১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নজরুল ক্যাম্পাসে আনন্দ শোভাযাত্রায় আনন্দের হিড়িক

মোছাঃ মাহমুদা আক্তার নাঈমা, জাককানইবি প্রতিনিধি:

নতুন বছর,নতুন মাস,বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসবের মাধ্যমে নতুনত্বের আহ্বানে ক্যাম্পাস জুড়ে দেখা মিলেছে নতুন-পুরাতন সকল মুখের।এমতাবস্থায় যেন আনন্দের ভিড় লেগেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সোমবার ১ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দের (১৪ এপ্রিল ২০২৫) এক নতুন সকালে ‘নববর্ষের ঐকতান ফ্যাসিবাদের অবসান’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নানা বয়সের দর্শনার্থীরা শোভাযাত্রায় স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।

আনন্দ শোভাযাত্রাটি যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে,যা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশ-পাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ইতি টানে। বাঙালির চিরাচরিত রূপে নিজেদের সাজিয়ে সকলে এই শোভাযাত্রায় বাদ্যের তালে তালে এগিয়ে চলে, হাতে হাতে ছিল বাহারি মুখোশ। চরকি, টেপা পুতুল আর পাখির শিল্পকাঠামো যা শোভাযাত্রাকে দেয় বাঙালির চিরায়ত আবহ। এরপর গাহি সাম্যের গান মঞ্চে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।

সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে বক্তব্য শুরু করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।এসময় তিনি সকলের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। উপাচার্য বলেন, “প্রত্যেক জাতির সাংস্কৃতিক জীবনে নানা ধরণের উৎসব পালিত হয়ে থাকে, আমরাও নানা উৎসব পালন করে থাকি। বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রাণের উৎসব। সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সার্বজনিন উৎসব। আমাদের প্রাণের মিলন মেলা বৈশাখী উৎসব। বৈশাখী মেলা ও উৎসব বাঙালির নিজস্ব সম্পদ।”

নববর্ষের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রচলিত হওয়ারপর নববর্ষ পালন শুরু হয়েছে। ৯৬৩ হিজরী ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাদশা আকবর সিংহাসনে বসার হিজরী বছরকে গণনায় নিয়ে যে ফসলি হিজরী প্রবর্তন করা হয়, তাই কালক্রমে বাংলার সনে রূপান্তরিত হয়। পহেলা বৈশাখ পুরাতন আবর্জনা দূর করে নতুন জীবনকে আহ্বান করে। নববর্ষ উৎসবে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নতুন করে বন্ধন দৃঢ় হয়। ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে আমরা বৃহত্তর জীবন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই। একইসঙ্গে জাতি হিসেবে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে। যে ইতিহাস অনেকটা আমরা নাগরিক জীবনে হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিলাম। নববর্ষের মাধ্যমে আমাদের প্রাণে নতুন করে তা সঞ্চার হয়। আমরা মনে করি সাংস্কৃতিক জাতি বা জাতি রাষ্ট্র গঠনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে শক্তি যোগায়। শুভ ইচ্ছা, শুভ সংকল্প সকল বাধা কাটিয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণায় নতুনভাবে উদ্দিপিত করে। নববর্ষের চেতনায় আনন্দলোকে সমবেত হয়ে সকলের আনন্দে আনন্দিত হওয়া। পহেলা বৈশাখ তাই আমাদের জাতীয় জীবনে ও সংস্কৃতিতে এক নির্মল আনন্দঘন শুভ দিন। সকল মানুষের শুভ কামনার মধ্য দিয়ে মানব স্বীকৃতি তার মূল কথা।”পরিশেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় উপাচার্য বলেন, “এলো এলো রে বৈশাখী ঝড় এলো এলো রে, বৈশাখী ঝড় এলো এলো মহীয়ান সুন্দর।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফের ড. এ. এইচ. এম কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, আইন অনুষদের ডিন মুহাম্মদ ইরফান আজিজ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স), চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পহেলা বৈশাখ ১৪৩২ উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব নগরবাসী বর্মন। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এখানেই শেষ নয়,আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চের পাশে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। মেলায় মোট ২৬টি স্টল বসেছে যা সম্ভব হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের মাধ্যমে । দুপুরে গাহি সাম্যের গান মঞ্চে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠে বিশ্ববদ্যালয় পরিবার। একই মঞ্চে সন্ধ্যারপর শুরু হয় বৈশাখের গান, লোকগান ও লোকনৃত্য। সবশেষে রাতে কিচ্ছাপালার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানমালা।

উল্লেখ্য,এর আগে চৈত্রসংক্রান্তি ১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষ্যে (১৩ এপ্রিল ২০২৫) রবিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম কর্তৃক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঘুড়ি এবং সন্ধ্যারপর ফানুস উড়ানো হয়।
যা নববর্ষের পূর্বদিন হলেও আনন্দঘন পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিল।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

জবিতে সাইকেল চোর আটক; ৮ শিক্ষার্থীকে ক্ষতিপূরণ

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকেল চুরির অভিযোগে এক যুবককে আটক করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে দায় স্বীকার করে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান

এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখা, ব্যাঙের মতো অঙ্গভঙ্গি সহ সিকৃবিতে গভীর রাতে র‍্যাগিং এর অভিযোগ

আদিব হাসান প্রান্ত, সিকৃবি প্রতিনিধি: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গভীর রাতে ম্যানার শেখানোর নামে নতুন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে এগ্রিকালচার ১৬ তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

জবি প্রশাসনের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ হয়নি: মন্তব্য জবি শিক্ষার্থীর

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি সর্বদলীয় ছাত্রদলীয় মতবিনিময় সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সকল পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের এখনও হানিমুন পিরিয়ড চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জবির ইসলামের ইতিহাস ও

জবিতে ‘সংগীত ও নাট্যকলা’ বিভাগের ফি জমা দেয়ার তারিখ ঘোষণা

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগের ‌‌‘ফি’ জমা দেয়ার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে একটি বিজ্ঞপ্তি

Scroll to Top