ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যুতে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তবে পররাষ্ট্রনীতির কোনো পরিবর্তন হবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তারা বলছেন, দেশটির চূড়ান্ত কর্তৃত্ব সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির (৮৫) অধীন। তাই রাইসি’র মৃত্যুতে দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে হয়তো। কিন্তু বৈদেশিকভাবে নীতিগত কোনো পরিবর্তন হবে না।
বিশ্লেষকরা আরো মনে করছেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের আকস্মিক মৃত্যুতে সেখানে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হবে। যার সুবিধা নিতে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা কৌশল শুরু করবেন। রাইসি’র মৃত্যুকে ইরানের ক্ষমতাশালী কর্মকর্তারা একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখবেন। তারা নিজেদের ক্ষমতার কাঠামোকে আরো পোক্ত করতে এত দিন এমনই একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। রাইসি’র আকস্মিক মৃত্যু তাই খামেনির জন্য বড় ধরনের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
উল্লেখ্য, ইরানের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে রোববার হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে রইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ আরো সাতজন নিহত হন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের আলী ভায়েজ বলেছেন, ‘এমন একজন উত্তরসূরি আবির্ভূত হতে পারেন যিনি রাইসি’র মতোই রক্ষণশীল এবং রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতি অনুগত।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি আরো বলেছেন, পররাষ্ট্র নীতিতে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং ইসলামিক রিভ্যুউলিশনারি গার্ড তাদের কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখবে।
জিন জাওরেস ফাউন্ডেশনের ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফরিদ ভাহিদ বলেছেন, সর্বোচ্চ নেতার খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ায় রইসি’র জন্যে সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ ছিল। ইরানী রক্ষণশীলরা এখনো এমন কাউকে খুঁজে নেবেন যিনি বেশি সমস্যার কারণ হবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরানের (ইউএএনআই) নীতি পরিচালক জ্যাসন ব্রোডস্কি বলেন, ‘ইরানের প্রেসিডেন্ট মূলত আজ্ঞা বাস্তবায়নকারী, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নন। তাই ইরানের নীতি ও সেই নীতিগুলোর মৌলিক বিষয় একই থাকবে।’
ইসরাইলের রাইচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অরি গোল্ডবার্গ বলেন, রইসি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার হয়ে কাজ করতেন। তিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছিলেন।
গোল্ডবার্গের মতে, এখন খামেনিকে দেখাতে হবে, তিনি এই পরিবর্তনের সময় দেশকে কিভাবে সামলান।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জিউইশ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অব আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল মাকোভস্কি বলেন, ইরান এখন নিজের বিষয় সামলাতে বেশি ব্যস্ত থাকবে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বেশি যুক্ত হয়ে পড়বে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও জটিল হবে।
উল্লেখ্য, ইরানের সংবিধান অনুযায়ী খামেনির আস্থাভাজন হিসেবে অন্তর্বন্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার। সর্বোচ্চ ৫০ দিনের মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। এখন সর্বোচ্চ নেতার অনুমতি নিয়ে ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান, পার্লামেন্টের স্পিকার ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে সাথে নিয়ে গার্ডিয়ান কাউন্সিল নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করবে।
তবে নির্বাচনে যিনিই আসুন তাতে ইরানের নীতির তেমন কোনো পরিবর্তন না হওয়ার কথাই সবাই তুলে ধরেছেন।
এ প্রেক্ষিতে ভাহিদ আরো বলেছেন, ইসরাইল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা তার পারমাণবিক কর্মসূচির প্রতি ইরানের বৈদেশিক নীতিতে আমূল পরিবর্তন হবে যদি ‘শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন’ হয়।
তিনি বলেন, ‘রইসি’র মৃত্যু কিছু সূক্ষ্মতা, কিছু পার্থক্য আনতে পারে, তবে ‘যতদিন নেতা জীবিত থাকবেন এবং গার্ডরা সেখানে থাকবেন’ তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আশা করা উচিত নয়।
সূত্র : এএফপি