১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

কবর জিয়ারতের আদব ও দোয়া: ইসলামের সুন্নত

ইসলামে কবর জিয়ারত একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি আমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করায় এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেয়। কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আমরা মৃতদের জন্য দোয়া করতে পারি এবং নিজেদের জীবনের সাময়িকতাকে উপলব্ধি করতে পারি। ইসলামে কবর জিয়ারতের কিছু আদব, নিয়ম এবং হাদিস রয়েছে যা মেনে চলা উচিত।

কবর জিয়ারতের সঠিক নিয়ম:

কবর জিয়ারতে যাওয়ার আগে নিয়ত ঠিক করতে হবে। উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মৃত্যুর কথা স্মরণ করা এবং মৃতদের জন্য দোয়া করা। কবরস্থানে পৌঁছেই কবরবাসীদের সালাম দেওয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা কবর জিয়ারত করো, কেননা তা তোমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।” (মুসলিম শরীফ, হাদিস নম্বর ৯৭৬)

কবরস্থানে পৌঁছে এ দোয়া পড়া উচিত:
“আস-সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবূর,”
যার অর্থ: “হে কবরবাসীরা, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” এরপর মৃতদের মাগফিরাত ও শান্তির জন্য দোয়া করা হয়। এর পাশাপাশি, কুরআন থেকে কিছু অংশ তেলাওয়াত করা যেতে পারে, যেমন সুরা ফাতিহা, সুরা ইয়াসিন, সুরা ইখলাস ইত্যাদি।

দোয়া এবং তেলাওয়াত:

রাসূলুল্লাহ (সা.) কবর জিয়ারতের সময় এ দোয়া পড়তেন:
“আস-সালামু আলাইকুম দারা কওমিন মু’মিনিন, ওয়া ইন’না ইন্না ইংশা আল্লাহু বেকুম লা’হিকুন। নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আ’ফিয়া।” (মুসলিম শরীফ)

এর অর্থ: “হে মুমিনদের ঘরবাসীরা! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরাও তোমাদের সাথে যোগ দেবো। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করি।”

এছাড়াও, কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়া উত্তম:
“আল্লাহুম্মাগফির লি ওয়ালিহি ওয়া লি-মাওতানা ওয়াল-মাওতাল মুসলিমিনা আজমাইন”
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে এবং তাকে ক্ষমা করুন, আমাদের মৃতদের ও সকল মুসলিম মৃতদের ক্ষমা করুন)।

হাদিসে কবর জিয়ারতের গুরুত্ব:

রাসূলুল্লাহ (সা.) কবর জিয়ারত করার পরামর্শ দিয়েছেন কারণ এটি আমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করে তোলে। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, “প্রথমে আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো, কারণ কবর জিয়ারত তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।” (তিরমিজি)

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  1. মৃতদের জন্য দোয়া করা: কবর জিয়ারতের সময় মৃতদের জন্য দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মৃত ব্যক্তি কেবল তার সন্তান, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুদের দোয়ার মাধ্যমে লাভবান হয়।” (বুখারি)

  2. নিজের পরকালের প্রস্তুতি: কবর জিয়ারত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই দুনিয়া অস্থায়ী এবং আমাদের আসল লক্ষ্য হলো আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। আমরা কবর জিয়ারতের মাধ্যমে নিজেদের আমল ও কাজের বিষয়ে চিন্তা করতে পারি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি।

  3. সুন্নত পালন: কবর জিয়ারত করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি সুন্নত, যা মেনে চলা আমাদের জন্য বরকতময় এবং পুরস্কারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে।

উপসংহার:

কবর জিয়ারত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং এটি আমাদের মৃত্যু ও পরকালীন জীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সঠিক নিয়ম মেনে কবর জিয়ারত করলে তা মৃতদের জন্য কল্যাণকর হয় এবং জিয়ারতকারীও নিজের ঈমান ও আমলের উন্নতির পথে পরিচালিত হয়।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

বরিশালের উজিরপুরে মাত্র ৭ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন আব্দুল্লাহ

উজিরপুর প্রতিনিধিঃ বরিশালের উজিরপুরে মারকাযুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদ্রাসায় মাত্র ৭ মাসে পবিত্র কুরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে হাফেজ হয়েছেন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এ উপলক্ষে সংবর্ধনা

আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুর রহমান রহঃ – এক স্মরণীয় আলেম ও শিক্ষাবিদ

আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুর রহমান রহঃ ছিলেন ফটিকছড়ির শীর্ষস্থানীয় আলেম ও ইসলামের একনিষ্ঠ খাদেম। তিনি শুধু একজন মুহতামিম ও শিক্ষকই ছিলেন না, বরং দ্বীনের সঠিক দিশা

অশ্রু যখন মুমিনের অস্ত্র—প্রভুর ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয়ের নিবেদন

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান এক ফোঁটা অশ্রু, যা একান্তে প্রভুর সামনে গড়িয়ে পড়ে, তা পৃথিবীর সমস্ত অমূল্য রত্নের চেয়েও বেশি মূল্যবান। এই অশ্রু কেবল

বাকৃবিতে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে গণ-ইফতার ও ৫০০ কোরআন বিতরণ

আরাফাত হোসাইন, বাকৃবি প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ইসলামী ছাত্রশিবির রমজান উপলক্ষে ধারাবাহিক গণ-ইফতারের আয়োজন করেছে। সাত দিনে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে ইফতার পরিবেশন করা

Scroll to Top