১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ভালোবাসা কি এখন Social Status-এর ছদ্মনাম?

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান:

এক সময় প্রেম ছিল নিঃশব্দ। কোনো ক্যামেরা তাক করত না সেই মুহূর্তে, কেউ ‘লাইক’ বা ‘কমেন্ট’ করত না। তবুও একটা চিঠি পেয়ে কারও গাল লাল হয়ে যেত। রিকশার হ্যান্ডেলে হাত রাখার মানে ছিল প্রতিশ্রুতি, আর একসাথে চায়ের কাপ ধরা মানে ছিল অনন্ত অপেক্ষার গল্প। ভালোবাসা তখন মাটি ছোঁয়া, মৃদু ও গভীর।

কিন্তু এখন? এখন প্রেম একটা প্রদর্শনী, সম্পর্ক যেন রঙিন পোস্টার—যেখানে ছবির ভেতরের মানুষগুলো যতটা না একে অপরের, তারচেয়ে বেশি যেন জনতার! এখন প্রেমিক কী গিফট দিল, প্রেমিকা কোথায় নিয়ে গেল—এসব না জানালে সম্পর্কটাই যেন অদৃশ্য থেকে যায়।

ইনস্টাগ্রামে একসাথে তোলা ছবির নিচে লেখা থাকে “Forever and always”, কিন্তু ক্যাপশনের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায় লোকেশন ট্যাগ: “Radisson Blu, Cox’s Bazar”। যেন ভালোবাসার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় কে কোথায় গেছে, কত খরচ করেছে, কার প্রেমিক/প্রেমিকা কতটা ‘পাবলিশড’।

একটা সময় ভালোবাসার মানে ছিল “তুমি পাশে থাকলেই হবে”, এখন তা রূপ নিয়েছে “তুমি যদি পাশে থাকো, তবে তোমার ব্যাংক ব্যালেন্স কেমন?”
আজকের প্রেম যেন একধরনের প্যাকেজ ডিল—ফোনের মডেল থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের ইনকাম প্ল্যান, সবই সম্পর্কের মানদণ্ড।

ঢাকার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শহরের ১৮-৩০ বছর বয়সী তরুণদের ৭৩% মনে করে প্রেমের ক্ষেত্রে ‘সোশ্যাল স্ট্যাটাস’ একটি বড় ফ্যাক্টর। এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেছিল—“সে মানুষ হিসেবে ভালো, কিন্তু তার প্রোফাইল মেলে না আমার ভবিষ্যতের সঙ্গে।”
এই ‘প্রোফাইল’ শব্দটিই বুঝিয়ে দেয়—ভালোবাসা এখন আর কবিতার মতো বইয়ের পাতায় থাকে না, বরং রিজিউমির মতো ঝকঝকে করে বানাতে হয়।

একজন কবি একদিন লিখেছিলেন—
“ভালোবাসা মানে পাশে থাকা,
না থাকলেও ভাবনায় থাকা।”

কিন্তু এখন অনেকের ভাবনায় জায়গা পেতে হলে প্রয়োজন আর্থিক ইনভেস্টমেন্ট, সোশ্যাল প্রমাণ এবং রিলস-সাপোর্টেড সম্পর্ক।

প্রেম কি তবে হারিয়ে গেছে? না, হারায়নি। তবে প্রেম আজকাল পোশাক পরে—চাইলে গুচি, না চাইলে জারা।
ভালোবাসা এখন হৃদয়ের বন্ধন না হয়ে, হয়ে গেছে সমাজে নিজেকে তুলে ধরার মাধ্যম—একটি স্ট্যাটাস সিম্বল।

তবুও কোথাও কোথাও এখনো কিছু সম্পর্ক নিঃশব্দে হেঁটে চলে—চোখে চোখ রাখা হয়, তবুও ছবি পোস্ট হয় না। তারা এখনো প্রেম করে, সমাজকে দেখাতে নয়—নিজেদের ভেতরটাকে জাগিয়ে রাখতে।

তবে প্রশ্নটা থেকে যায়—

ভালোবাসা কি আজও হৃদয় ছুঁয়ে যায়, নাকি শুধুই প্রোফাইল আপডেট করে?

লেখক শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

কালেমা যখন আদালতের কাঠগড়ায়, তখন চুপ থাকা মানে—ঈমানের গলাকাটা দেখে হাততালি দেওয়া

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো, মিশর পতাকা ওড়ানো কি সত্যিই অপরাধ? না কি পতাকায় লেখা সত্য—”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”—এই ঘোষণা রাষ্ট্রের গায়ে আগুন

ঘাতক বদলায়, নির্দেশক একটাই

লেখক,শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর গাজার ভোর এখন আর সূর্যোদয়ের প্রতীক নয়, বরং এক আগুনঝরা আর্তনাদ। প্রতিটি নতুন দিন শুরু হয় মৃত্যুর গণনায়, প্রতিটি রাত শেষ হয়

মুসলমানদের অধঃপতন এবং ফিলিস্তিন থেকে শিক্ষা

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ সৃষ্টি করেছেন অতি আদর ও ভালোবাসা দিয়ে! আদর মহব্বত যত্নসহকারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন,

গাজার ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে গেছে উম্মাহর বিবেক যতদিন না জেগে উঠবে মুসলিম হৃদয়

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান: শিশুদের কান্না যখন রক্তে ভেজা গাজার ধুলোয় মিলিয়ে যায়, তখন প্রশ্ন ওঠে—এই উম্মাহ কোথায়? জেরুজালেমের দেয়াল যখন আঘাতে কেঁপে ওঠে, তখন

Scroll to Top