১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স: একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সংকট

মোঃ সাজেল রানা

এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছিলেন স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। তিনি একবার বলেছিলেন, “এই এন্টিবায়োটিকের কারণে আজ কোটি কোটি লোক বেঁচে যাবে, কিন্তু অনেক বছর পর এগুলো আর কাজ করবেনা এবং তুচ্ছ কারণে কোটি কোটি লোক মারা যাবে আবার।”

এন্টিবায়োটিক খাওয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট ডোজে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। না খেলে, যে বিপদটি আসতে পারে তাকে বলা হয় “এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স”।

ধরি, আপনার শরীরে ১ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এগুলো মারার জন্য আপনার ১০টি এম্পিসিলিন খাওয়া দরকার। এম্পিসিলিন হল একটি এন্টিবায়োটিক। আপনি ৭টি খেলেন, ৭০,০০০ ব্যাকটেরিয়া মারা গেল এবং আপনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। তবে ৩০,০০০ ব্যাকটেরিয়া রয়ে গেল। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করে এবং তারা সিদ্ধান্ত নিল, তারা এম্পিসিলিন প্রতিরোধী “জ্যাকেট” পরবে। এর পর তারা এই জ্যাকেট তৈরি করে এবং নতুন ব্যাকটেরিয়াগুলোও একই ধরনের জ্যাকেট পরে। এর ফলে, পরবর্তীতে এম্পিসিলিন কাজ করবেই না।

সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হল, এসব জ্যাকেট পরা ব্যাকটেরিয়া কেবল ওই ব্যক্তির শরীরে সীমাবদ্ধ থাকে না। তারা যদি হাঁচি বা কাশি দেয়, তবে তারা অন্যান্য মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়বে। একসময় পুরো এলাকায় আর এম্পিসিলিন কাজ করবে না। যে সব মানুষ নিয়মিত ওষুধ খায় তারা অনেক সময় বিপদে পড়তে পারে।এখন আমরা এক ভয়ংকর সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ব্যাকটেরিয়া এবং তাদের “জ্যাকেট” এর তুলনায় এন্টিবায়োটিকের সংখ্যা অনেক কম। আজকাল অনেক এন্টিবায়োটিক কাজ করছে না, আর বাকিগুলোর ক্ষমতাও কমে আসছে। বড় বড় হাসপাতাল থাকবে, যেখানে এমডি, পিএইচডি করা চিকিৎসকরা থাকবেন, কিন্তু তাদেরও কিছু করার থাকবে না। এমনকি সামান্য সর্দী-কাশিতেও রোগী মারা যেতে পারে।

উন্নত দেশগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা আলাদা। তারা নিয়ম মেনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খায়। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশের পরিস্থিতি বেশ বিপদজনক। ‘মেডিসিনের বাইবেল’ নামে পরিচিত ডেভিডসের বইতেও আমাদের উপমহাদেশের বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। অনেক চিকিৎসার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,
“This organism is resistant against this drug in Indian subcontinent.”

আজকাল টিভি বা পত্রিকায় নানা বিষয়ে সচেতনতা দেওয়া হয়। যেমন, বাথরুমে হাত ধোয়া, কাশি হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া, নিরাপদ পানি খাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এন্টিবায়োটিক নিয়ে কিছুই বলা হয় না, যদিও এটি অন্য সমস্ত বিষয়ে থেকেও বেশি জরুরি। যদি এন্টিবায়োটিক কাজ না করে, তাহলে সব সচেতনতা অর্থহীন হয়ে যাবে।

*ফার্মেসিতে বিক্রি হওয়া বিপজ্জনক এন্টিবায়োটিক*অনেক সময় রোগীরা ফার্মেসীতে গিয়ে সামান্য জ্বরের কথা বললেই ফার্মেসির কর্মী তাদেরকে বিভিন্ন শক্তিশালী এন্টিবায়োটিক যেমন Ezithromycin, Cefixime, Cefuroxime, Levofloxacin ইত্যাদি দিয়ে দেন। কিন্তু, কখনোই তারা রোগীকে জানায় না কতদিন ধরে এটি খেতে হবে। একে একে এইভাবে সকল এন্টিবায়োটিকের রেজিস্টেন্স তৈরি হচ্ছে।

চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের এখনই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সকলকে এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, নাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ খুবই অন্ধকার।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

লক্ষ্মীপুর শহরে মানহীন ইট দিয়ে রাস্তা তৈরী

জামিল মুহাম্মাদ ইউসুফ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র উত্তর তেমুহনীর কালিবাজার রোড,হাইওয়ে রোড থেকে মেঘনা রোডের মাথা পর্যন্ত রাস্তাটির কাজ ধরা হয়েছে। শুরু থেকে বেশ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত চাটগাঁইয়াদের ইফতার আয়োজন: প্রশংসায় পঞ্চমুখ সাবেক বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব

জবি প্রতিনিধিঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত চাটগাঁইয়াদের ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের প্রশংসা করলেন সাবেক বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক লায়ন মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী। রোজ শনিবার (১৫

তাড়াশে মুদিখানা দোকান বৈদ্যুতিক আগুনে পুড়ে ছাই

সোহাগ হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর শহরের হাসপাতাল গেটে খোকন হোসেনের একটি মুদিখানা দোকান ও দোকানে থাকা সকল মালামাল সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়েছে। আজ

খোকসায় ৪২ বছরের নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, ৩৫ বছরের যুবক

মোঃ নুর আলম পাপ্পু, খোকসা কুষ্টিয়াঃ কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানাধীন শিমুলিয়া ইউনিয়নের সিংঘরিয়া গ্রামে ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল ১৪ মার্চ

Scroll to Top