১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দবিরগঞ্জ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

মোঃ জাহিদুর হক, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার দবিরগঞ্জ ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, একজন স্বীকৃত চক্ষু বিশেষজ্ঞ না হয়েও নিয়মিত রোগী দেখছেন এক নারী, এবং প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা ভিজিট।

হাসপাতালের রিসিপশন থেকে জানা যায়, মেরিনা সুলতানা নামের এক ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখেন এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি কোনো স্বীকৃত চিকিৎসক নন। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, তিনি প্রেসক্রিপশন প্রদান এবং রোগ নিরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন।

এ বিষয়ে মেরিনা সুলতানার সাথে কথা বললে তিনি দাবি করেন, “আমি রোগী দেখার জন্য কোনো ভিজিট নেই না, সমস্ত অর্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে যায়।” কিন্তু তাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কেন চিকিৎসকের ভূমিকায় থেকে রোগীদের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন, তখন তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেননি এবং বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর চাপিয়ে দেন।

হাসপাতালের ম্যানেজার খায়রুল ইসলাম কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হাসপাতালের কাগজপত্র বড় বিষয় না, যার ক্ষমতা যত বেশি, তার প্রতিষ্ঠান তত ভালো চলে!”

অন্যদিকে, হাসপাতালের মালিক সুজন মাহমুদ নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দেন এবং তার ভিজিটিং কার্ডে “ডক্টর এমডি সুজন মাহমুদ” লেখা রয়েছে। অথচ তদন্তে জানা যায়, তিনি ডিএমএফ (ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন) ধারী একজন ব্যক্তি, কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নন।

হাসপাতালের লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে চাইলে মালিক সুজন মাহমুদ বলেন, “আমাদের সমস্ত কাগজপত্র সম্পূর্ণ আছে।” তবে পরবর্তীতে জানা যায়, হাসপাতালের লাইসেন্স থাকলেও তা ২০২৪ সালের জুন মাসেই মেয়াদ শেষ হয়েছে, যা এখনো নবায়ন করা হয়নি।

এছাড়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তারা কোনো সুনির্দিষ্ট দলিল দেখাতে পারেননি।

স্থানীয়দের দাবি, এ ধরনের অনিয়মের কারণে অনেক রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হতে পারেন, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা দ্রুত তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে, অবিলম্বে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তাহলে হাসপাতালটি বন্ধ করা ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এই অভিযোগের বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (THO) আব্দুল কাদের এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মেরিনা সুলতানা স্বীকৃত চক্ষু বিশেষজ্ঞ না হয়েও কিভাবে রোগী দেখছেন এবং প্রেসক্রিপশন করছেন, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।তিনি আরো বলেন একজন এমবিবিএস বা বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ তার নামের আগে ‘ডক্টর’ লিখতে পারেন না।”

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজবাড়ীর পাংশায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এখানে চিকিৎসক ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য পদের কর্মচারী সংকট।

কুমিল্লার মুন হসপিটালে ১৫ বছর যাবৎ ডায়ালাইসিস করছেন ভুয়া চিকিৎসক

মোঃ সাদেকুল ইসলাম কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা স্বাচিপ সভাপতি ডাঃ বাকি আনিছের মালিকানাধীন মুন হসপিটালের ডায়ালাইসিস বিভাগের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম। তিনি গত ১৫ বছর যাবত এ

সিরাজগঞ্জে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জাহিদুল হক, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিরাজগঞ্জে বিক্ষোভ করেছেন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।গতকাল রোবববার সকাল ১১টায় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ

দালাল ধরতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল অভিযান, আটক অর্ধশত

মাহমুদুর রহমান নাঈম, ঢাকা প্রতিনিধিঃ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালাল ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। এ পর্যন্ত দালাল সন্দেহে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক

Scroll to Top