ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধিঃ
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বরোচিত গণহত্যা বন্ধ করতে ও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিশ্ব মানবতার বিবেক জাগ্রত করতে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-সমিতি, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
বৃহঃস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর থেকে একটি গণমিছিল বের হয়। এরপরে মিছিলটি কোর্ট প্রাঙ্গণস্থ সড়ক হয়ে তাঁতিবাজার মোড় পর্যন্ত অগ্রসর হয়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মিছিলটি থামিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, বৃহঃস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।
এই কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে যাবার সুবিধার্থে রাস্তা খালি করে দিতে পুলিশ মিছিলকারীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। পরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা স্লোগানে বলেন-‘তুমি কে আমি কে, প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন’, ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ কর’, ‘ওহুদের হাতিয়ার, গর্জে উঠো আরেকবার’,‘জাতিসংঘ জবাব চাই, ওআইসি জবাব চাই’,‘ইসরায়েল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক।’
ক্যাম্পাসে ফিরে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন।
সমাবেশ শেষে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইনের নেতৃত্বে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দূতাবাস এবং বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক নূর নবী বলেন, “ ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব যেন আজ নীরব। অনেক মুসলিম নেতা যেন মোসাদের এজেন্টের মতো কাজ করছেন। আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই—তোমাদের আমরা বয়কট করলাম। পশ্চিমা নেতারা মুখে মানবতার কথা বলেন, অথচ তারাই ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করছে। এই গণহত্যার দায় তাদেরকেই নিতে হবে।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানাই—রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসরাইলি পণ্য বয়কট করুন। না হলে জনগণ নিজেরাই তা বয়কট করবে। একইসাথে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে ইসরাইলি পণ্যের বিকল্প পণ্য উৎপাদন করতে হবে।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জবি শাখার সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “আমরা মুসলিম জাতি, খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরি। কিন্তু আমরা আজ তা ভুলে গেছি। আজ আমরা শুধু ফতোয়াবাজিতে ব্যস্ত, আজ আমরা বিভক্তিতে ব্যস্ত। আমাদের বিভক্তির সুযোগে ইহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলিম ভাই-বোনদের নির্বিচারে হত্যা করছে। আমি মুসলিম যুবকদের জাগরণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা হিমেল বলেন, “ইসরাইলের আগ্রাসন অনেক বছর ধরে ধরে চলছে। স্বাধীনতার নামে তারা ফিলিস্তিনে প্রকাশ্যে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। তথাকথিত শান্তিকামী জাতিসংঘ, ওআইসি এবং পশ্চিমা বিশ্ব চুপ করে আছে বলেই এই আগ্রাসন আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।”
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, “ইসরাইলি গণহত্যার মদদদাতা এই যুক্তরাষ্ট্র। এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আমরা মার্কিন দূতাবাসে স্মারকলিপি দিবো। একইসাথে, সৌদি আরবের নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে তাদের দূতাবাস এবং বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।”
সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তিনদফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন:
১. পূর্বে ঘোষিত ইসরাইলি পণ্য আমৃত্যু পুনরায় বর্জনের আহ্বান,
২. ফিলিস্তিনিদের জন্য নামাজ পড়ে দোয়া অব্যাহত রাখা,
৩.স্মারকলিপি জমাদান পরবর্তী ফলোআপ প্রত্যক্ষ না করা গেলে জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিস ঘেরাও করা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। শেষে গাজায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন ও জবির সাংবাদিক সংগঠনের সদস্যরাসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এ কর্মসূচির মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।