ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধিঃ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলায় প্রতিবাদস্বরূপ জবির শিক্ষার্থীরা গাবতলী পরিবহনের ১১টি বাস ক্যাম্পাসে নিয়ে এসে আটকে রেখেছে। আজ বুধবার (১৯ মার্চ) সকাল ১১টায় এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ভোক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম কিরণ কুমার। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) তিনি সন্ধ্যায় কল্যাণপুর যাবার উদ্দেশ্যে গুলিস্তানের গাবতলী পরিবহনের ৮ নং বাসে উঠে। “ইফতারের সময় হয়ে যাবে, বাস তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেন” বলে পরিবহন যাত্রীরা বাসের ড্রাইভার ও হেল্পারকে বলতে থাকে। কিন্তু বাসের ড্রাইভার ও হেল্পার আরো লোক উঠাবে বলে বাস ছাড়ছিল না তখন। ফলে তাদের সাথে যাত্রীদের তর্কাতর্কি হয় এবং তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে যায়। কিরণ কুমার একা পেছনে বসেছিল। বাস যখন খালি হয়ে যায় তখন কিরণ বাস থেকে নেমে যেতে চাইলে বাসের হেল্পার ও ড্রাইভার তাকে আটকে রাখে, তাকে “সন্ত্রাসী” বলে আখ্যায়িত করে, তার গায়ে হাত তোলে এবং তার কাছ থেকে জোর করে দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে নেয়।
অতঃপর কিরণ কুমার “আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট” বলে চিৎকার দিতে থাকে। কিন্তু বাসের ড্রাইভার ও হেল্পার তাকে বলে, “তুই কিসের স্টুডেন্ট, তুই তো সন্ত্রাসী”। কিরণের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হলে তিনি কোনো রকমে বাস থেকে নেমে পড়তে সক্ষম হন এবং ওবারে করে কল্যাণপুরে চলে আসেন।
ঘটনাটি জবিতে জানাজানি হলে জবির শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফুসে ওঠে। আজ (বুধবার)সকাল ৯:৩০ এ প্রায় ৩০-৪০ জন জবির শিক্ষার্থীরা গাবতলী বাসের ৮ নং পরিবহনের ড্রাইভার ও হেল্পারকে ধরতে যায় যাত্রাবাড়িতে। কিন্তু তাদেরকে খুঁজে না পেয়ে গাবতলী পরিবহনের ১১টি বাস শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে এবং আটকে রাখে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ” আমরা এই অন্যায় মানি না। আমাদের এক সহপাঠীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে অন্যায়ভাবে। আমরা এই ১১টি বাস আটকে রেখেছি ক্যাম্পাসে। যতক্ষণ না বাসের অভিযুক্ত ঐ ড্রাইভার ও হেল্পারকে আমাদের সামনে আনা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই বাসগুলো ছাড়বো না।”
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কিরণ কুমার রবিদাস বলেন, আমি অন্যান্য যাত্রীদের মতোই শুধুমাত্র যথাসময়ে বাস ছাড়ার কথা বলেছি। কিন্তু আমকে আলাদাভাবে আটকে রেখে মারধর করে। আমি নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও আমাকে তারা মারলো আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন তারা যেনো সুষ্ঠু বিচার করে।
গাবতলী লিংক (প্রাঃ) লিমিটেডের এমডি রুবেল জানান, “আমরা গতকাল রাতেই এ বিষয়ে অবগত হয়েছি।এমন একটি অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাবে আমরা আসলে বুঝিনি।আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বসে যতদ্রুত সম্ভব এটির সুষ্ঠু সমাধান করবো।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন বিভাগের ১ম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ” আমরা বিভিন্ন সময় জুলুমের শিকার হই। এই তো কয়েক মাস আগে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনের এক শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে লোকাল বাসের এক স্টাফ কর্তৃক, কয়েক মাস আগে আমাদের ভার্সিটি বাসের উপর অন্য বাসের স্টাফরা হামলা করেছিল আর গতকাল কিরণের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনার উপযুক্ত ব্যবস্থা চাই। উপযুক্ত ব্যবস্থা না হবার ফলে প্রতিনিয়ত এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। আমরা চাই এর সুষ্ঠু সমাধান।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম রিফাত হাসান বলেন, “ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এখনো আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রশাসন থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”