে Zen-Z এর অবদান

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া আন্দোলনগুলো ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত ছিল। এই আন্দোলনগুলো দেশের জনগণের

জুলাই-আগষ্টে নিহত সকল শহীদদের স্মরণে

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া আন্দোলনগুলো ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত ছিল। এই আন্দোলনগুলো দেশের জনগণের

Scroll to Top