ওবাইদুল্লাহ আল মাহবুব, ইবি প্রতিনিধি:
‘এবারের বৈশাখের স্বপ্ন ও শপথ আগামীর বৈষম্যের বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যে দিনভর আনন্দঘন উৎসবে মেতেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ ও বাঙালির ঐতিহ্য ও জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি। কয়েকদিন ধরে চলে আসা প্রস্তুতি শেষ হয় বুধবার (১৬ এপ্রিল) তেসরা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা ও বাংলার ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবির মধ্য দিয়ে। নতুন সূর্যের আলোয় জেগে ওঠা ইবি ক্যাম্পাস এদিন পরিণত হয় বাঙালির প্রাণের মেলায়।
এত কিছুর আয়োজনের ভিড়ে ভিন্ন রুপে দেখা দিয়েছে পতিত স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। চট করে ঢুকে যায়নি। তবে ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ও রাক্ষস রূপে প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা হয় হাসিনাকে। বিভিন্ন বাণী ও কবিতায় বার্তা দেয়া হয় প্রজন্মের আস্তাকুঁড়ের পাত্র হিসেবে।
প্যারাডক্সিক্যালি শিক্ষার্থীদের কাছে উৎসবের প্রতিধ্বনি ছিল “আপা ছাড়া, নববর্ষ”। জায়গায় পেয়েছে জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রতীক আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, এবারের উৎসবটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে৷ একদম ইউনিক টাইপের। যতটুকু কল্পনা করেনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছে প্রশাসন। তবে একটু দেরিতে করায় আসল স্বাদ কিছুটা কমতি দেখা দিয়েছে।
প্রদর্শনীতে ‘তুই হাসিনা’ নামে একটা কবিতায় দেখা যায়- “তুই হাসিনা মানুষখেকো রাক্ষসী তুই হারামখোর। তোকে হটিয়ে ছাত্রজনতা আনলো দেশে নতুন ভোর// খবিশ তুই খান্নাস তুই, তুই ইবলিশ শয়তান। তোর বিদায়ে বাংলায় হলো ফ্যাসিবাদের অবসান// জালেম তুই ঠক তুই তুই আস্ত প্রতারক। তোর ইশারায় হইছে যত গুম খুন আর জঙ্গি নাটক…।”
এদিকে ‘খুনীকে না বলুন’ নামে আরেক প্রদর্শনীতে হাসান রোবায়েত এর ঘৃণিত বাণী দেখা যায়- “গুম হইছে কত মানুষ শহীদ কত মায়ের পুত, রক্ত দিয়া অজু কইরা পড়ত খুনি তাহাজ্জুত!” এছাড়াও ‘এই বাংলায় খুনি হাসিনার ঠাঁই নাই’ ‘নববর্ষের আহ্বান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ ইত্যাদি লেখা প্রদর্শন করা হয় আনন্দ র্যালিতে। ঘৃণার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে ব্যস্ত বর্তমান প্রজন্ম।
ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ দেশকে নতুন করে সাজাতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, “গত বছরের সকল গ্লানি-বৈষম্য-অন্ধকার-অনাচার মুছে যাক। নতুন পরিকল্পনা ও শপথে আগামী দিনে আমরা এগিয়ে যাব। আগামী বাংলাদেশকে আমরা বৈষম্যমুক্ত দেখতে চাই। বৈশাখ নতুন আলোর বার্তা নিয়ে এসেছে। আমাদের সবার আগামী দিনের জীবন আনন্দ-আলো-উচ্ছ্বাসে ভরে উঠুক। আমরা আগামী দিনে যে বাংলাদেশ গড়ব সেই বাংলাদেশ হবে আজকের এই বৈশাখের প্রত্যয়ে ও শপথে নতুন বাংলাদেশ।” ঐক্যের ও মৈত্রীর, গ্লানির ও দুর্নীতিমুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার শপথ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও ব্যক্ত করেন যে, “এই চমৎকার আয়োজনে আমি ব্যক্তিগতভাবে অভিভূত। আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল অংশীজনের সর্বজনীন ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উচ্ছ্বসিত শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি পরিবর্তিত বাংলাদেশের ফলাফল। আর এই পরিবর্তিত বাংলাদেশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহ সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের কাছে ঋণী। আজকের অনুষ্ঠানের সকল কৃতিত্ব ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ও প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের।”