১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

গাজার ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে গেছে উম্মাহর বিবেক যতদিন না জেগে উঠবে মুসলিম হৃদয়

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান:

শিশুদের কান্না যখন রক্তে ভেজা গাজার ধুলোয় মিলিয়ে যায়, তখন প্রশ্ন ওঠে—এই উম্মাহ কোথায়? জেরুজালেমের দেয়াল যখন আঘাতে কেঁপে ওঠে, তখন বিশ্বজুড়ে দেড়শো কোটির বেশি মুসলমানের নিঃশব্দতা আরও বেশি বেদনাদায়ক।

মুসলিম উম্মাহর বর্তমান বাস্তবতা বড়ই করুণ। আমরা সংখ্যায় অনেক, অথচ প্রভাবে নেই। সীমান্তে প্রাচীর, মননে বিভাজন, আর হৃদয়ে সন্দেহ—এই হলো আজকের মুসলমানদের অবস্থা। একতা আজ শুধু খুতবায় উচ্চারিত, বাস্তবতার ময়দানে তা দুর্লভ। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার লড়াই আর পশ্চিমা দাসত্বের রাজনীতিতে আমরা একে অপরকে ভুলে গেছি। উম্মাহ আজ যেন কাগুজে একটি শব্দমাত্র, যার পেছনে নেই বাস্তব শক্তি কিংবা দায়িত্বশীলতা।

ইসরায়েলের শক্তির মূল উৎস তাদের ঐক্য, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পশ্চিমা শক্তির নিরঙ্কুশ সমর্থন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পেছনে ছায়ার মতো থেকে এমন এক ছত্রছায়া দিচ্ছে, যা তাদের করে তুলেছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য। মিডিয়া, প্রযুক্তি, তথ্যযুদ্ধ, অর্থনীতি—সব কিছুতেই তাদের দখল। তারা জানে, কার বোতাম চেপে বিশ্বকে নাচানো যায়।

সাধারণ মানুষ হিসেবে হয়তো আমরা রণাঙ্গনে যাব না, কিন্তু আমাদের হাতেও আছে শক্তি—সচেতনতার, বয়কটের, প্রতিবাদের, দোয়ার। আমরা যদি সোচ্চার হই, যদি সত্য প্রচার করি, যদি আমাদের অর্থনৈতিক আচরণ পাল্টাই—তাহলে সেগুলোও হয়ে উঠতে পারে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অদৃশ্য অস্ত্র। আমরা যেন ভুলে না যাই সাহসিকতা কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, বিবেক জাগানোতেও প্রয়োজন।

মুসলিম বিশ্বের কি কেউই নেই, যে সামরিকভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে? হয়তো সামর্থ্য আছে কারো কারো, কিন্তু সাহসের অভাব, কূটনৈতিক শৃঙ্খল, আর ভোগবিলাসে অভ্যস্ত নেতারা সেই শক্তিকে কাজে লাগাতে পারছেন না। ফিলিস্তিনের জন্য কেউ দাঁড়ায় না, কারণ সবাই ব্যস্ত নিজেদের রক্ষা করতে। ব্যতিক্রম কিছু কণ্ঠ হয়তো শোনা যায়, কিন্তু তারা একা, আর সংখ্যায় হারিয়ে যায় সাগরের ফেনার মতো।

এমনকি আমেরিকাও সরাসরি না এসে ইসরায়েলকে ব্যবহার করছে—কারণ ইসরায়েলই তাদের চোখে মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটি, তাদের চাহিদামতো নীতির সৈনিক। তারা জানে, ইসরায়েলকে সামনে রেখে কাজ করলেই মুসলিমদের প্রতিবাদ সামলানো সহজ হয়। গোপন হাত ধরে, দৃশ্যমান আঘাত দেয় তারা।

এই বাস্তবতা আমাদের জাগাতে বাধ্য করে। আমরা কি আর চুপ থাকবো? আর কতদিন “উম্মাহ” শব্দটি শুনে শুধুই নস্টালজিয়ায় ভুগবো? সময় এসেছে—বিবেক জাগানোর, একত্র হবার, সত্যের পক্ষে দাঁড়াবার।

গাজার ধ্বংসস্তূপে একটি কণ্ঠস্বর ভেসে আসে “হে মুসলিম, তুমি কোথায়?”
আমাদের উত্তর হোক—“আমরা এসেছি, আমরা জেগেছি।”

 

লেখক,শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

কালেমা যখন আদালতের কাঠগড়ায়, তখন চুপ থাকা মানে—ঈমানের গলাকাটা দেখে হাততালি দেওয়া

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো, মিশর পতাকা ওড়ানো কি সত্যিই অপরাধ? না কি পতাকায় লেখা সত্য—”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”—এই ঘোষণা রাষ্ট্রের গায়ে আগুন

ঘাতক বদলায়, নির্দেশক একটাই

লেখক,শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর গাজার ভোর এখন আর সূর্যোদয়ের প্রতীক নয়, বরং এক আগুনঝরা আর্তনাদ। প্রতিটি নতুন দিন শুরু হয় মৃত্যুর গণনায়, প্রতিটি রাত শেষ হয়

ভালোবাসা কি এখন Social Status-এর ছদ্মনাম?

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান: এক সময় প্রেম ছিল নিঃশব্দ। কোনো ক্যামেরা তাক করত না সেই মুহূর্তে, কেউ ‘লাইক’ বা ‘কমেন্ট’ করত না। তবুও একটা চিঠি

মুসলমানদের অধঃপতন এবং ফিলিস্তিন থেকে শিক্ষা

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ সৃষ্টি করেছেন অতি আদর ও ভালোবাসা দিয়ে! আদর মহব্বত যত্নসহকারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন,

Scroll to Top